ওবায়দুল কাদেরের দায়িত্ব নিচ্ছেন না কেউ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে শেখ হাসিনার পর দলে ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী’ ছিলেন আওয়ামী লীগের তিনবারের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মামলা-হামলার ভয় ও নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে সেই প্রভাবশালী ব্যক্তিটি তিন মাসের ব্যবধানে এখন শয্যাশায়ী। সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা দেশের বাইরে চলে গেলেও ওবায়দুল কাদেরকে সীমান্ত পার করার দায়িত্ব নেননি কেউ। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় কারও বাড়িতে গোপনে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে ঠিক কোথায় আছেন- সে খবর জানাতে পারেনি কেউ।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কঠিন এই সময়ে দলের নেতাকর্মী এমনকি পরিবার-স্বজনরাও তার পাশে নেই। দীর্ঘদিন যারা ওবায়দুল কাদেরকে ‘প্রটোকল’ দিয়ে ও তোষামোদ করে সুবিধা নিয়েছেন, তারাও ওবায়দুল কাদেরের দুঃসময়ে কাছে নেই। শুধু তা-ই নয়, দলটির দ্বিতীয় শীর্ষ নেতার এমন অসহায়ত্বের খোঁজ নিতেও কোনো নেতা কল দিয়ে বা অন্য কোনো মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা পর্যন্ত করেননি। অন্যদিকে ওবায়দুল কাদের নিজেও দলের কোনো নেতা বা কর্মীকে কল দিয়ে খোঁজ নিয়েছেন- এমনটা কেউ বলতে পারেননি।
গত তিন মাসে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, দলের কোনো সিদ্ধান্তে ওবায়দুল কাদেরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার একাধিক ফোনকল ফাঁস হয়েছে। তার স্বাক্ষরিত বক্তব্য বা বিবৃতি দলের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া হয়েছে। দলের তিন নেতা- জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুব-উল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিম বিভিন্ন দিবসে ও নানা ইস্যুতে বক্তব্য দিচ্ছেন। সম্প্রতি হাছান মাহমুদের একটি সাক্ষাৎকার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে; কিন্তু তিন মাসে সাড়া-শব্দহীন ওবায়দুল কাদের।
দলটির কয়েক দায়িত্বশীল নেতা আমাদের সময়কে বলেন, আওয়ামী লীগকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে ওবায়দুল কাদেরের অযোগ্যতাই বেশি দায়ী। প্রতিনিয়ত ব্যক্তিত্বহীন আচরণ ও অদূরদর্শী বক্তব্য দিয়ে তিনি নিজেকে বিতর্কিত করেছেন। এমন কি বিতর্কিত করেছেন ঐতিহ্যবাহী দলের সাধারণ সম্পাদক পদটিকেও। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ওবায়দুল কাদেরের আগে দলের আর কোনো সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে এমন ট্রল (রসিকতা) হতো না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন মোকাবিলা করা ছিল আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি ফেল করেছেন। ঢাকা মহানগর থেকে শুরু করে সারাদেশে আওয়ামী লীগকে দ্বিধা-বিভক্ত করেছেন ওবায়দুল কাদের। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের অবস্থাও ছিল বেহাল। ফলে এই আন্দোলনে সাড়া মেলেনি নেতাকর্মীদের। বরং কিছু কিছু নেতা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সঙ্গে একমত ছিলেন। এমন বাস্তবতায় মহানগর আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তাকে বলা হয়। এতেও হিতে বিপরীত হয়। নেতাকর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করলে দলের বিবোধ আরও বাড়ে। তার সামনেই পক্ষে-বিপক্ষে তর্কাতর্কি করেন নেতাকর্মীরা। এক নেতা আরেক নেতাকে মারতে যান। এসব সামাল দিতে না পারায় এক পর্যায়ে ওবায়দুল কাদেরকেও তোপের মুখে পড়তে হয়।
পরে গত ৩১ আগস্ট ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের ডাকেন ওবায়দুল কাদের; কিন্তু তাদের ডাকলেও কোনো মতামত না নিয়ে ব্রিফ করে বিদায় নিতে গেলে ছাত্রলীগ নেতারা ওবায়দুল কাদেরের ওপর চড়াও হন। এক পর্যায় ভুয়া ভুয়া বলে তেড়ে আসেন। ওই সময় মহানগরের কয়েক নেতা ওবায়দুল কাদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দেন। এর পর পার্টি অফিসে গেলেও দলীয় ব্রিফ করতে দেওয়া হয়নি ওবায়দুল কাদেরকে। ৫ আগস্টের আগে একদিন জাহাঙ্গীর কবির নানককে গণমাধ্যমের সামনে ব্রিফ করতে দেখা যায়।
আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য- ওবায়দুল কাদের নিজেকে দলের অনিবার্য নেতা মনে করলেও ৫ আগস্টের আগেই তাকে অপদস্থ করার মধ্য দিয়ে অনাস্থা প্রকাশ করে নেতাকর্মীরা। এ কারণেই গত তিন মাসে দলের কোনো ইস্যুতে কথা বলতে দেখা যায়নি ওবায়দুল কাদেরকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ওবায়দুল কাদের শুধু পুলিশ ও ছাত্র-জনতার ভয়েই আত্মগোপনে নয়, দলের নেতাকর্মীরাও তার ভয়ের কারণ। তার আশঙ্কা- আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সামনে এলেও হেনস্তার শিকার হতে পারেন ওবায়দুল কাদের।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com