সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা
ময়মনসিংহে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিবছরই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির পরিমাণ কমছে। লেখাপড়ার আগ্রহ হারাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২ হাজার ১৪০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে ২০১৯ সালে শিক্ষার্থী ভর্তি হয় ১০ লাখ ১৫ হাজার ৪৬৭ জন, ২০২০ সালে ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৪২৪ জন, ২০২১ সালে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৯৯৮ জন, ২০২২ সালে ৭ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৬ জন, ২০২৩ সালে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৪২০ জন এবং ২০২৪ সালে ৭ লাখ ৪৩ হাজার ১৬৬ জন। গত পাঁচ বছরে গড়ে প্রায় ১৩ হাজার ৬৮১ শিক্ষার্থী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে গেছে। এ ছাড়া ২০১৯ সালে করোনা মহামারির কারণে ঝরে পড়ে শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ। জেলার ১০৬টি বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। ৬০৮ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক সংকট রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় তদারকির জন্য ২২ জন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সংকট রয়েছে।
অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে দ্বিধা ও সন্দেহ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না পড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন অনেক অভিভাবক। নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করা হয়েছে। হাতে-কলমে শিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এমন কিছু বিষয় সামনে এসেছে যাতে আস্থা রাখতে পারছেন না। শিশুদের স্কুলে এমন কিছু শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, যা পরিবারে স্বাভাবিকভাবে শেখে। ফলে মাদ্রাসা, ইংরেজি মাধ্যম বা এনজিও পরিচালিত স্কুলকে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অপেক্ষাকৃত উপযুক্ত মনে করছেন অনেকে। যে কারণে একটি অংশ মাদ্রাসা শিক্ষায় ঝুঁকেছে, আরেকটি অংশ কিন্ডারগার্টেনে পড়ছে; আবার একটি অংশ গ্রামে এনজিও পরিচালিত স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছে। অর্থনৈতিক চাপে কিছু শিক্ষার্থী স্কুল ছেড়ে কর্মে ঢুকে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত গ্রামে পঞ্চম শ্রেণি কিংবা অষ্টম শ্রেণির পর সন্তানদের আর লেখাপড়া করান না বেশির ভাগ অভিভাবক। প্রাতিষ্ঠানিক এ শিক্ষা গ্রহণে তাদের লক্ষ্য হিসাব-নিকাশ করতে পারলেই হলো, যা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যাবে।
হুমায়ুন মিয়া নামে এক অভিভাবক বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী একটানা কয়েক দিন অনুপস্থিত থাকলেও খোঁজ নেন না শিক্ষকরা। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের কোনো যোগাযোগ নেই। একটানা কয়েক দিন একজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকলে সেই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে অবস্থান করতে থাকে। এ ছাড়া অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের পরিবেশ প্রতিকূল ভেবে লেখাপড়া ছেড়ে দেয়।
ময়মনসিংহ মহানগর সুজন সম্পাদক আলী ইউসুছের ভাষ্য, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন শিক্ষকরা। তারা কর্কশ ভাষা ব্যবহার করেন কিংবা কড়া শাসনের মধ্যে রাখলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেয়। অভিভাবকদের চাহিদার দিকটি সরকারের বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ত্রিশাল উপজেলার বেকিরচর মাদুশাহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহাবুব কাউসারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন সহকারী শিক্ষক ১৩তম গ্রেডে বেতন পান। আমি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন (স্নাতক) করে প্রাইমারিতে (প্রাথমিক বিদ্যালয়) শিক্ষকতা করছি, যা তৃতীয় শ্রেণির সমমান। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী কীভাবে প্রথম শ্রেণির নাগরিক তৈরি করবে? আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দৈনিক টিফিন ভাতা পাই ৬ টাকা। আমাদের টিফিন ভাতাই প্রমাণ করে আমরা কোনো জায়গায় নিয়ে গেছি শিক্ষকতা।’
ময়মনসিংহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের ভাষ্য, করোনা ও পরবর্তী সময়ে নানা কারণে শিক্ষার্থী কমে গেছে। বিষয়টি নিয়ে সবারই জানা। শিক্ষার্থী বাড়াতে নানামুখী
উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার নতুনভাবে উদ্যোগ নিয়েছে, যাতে আগামী দিনে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা কমে আসবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, জিডিপির সর্বনিম্ন অংশ পায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত। সার্বিক উন্নয়নের জন্য এই বরাদ্দ বৃদ্ধি করা জরুরি। শিক্ষকতা পেশায় যারা নিয়োজিত হবেন, তাদের যদি আর্থিক ও মর্যাদাগত বিষয় নিশ্চিত করা যায় তাহলেই এখানে মেধাবীরা নিয়োজিত হবে। তারা এই জাতির জন্য একটি দক্ষ শিক্ষিত শ্রেণি তৈরি করতে পারবেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com