ঢাকা, ০৬ জানুয়ারি, ২০২৫
Banglar Alo

পূর্বাচলকে ‘নিজস্ব সম্পত্তি’ বানিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর নয়ছয় : নকশা ভেঙে প্রকল্পের ৭ কাঠা জায়গা দখল

Publish : 03:04 AM, 06 January 2025.
পূর্বাচলকে ‘নিজস্ব সম্পত্তি’ বানিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর নয়ছয় : নকশা ভেঙে প্রকল্পের ৭ কাঠা জায়গা দখল

পূর্বাচলকে ‘নিজস্ব সম্পত্তি’ বানিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর নয়ছয় : নকশা ভেঙে প্রকল্পের ৭ কাঠা জায়গা দখল

নিজস্ব প্রতিবেদক :

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পকে যেন নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান প্রকৌশলী। ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্পের লেকের ধারে দুই ভাইয়ের নামে দুটি পাঁচ কাঠা আয়তনের প্লট নিয়েছেন। এখন প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্বে থাকায় এই ১০ কাঠা প্লটের পাশের লেকপাড়ের ওয়াকওয়ে, বর্জ্য নিষ্পত্তি স্টেশন এবং সবুজ বেল্টের ৭ কাঠা জায়গা দখল করে প্রাচীর নির্মাণ করেছেন তিনি। এতে নষ্ট হয়েছে প্রকল্পের নকশা। বন্ধ হয়েছে লেকপাড়ের হাঁটার পথ।

তবে এসব বিষয়ে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী ও পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের পরিচালক (বাস্তবায়ন) মো. নুরুল ইসলামের দাবি, পূর্বাচল নতুন শহরে এরকম অনেক ঘটনা রয়েছে। সব নিয়ে এখন নকশা সংশোধন করা হচ্ছে। 

রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০০৩ সালে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পটির প্রজেক্ট ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় নুরুল ইসলাম রাজউকের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ক্যাটেগরিতে ৫ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দের আবেদন করেন। একই সময়ে তাঁর ভাই রফিকুল আলম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী প্রবাসী ক্যাটেগরিতে আরও ৫ কাঠা প্লটের আবেদন করেন। তবে ভাইয়ের প্লট বরাদ্দ আবেদনপত্রসহ সব কাগজপত্রে তিনি নিজের পরিচয় ব্যবহার করেছেন।

রফিকুল আলম তাঁর আবেদনপত্রের বর্তমান ঠিকানার স্থলে লিখেছেন প্রযত্নে প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম, ৯৪৭/৫, পূর্ব মনিপুর, মিরপুর। আর প্লটটি বরাদ্দ পাওয়ার পরে প্লটের লিজ দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময়েও নুরুল ইসলামের প্রযন্তে তাঁর পরবর্তী বাসার ঠিকানা ‘বনানী নিবাস’ ফ্ল্যাট নম্বর ৪০২, বাড়ি নম্বর-০৫, রোড নম্বর ১৭, ব্লক সি, বনানী ব্যবহার করেছেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১ নম্বর সেক্টরের ২০৩-জি নম্বর রাস্তার ১৫ নম্বর প্লটটি ২০০৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মো. নুরুল ইসলামকে এবং একই বছরের ১২ জুন ২০৩-এফ নম্বর রাস্তার ১৬ নম্বর প্লটটি রফিকুল আলমকে বরাদ্দ দেয় রাজউক। ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি ৪৯৫ এবং ৪৯৬ নম্বর দুটি পৃথক স্মারকে এই দুই ভাইয়ের নামে বরাদ্দকৃত প্লট দুটির লিজ দলিল রেজিস্ট্রেশনের ফি জমা প্রদান করতে রাজউক থেকে দুটি চিঠি পাঠানো হয়।  

