অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দাপুটে জয়ে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ
ব্যাটাররা শুরুটা ভালো করেন। বিশেষ করে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। মাঝে ছন্দপতন হলেও অভিষিক্ত জাকের আলীর ঝড়ে দলীয় আড়াইশ পার করে বাংলাদেশ। এরপর বোলিংয়ে মোটামুটি সবার প্রচেষ্টায় খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি আফগানিস্তান। এমন গল্পের ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে ৬৮ রানের বড় জয় পেয়েছে টাইগাররা। এরই সঙ্গে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে ১-১ ব্যবধানে সমতায়ও ফিরল লাল-সবুজের দল।
আজ শনিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় প্রথমে ব্যাট করা বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫২ রান করে। জবাবে ৪৩.৩ ওভারে ১৮৩ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান।
২৫৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শরিফুল ও তাসকিন আহমেদের বল দেখেশুনেই খেলা শুরু করেন দুই আফগান ওপেনার রাহমানুল্লাহ গুরবাজ ও সেদিকুল্লাহ আতাল। তবে ওপেনিং জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। চতুর্থ ওভারে দলীয় ১৮ রানের মাথায় গুরবাজকে ফেরান তাসকিন আহমেদ। এশিয়ান ইমার্জিং কাপে দারুণ খেলে জায়গা পাওয়া আতাল এরপরও ভালোই খেলছিলেন। রহমত শাহকে নিয়ে গড়েন ৫২ রানের জুটি। দলীয় ৭০ রানে নাসুম আহমেদের বলে মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে ফেরেন তিনি। তার আগে ৫১ বলে ৩৯ রান করেন তিনি। এরপর রহমতের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদি। ৪৮ রান যোগ করেন এই দুজন। দলীয় ১১৮ রানে ফেরেন হাশমতউল্লাহ শাহিদি। পরের ওভারেই নাসুম আহমেদের বলে গোল্ডেন ডাক মারেন ওমারজাই। তাতে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। একই ওভারে গুলবাদিন নাইবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে উইকেট যায় হাফ সেঞ্চুরিয়ান রহমত শাহর। তাতে বিপদে পড়ে আফগানরা। ৭৬ বলে ৫২ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
এরপর নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট হারায় আফগানরা। যেখানে ৩৬তম ওভারের চতুর্থ বলে শরিফুলের ডেলিভারিতে লেগ স্টাম্পে ইয়র্কার পাওয়ার ভাবনা নিয়ে থাকা গুলবদিন নাইব ড্রাইভ শট খেলেন। কিন্তু বল সোজা চলে যায় হৃদয়ের হাতে। ২৫ বলে ২৬ রান করেন তিনি। পরের ওভারেই দুর্দান্ত এক অফ স্পিন বলে মোহাম্মদ নবীকে (১৭) বোল্ড করে মেহেদী হাসান মিরাজ। ৬ বলের মধ্যে ২ উইকেট হারিয়ে আবার চাপে পড়ে গেল আফগানরা। পরে খারোতেকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের নিকটে নিয়ে যান মিরাজ। সামনে বেরিয়ে খেলতে স্টাপিংয়ের শিকার হয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। শেষ দিকে রশিদ খানকে (১৪) মোস্তাফিজ ও গাজানফারকে নাসুম বোল্ড করলে দুইশর আগেই আফগানদের ইনিংসের সমাপ্তি হয়।
বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল স্পিনার নাসুম ৮.৩ ওভারে ২৮ রানে ৩টি উইকেট পান। এছাড়া মিরাজ ও মোস্তাফিজ দুটি করে উইকেট দখল করেন।
এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তর ধীরগতির ফিফটি ও শেষদিকে অভিষিক্ত জাকের আলীর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে আড়াইশ পার করে বাংলাদেশ। আগের দিনে পরে ব্যাট করে হারতে হয়েছে, তাই আজ টসে জিতে ব্যাটিং নিতে দুইবার ভাবেননি শান্ত। শুরু থেকেই ইতিবাচক ব্যাটিং করতে থাকেন তানজিদ হাসান তামিম। আরেক পাশে স্থির ছিলেন সৌম্য। একের পর এক বাউন্ডারি আদায় করে বাংলাদেশের ইনিংসের রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। তবে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি এই ইনিংস। আল্লাহ গাজানাফারের করা চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট হন জুনিয়র তামিম। দলীয় ২৮ রানে বিদায় নেওয়ার আগে ১৭ বলে ৩টি চার ও ১ ছক্কার সাহায্যে ২১ রান করেন তিনি।
প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও দ্বিতীয় উইকেটে দারুণ জুটি গড়েন শান্ত ও সৌম্য। ৭১ রান যোগ করেন তারা। যদিও শুরুর দিতে দ্রুতগতিতে রান তুললেও শেষে রান তোলার গতি কমে যায় তাদের। শতক পার হওয়ার ঠিক আগে রশিদ খানের বলে এলবিডব্লিউ হন সৌম্য। ৪৯ বলে সমান দুইটি চার ও ছক্কায় ৩৫ রান করেন তিনি। ১৯ ওভারে ১০০ রান করে বাংলাদেশ। এরপর শান্তর সঙ্গে জুটি বাঁধেন মিরাজ। দুজনে দারুণ ব্যাট করতে থাকলেও দলীয় ১৫২ রানে ভাঙে জুটি। ৩৩ বলে ২২ রান করে রশিদ খানের বলে বোল্ড হন মিরাজ।
শান্তর সঙ্গে এরপর তাওহিদ হৃদয় জুটি বাঁধলেও সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ১৭৪ রানে হৃদয়ের পতনের পর দেখা যায় মিনি ধস। ১৮৪ রানের মধ্যে ফেরেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও। ৭৫ বলে ফিফটি করা শান্ত থামেন ৭৬ রান করে। এজন্য অবশ্য তাকে খেলতে হয় ১১৯ বল। যেখানে ৬টি চারের সঙ্গে ছিল ১টি ছক্কার মার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার নবম ফিফটি।
১৮৪ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারালেও বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহের দিকে নিয়ে যায় সপ্তম উইকেটে নাসুম আহমেদ ও জাকের আলীর জুটি। শুরুটা ধীরে করলেও আস্তে আস্তে আফগান বোলারদের ওপর চড়াও হন এই দুজন। ৪১ বলে তারা যোগ করেন ৪৬ রান। দলীয় ২৩০ রানে ফেরেন নাসুম। তার আগে ২৪ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় করে যান ২৫ রান। শেষের দিকে তাসকিনকে নিয়ে দলের সঙ্গে আরও ২২ রান যোগ করেন জাকের। তাতে ২৫২ রানে থামে টাইগাররা। ২৭ বলে ১টি চার ও ৩ ছক্কায় ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন জাকের।
আফগানিস্তানের অন্যান্য বোলাররা যেখানে রান দেওয়ায় আজকে কৃপণতা দেখিয়েছেন, সেখানে বেশ উদার ছিলেন পেসার ফজলহক ফারকি। ৭ ওভার বোলিং করে কোনো উইকেট না পেলেও দিয়েছেন ৬৯ রান। ৮ ওভারে মাত্র ২৮ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল বোলার নানগেয়ালিয়া খারোটে। ১০ ওভার বল করে ২ উইকেট পাওয়া রশিদ খরচ করেছেন ৩২ রান আর গাজানাফার ৩৫ রান।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com