ডাকসুর রোডম্যাপ দিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শিক্ষার্থীদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন (ডাকসু) এখন না দিয়ে আরও পরে দেওয়ার কথা জানিয়ে উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডাকসুর রোডম্যাপ দেওয়ার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা। এ সময় অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সিন্ডিকেট সভা বসে। সভায় আওয়ামীপন্থী সিন্ডিকেট সদস্যদের আমন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে এমন খবর পেয়ে মিছিল নিয়ে এসে আওয়ামীপন্থী সিন্ডিকেট সদস্যদের অপসারণ ও দ্রুত ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে নানা স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের মিছিলে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, আরবি বিভাগের আবিদ হাসান রাফি, স্যার এ এফ রহমান হলের এ বি জোবায়ের, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মোহাম্মদ ইমরান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান আল ফাহাদসহ অনেকে ছিলেন।
এরপর ছাত্রদলের মানসুর রাফি, আবিদুর রহমান মিশুসহ একদল নেতাকর্মী ঘটনাস্থলে আসেন এবং দ্রুত ডাকসু নির্বাচন না দেওয়ার দাবিতে হট্টগোল শুরু করেন। তারা উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন।
মাস্টার দা' সূর্যসেন হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবিদুর রহমান মিশু উপাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, ক্যাম্পাসে ছাত্রদল এখনো রাজনীতি শুরুই করতে পারেনি। অস্থিতিশীল এক পরিবেশে বিভিন্নজন বিভিন্ন ব্যানারে রাজনীতি করছে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো পক্ষের চাপের মুখে অনির্বাচিত সিন্ডিকেট সদস্যদের সভায় এখনই ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। এ সময় তারা হলে হলে মনিটরিং কমিটি এবং ক্যাম্পাস পেট্রোল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এ সময় নিয়াজ আহমদ খান বলেন, সিন্ডিকেট সভার এজেন্ডাতে ডাকসু সংক্রান্ত কিছু নেই। ডাকসুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সবার সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সবার ঐক্যমত না হলেও বৃহত্তর অংশের সমর্থন নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব।
এ সময় একদিকে ছাত্রদল নেতারা দ্রুত ডাকসুর বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। অন্যদিকে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা দ্রুত ডাকসু চেয়ে স্লোগান দেন।
উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ডিকেটে আওয়ামীপন্থীদের রাখা হয়নি। ইতোমধ্যে নিয়ম মেনে সিন্ডিকেট থেকে আওয়ামীপন্থীদের ৫ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। একজন সেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অগ্রগতির জন্য সিন্ডিকেট সভা করতে হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের সহায়তা কামনা করেন তিনি।
এ দিকে উপাচার্যকে হেনস্তার প্রতিবাদ এবং দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের দাবি সাড়ে ১১ টার দিকে মিছিল করেছেন একদল শিক্ষার্থী। তারা হলপাড়া থেকে মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ছাত্রদল ভাইস চ্যান্সেলর স্যারকে কীভাবে অপদস্থ করেছে- আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর যতগুলো দানব তৈরি হয়েছে তাদের কবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রচিত হয়েছে। ছাত্রদলের এই ইতিহাস মনে রাখা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন ডাকসুর পক্ষে কথা বলায় ছাত্রদল এবং অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেছে। আমরা বলতে চাই, অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে ভাইস চ্যান্সেলর স্যারকে মেরুদণ্ড সোজা রেখে ডাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। তার সময়সীমা ৭২ ঘণ্টা। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হলে আমরা কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলনে যাব।’
সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ডাকসু শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মচারীদের কথা বলার প্লাটফর্ম থাকলেও শিক্ষার্থীদের নেই। ছাত্রীদের তীব্র আবাসন সংকট। অথচ কেউ কথা বলার নেই।
তিনি বলেন, জুলাইয়ে শিক্ষার্থীরা দাসত্বের জীবনের পরিবর্তন, বিদ্যমান সিস্টেমের পরিবর্তনের দাবিতে মাঠে ছিল। কিন্তু এখন ডাকসুর কথা বলার পর কতিপয় কুচক্রী মহল যারা শিক্ষার্থীদের গণরুম-গেস্টরুম কালচার তৈরি করতে চায়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে চায়, তারা শিক্ষকদের হেনস্তা করে। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে রয়েছি।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন শিক্ষার্থী তাহমিদ আল মুদাসসির চৌধুরী, এবি জুবায়ের, সাকিব আহমেদ প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন মোহাম্মদ আরিয়ান।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com