সরেজমিন দেখা যায়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ১ নম্বর সেক্টরের ২০৩-ডি সড়ক থেকে ২০৩-জি সড়ক পর্যন্ত দুটি সড়কের মাঝখানে ১৮টি করে প্লট রয়েছে। আর ২০৩ জি এবং এইচ সড়কের পশ্চিম পাশে প্রায় ২০ কাঠা জায়গায় শহর প্রকল্পের দাপ্তরিক অফিস ও পুলিশ ফাঁড়ির জায়গা। ফলে জি আর এইচ সড়কের মাঝে ১৪টি প্লটের নকশা করতে প্লট থেকে বালু নদী পর্যন্ত কম জায়গা রাখা হয়েছে। তবে নকশায় লেকের পাড়ে হাঁটার জন্য এইচ থেকে ডি পর্যন্ত একটি সড়ক রাখে রাজউক। পাশাপাশি এখানে ছিল একটি বর্জ্য নিষ্পত্তি স্টেশন ও সবুজ বেল্টের জন্য ফাঁকা জায়গা। এখন লেকপাড়ের এই ওয়াকওয়ে, বর্জ্য নিষ্পত্তি স্টেশন এবং সবুজ বেল্টের ফাঁকা জায়গায় কালো থাবা পড়েছে স্বয়ং রাজউকের প্রধান প্রকৌশলীর। 

লেকপাড় ঘুরে দেখা যায়, ২০২৩ জি নম্বর এবং এফ নম্বর সড়কের মাঝখানে ১০টি প্লট আছে। ১৫ ও ১৬ নম্বর প্লটটি লেকের ধারে। বরাদ্দপত্রে ভিন্ন সড়কের পাশে উল্লেখ করা হলেও প্লট দুটি পাশাপাশি একই দেয়ালে ঘেরা। প্লট দুটির মালিক রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম ও তাঁর ভাই রফিকুল আলম। এইচ ও জি সড়কের মাঝখানের ১৩ ও ১৪ নম্বর প্লটের সমান্তরাল করে ওয়াকওয়ে, বর্জ্য নিষ্পত্তি স্টেশন এবং সবুজ বেল্টের জায়গার ৭ কাঠা দখল করে দেয়াল নির্মাণ করে দখলে নিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী ও তাঁর ভাই। ফলে পূর্বাচল নতুন শহরের এই অংশে নকশা থেকে হারিয়ে গেছে ওয়াকওয়ে, বর্জ্য নিষ্পত্তি স্টেশন ও সবুজ বেল্টের জায়গা। 

রাজউক সূত্রে জানা যায়, নকশা অনুযায়ী পূর্বাচল ১ নম্বর সেক্টরে প্রধান প্রকৌশলী ও তাঁর ভাইয়ের জায়গা দখলের সময় নকশা ভাঙার কারণে আপত্তি তোলা হয়। সে সময় নকশা ঠিক রেখে ওয়াকওয়ে করতে চাইলেও করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে নুরুল ইসলাম দখলের জায়গার বৈধতা নিতে এখন প্রকল্পের ডিজাইন সংস্কার করে প্রতিবেদন তৈরি করছেন।

এসব বিষয়ে নুরুল ইসলাম বলেন, সেই সময়ে রাজউকের প্লট নেওয়ার মতো লোক ছিল না। ডেকে ডেকে প্লট দেওয়া হতো। আমার ছোট ভাই লন্ডনে থাকে, সে আবেদন করে প্লট পেয়েছে। কিন্তু বড় ভাইকে আবেদন করতে বললেও তিনি সহজ-সরল হওয়ায় আর আবেদন করেননি। তবে আমার আগে আমার ভাই প্লট পেয়েছে। আমি পরবর্তী সময়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমাকেও প্লট দেওয়া হয়। পরে আমরা দুই ভাই একই জায়গায় প্লট নিই। এখন প্লটের পাশের খালি জায়গা থাকায় সেখানে দেয়াল দেওয়া হয়েছে। এরকম ঘটনা নতুন শহর প্রকল্পে আরও আছে। তাই কনসালট্যান্টের মাধ্যমে নকশা সংশোধন করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশনা পরে বাস্তবায়ন করা হবে। আদালত নির্দেশনা দিলে দখল করা জায়গা ভেঙে ফেলব।

এ বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান সরকারের দপ্তরে গেলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে তাঁর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম লন্ডন যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া : দীর্ঘ ৭ বছর পর দেখা হবে মা ও ছেলের শিরোনাম ৫০ বছর পর প্রকাশ্যে মেজর ডালিম, শেখ মুজিবকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য শিরোনাম শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি শিরোনাম পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শিরোনাম ২৪ দফার ইশতেহার নিয়ে সামনে আসছে তরুণদের দল শিরোনাম বিশেষ লেনের বিশেষ বাস সার্ভিস কোথায়