ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Banglar Alo

দুর্নীতি-অনিয়মের পরিচালক

Publish : 03:13 PM, 07 September 2024.
দুর্নীতি-অনিয়মের পরিচালক

দুর্নীতি-অনিয়মের পরিচালক

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ডা. হোসাইন ইমাম সাড়ে চার বছর ধরে  তিনি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে অতিরিক্ত পরিচালক (একাডেমি)। অনিয়ম-দুর্নীতির নানা অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। ইনস্টিটিউটের কেনাকাটায় একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন তিনি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়েছেন পদোন্নতি। সরকারি কেনাকাটায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে হাতিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে অফিস করছেন না এই অতিরিক্ত পরিচালক।

ডা. হোসাইন ইমাম বেশি পরিচিত ডা. ইমু নামে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর ধানমন্ডি ৮ নম্বর রোডে রয়েছে তাঁর একটি ফ্ল্যাট, যার দাম ৫ কোটি টাকা। ইনস্টিটিউটে ৬৫ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।  

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১০ সালে অস্থায়ী ভিত্তিতে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মেডিকেল অফিসার (নন-ক্যাডার) পদে নিয়োগ পান ডা. হোসাইন ইমাম। নিয়ম অনুযায়ী, চাকরির প্রথম দুই বছর তাঁর উপজেলা পর্যায়ে থাকার কথা। কিন্তু চাকরির এক বছরের মাথায় বদলি হয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসেন তিনি। ২০১৪ সালে তাঁর চাকরি স্থায়ী হয়। ২০১৯ সালে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ২০২৩ সালে হন সহযোগী অধ্যাপক। একই বছরের ৩১ অক্টোবর তাঁকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক (একাডেমিক) পদে বসানো হয়। নন-ক্যাডার কর্মকর্তার ক্যাডার পদে এ রকম পদোন্নতি বিধিসম্মত নয় বলে অভিযোগ করেছেন ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা। 

টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ

ডা. হোসাইন ইমাম অনেক দিন ধরে রয়েছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের দরপত্র মূল্যায়ন ও দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটিতে। অভিযোগ রয়েছে, তাঁর যোগসাজশে কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কারসাজি করে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছেন তিনি। বাজারমূল্যের চার গুণ টাকা দিয়ে হাইপারবারিক অক্সিজেন থেরাপি (এইচবিওটি) কিনেছেন। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল একটি এইচবিওটি মেশিন ৫০ লাখ টাকা দরে কিনলেও বার্ন ইনস্টিটিউটের জন্য এমন ১০টি মেশিন কেনা হয়েছে প্রতিটি ২ কোটি টাকা দরে। এ ক্ষেত্রে ডা. ইমু মোটা অঙ্কের কমিশন নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর অনেক সহকর্মী। 

এ ছাড়া হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টের যন্ত্র কেনাকাটায়ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ২০২২ সালের শুরুর দিকে ইনস্টিটিউটের জন্য প্রথমে চারটি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট মেশিন কেনা হয়। শুরু থেকেই সেগুলো বিকল। পরে আরও চারটি মেশিন আনা হয়। হাসপাতালে এই মেশিন চালানোর মতো জনবল না থাকায় প্রশিক্ষণ নিতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডা. হোসাইন ইমাম যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে এক মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরার পর একটি হেয়ার ট্রান্সপ্লান্টও করেননি তিনি।

২০২৩ সালে ইউনিমেড কোম্পানি থেকে ১০টি লেজার মেশিন কেনে বার্ন ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটিকে এই ক্রয়াদেশ পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ২০২৩ সালের মার্চে স্পেন ঘুরে আসেন ডা. ইমু ও ইনস্টিটিউটের আরেক কর্মকর্তা। এ বিষয়ে ইউনিমেডের প্রকৌশলী মো. নুর জামাল বলেন, ‘কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী, প্রশিক্ষণের জন্য মাঝে মাঝে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠানো হয়।’ 

বার্ন ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, সেখানে বছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকার চিকিৎসা উপকরণ ও ওষুধ প্রয়োজন হয়। এগুলো সরবরাহ করে বনানী মেডিকেল স্টোর, ওশেন এন্টারপ্রাইজ, টেকনো ওয়ার্থ অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড, তামাম করপোরেশন, জুবায়ের সার্জিক্যাল লিমিটেড, ফোর ডি সার্ভিস ও এমএল মেশিনারি করপোরেশন। 

নিয়োগ বাণিজ্য 

ইনস্টিটিউটে আউটসোর্সিং কর্মী নিয়োগ দেন ডা. হোসাইন ইমাম। গালফ, ওয়েলফেয়ার, ট্রাস্ট, রেডিসন কোম্পানির মাধ্যমে এই নিয়োগ দেওয়া হয়। জানা গেছে, গালফ কোম্পানির মালিক মো. নয়ন সম্পর্কে ডা. ইমুর মামাতো ভাই। কোম্পানিটি মূলত পরিচ্ছন্নতাকর্মী সরবরাহ করে। এসব নিয়োগে ডা. ইমু মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন বলে ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান। 

অবৈধ আয়ে বিলাসী জীবন

ডা. হোসাইন ইমাম চাকরির বাইরে প্রাইভেট চেম্বার করেন না। তিনি যখন চাকরিতে যোগ দেন, তখন তাঁর বেতন ছিল ৩৮ হাজার টাকা। ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে এখন তাঁর বেতন ৫৬ হাজার টাকা। কিন্তু কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি। ধানমন্ডির ফ্ল্যাট ছাড়াও রয়েছে একটি কোটি টাকা দামের গাড়ি। আরেকটি গাড়ি রয়েছে ২০ লাখ টাকা দামের। ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানান, ডা. ইমাম বার্ন ইনস্টিটিউটে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সদস্য সচিব। আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিতেন তিনি। 

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কামাল বলেন, অনৈতিক পদোন্নতি বন্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি।

ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল বলেন, ‘তিনি (ডা. ইমু) রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ইনস্টিটিউটের গাড়ি ব্যবহার করতেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর সেটি বন্ধ করেছি।’ 

যা বললেন ডা. হোসাইন ইমাম

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় জানতে চাইলে ডা. হোসাইন ইমাম সমকালকে বলেন, ‘১০ শতাংশ বিশেষ কোটায় আমার পদোন্নতি হয়েছে। আর আউটসোর্সিংয়ের ৬৫ জন কর্মী নিয়োগ পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সুপারিশে এবং বিশেষ বিবেচনায়।’ ব্যাংক ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দরপত্র কমিটিতে আমি একা ছিলাম না। অনিয়ম হলে অন্যরা কেন কথা বলেননি?’

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম কলেজছাত্র হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি ৪৯৯, শেখ হাসিনা নির্দেশদাতা শিরোনাম বাংলাদেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে আলোচনা করেছে মার্কিন প্রতিনিধিদল শিরোনাম পশ্চিমবঙ্গের অচলাবস্থা কাটাতে ‘শেষ চেষ্টা’ মমতার শিরোনাম ত্রাণের ৯ কোটি টাকা কেন ব্যাংকে রেখেছেন সমন্বয়করা? শিরোনাম লঞ্চ হলো গুগল ওয়ান লাইট, খরচ কত? শিরোনাম সত্যিকারের বন্ধু চেনার উপায়