ফুটপাতের দুই শতাধিক দোকান উচ্ছেদ
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুই পাশে পথচারীদের হাঁটার জন্যই তৈরি হয়েছে ফুটপাত। কিন্তু অবৈধভাবে বসানো দোকানপাটের কারণে তাদের বাধ্য হয়ে নামতে হয় মহাসড়কে। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনাও ঘটছে। এসব ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুমন হোসেন। তিনি ফুটপাত সব সময় দখলমুক্ত করার দাবি করেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সুমন (২৫) থাকেন পূর্ব চান্দরা এলাকায়। একই এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। যে কারণে প্রতিদিন ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ধরে চলাচল করতে হয়। তাঁর মতো হাজারো শ্রমিককে ফুটপাতে বসানো দোকানের কারণে আসা-যাওয়া করতে হয় ঝুঁকি নিয়ে।
এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার সফিপুর, মৌচাক পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার মহাসড়কের ফুটপাত ও ফ্লাইওভারের নিচের খালি জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকান উচ্ছেদে অভিযান চালায় পুলিশ। নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশ ও গাজীপুর জেলা পুলিশের যৌথ অভিযানে এদিন দুই শতাধিক অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট দোকানের ব্যবসায়ী ও পুলিশ সূত্র জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক থেকে চন্দ্রা পর্যন্ত দুই পাশেই ফুটপাত দখল করেছে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। এমনকি দখল করা হয়েছে ফ্লাইওভারের নিচের খালি জায়গাও। সফিপুর বাজারের ইজারাদার সফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন মোটা অঙ্কের জামানত নিয়ে মাসিক চুক্তিতে দোকান তুলেছেন সেখানে। প্রতিদিন সেখান থেকে টাকা তোলা হয়। ওই টাকার কিছু অংশ পায় পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারা। বাকি টাকা নিজেদের মধ্যেই ভাগবাটোয়ারা করে তারা।
কয়েকজন ব্যবসায়ী জানায়, ৫ আগস্টের পর ইজারাদার সফিকুল ও স্থানীয় কিছু যুবক প্রতি দোকানের জন্য ১০-২০ হাজার টাকা জামানত নিয়েছেন। মাসিক চুক্তিতে টাকা দেওয়া হয়। এ জন্য দিনে তাদের দোকানভেদে ১০০-১৫০ টাকা দিতে হয়। তাদের লোকজনই দিনের টাকা দিনেই আদায় করে নিয়ে যায়। মহাসড়কের ওপর ভ্রাম্যমাণ দোকান ও স্থায়ী দোকান বসানোর কারণে প্রতিদিনই সফিপুর, মৌচাক ও পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। জনসাধারণকে হাঁটাচলা করতেও বেগ পেতে হয়।
পূর্ব চান্দরার ভাড়া বাসায় থেকে গার্মেন্টসে কাজ করেন বরকত আলী (৩২)। শুক্রবার বিকেল তিনটার দিকে তাঁকে পাওয়া যায় সফিপুরে। তিনি বলেন, পথচারীদের যাতায়াতের জন্যই ফুটপাত। কিন্তু অবৈধ দোকানপাটের কারণে মহাসড়ক দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। অনেক সময় দ্রুতগামী যানবাহনের ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটে। দুই মাসের মধ্যেই সফিপুর, মৌচাক ও পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় অন্তত ১০ পথচারী প্রাণ হারিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এলাকাবাসী জানায়, মহাসড়কে দুই পাশে দোকানপাট বসিয়ে চাঁদাবাজির বিষয়ে সম্প্রতি একাধিক জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও টেলিভিশনে সংবাদ প্রচারিত হয়। এতে পুলিশের টনক নড়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে জেলা পুলিশ ও নাওজোড় হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন। সফিপুর ফ্লাইওভারের নিচে দীর্ঘদিন ধরে পুরোনো কাপড় বিক্রি করে আসা এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে টাকার বিনিময়ে ব্যবসা করছেন। কিছু যুবক সন্ধ্যার পর ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০০-১৫০ টাকা চাঁদা তোলে। টাকা আদায়কারীরা তাদের জানিয়েছে, ওই টাকার অংশ পুলিশের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের বড় ভাইদেরও দিতে হয়।
চাঁদা আদায় বিষয়ে বক্তব্য জানতে সফিপুর বাজারের ইজারাদার সফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। মেসেজ পাঠিয়েও উত্তর মেলেনি।
নাওজোর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রইজ উদ্দিন বলেন, মহাসড়কের দুই পাশের ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে এসব দোকানপাঠ গড়ে তোলা হয়েছে। এতে পথচারীরা চলাচলে বাধার মুখে পড়েন। শুক্রবার বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। এ অভিযান চলবে। কেউ দোকানপাট বসিয়ে চাঁদাবাজি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com