ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Banglar Alo

বদলে যাওয়া বাংলাদেশের পাকিস্তান জয়

Publish : 11:20 AM, 04 September 2024.
বদলে যাওয়া বাংলাদেশের পাকিস্তান জয়

বদলে যাওয়া বাংলাদেশের পাকিস্তান জয়

স্পোর্টস ডেস্ক :

ইতিহাস যখন ভবিষ্যৎ হয়ে ওঠে, তখন রুদ্ধ হয় যাত্রাপথের আনন্দগান। নদী তার উচ্ছল পার্বত্যপ্রবাহ পেরিয়ে খুঁজে পায় না বাঁক। তাই অনুবর্তন নয়, পরিবর্তনেই থাকে ইতিহাস হয়ে ওঠার সম্ভাবনা। তেমনি এক ইতিহাস রচিত হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। চব্বিশ বছরের অপেক্ষার পর যা কখনোই হয়নি, সেই পাকিস্তানের বিপক্ষেই টেস্ট সিরিজ জয়ের মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন মুশফিকুর রহিমরা; বাবর আজমদের তাদেরই মাটিতে ২-০-তে হোয়াইটওয়াশের বিস্ময় উপহার দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজরা। রাগে, অভিমানে, লোক দেখানো চমকদারিতায় কখনও কখনও এই ক্রিকেটারদের দূরে ঠেলে দিলেও সমর্থকদের কিন্তু বারবার ফিরে আসতে হয়েছে সলজ্জ হেসেই। রাওয়ালপিন্ডিতে দুই টেস্টেই যে এতটা দাপট দেখিয়ে পাকিস্তানকে হারানো যাবে, তা কি সিরিজ শুরুর আগেও কেউ ভেবেছিলেন? এমনকি গতকাল টেস্টের শেষ দিন যেখানে বৃষ্টির আশঙ্কা ছিল, জয়ের জন্য ১৪৩ রানের প্রয়োজন ছিল– তখনও কি কেউ ভেবেছিল, পিন্ডির আকাশে মেঘের মেলায় বিশেষ অতিথি হয়ে ধরা দেবে রোদ্দুর? হয়তো প্রকৃতিও চেয়েছিল নাজমুল হাসান শান্তদের এই ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের সাক্ষী থাকতে। আর সে জন্যই বোধ হয় ৪ উইকেটে ১৮৫ রান তুলতে কোনো অস্বস্তিই কাজ করেনি। ৬ উইকেটের এই জয়কে ‘বাংলাওয়াশ’ বলে ধারাভাষ্যকার যেন মনে করিয়ে দিতে চাচ্ছিলেন, কেন এই সিরিজ জয়ের মাহাত্ম্য আর সবকিছুর চেয়েও আলাদা। 

এ নিয়ে বিদেশর মাটিতে তিনবার টেস্ট সিরিজে জয়ের স্বাদ পেয়েছে লাল-সবুজের দল। জিম্বাবুয়ে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর অতীত গৌরব থাকলেও এবারই প্রথম পাকিস্তান-বধ। ২০০৯ সালে দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে হোয়াইটওয়াশ করানোটা যদি সাকিব-মুশফিক প্রজন্মের শুরুর সাফল্য হয়, তাহলে গতকাল পাকিস্তানের মাটিতে এই ধবলধোলাইটা ছিল সেই পরীক্ষিত প্রজন্মের পরিণত এক কীর্তি। গতকাল সেই জুটিই কিনা ক্রিজ থেকে জয় নিশ্চিত করল। শান মাসুদ, বাবর আজম, রিজওয়ান, শাহিন আফ্রিদি, নাসিম শাহ, খুররাম মঞ্জুর, আবরার– পাকিস্তানের পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই এই সিরিজ খেলতে নেমেছিল তাদেরই মাঠে। সেখানে প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটে হারার পর সাড়ে তিন দিনের দ্বিতীয় টেস্টও হার। ইতিহাস বলছে, ঘরের মাঠে পাকিস্তান কেবল দুবারই হোয়াইটওয়াশ হয়েছে, যার একটি ইংল্যান্ডের সঙ্গে বছর দুই আগে আর দ্বিতীয়তটি গতকাল বাংলাদেশের কাছে। স্থান, কাল আর প্রতিপক্ষের শক্তির বিচারে এই সিরিজ জয়ই বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা। ১৪৪ টেস্ট খেলে মুশফিকরা যে ২১টি জয় পেয়েছেন, তার মধ্যে ১২টিই এসেছে হয় র‍্যাঙ্কিংয়ের নিচু সারির দলের সঙ্গে, নয়তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো খর্বশক্তির দলের বিপক্ষে। বাকি ৯টি জয় এসেছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা আর পাকিস্তানের সঙ্গে। এই জয়গুলোর মূল্যমান মাপলেও পিন্ডির দুই টেস্টকে সামনের দিকেই রাখতে হবে।

এত বড় অর্জনের পর পুরস্কার মঞ্চে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে যেন ভাষা হারিয়ে ফেলছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, ‘এটি অনেক বড় কিছু। ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।’ উচ্ছ্বসিত শান্ত এরপরই বদলে যাওয়া দলটির কিছু বিশেষত্ব সংক্ষেপে তুলে ধরেন, ‘আমরা এখানে জয়ের উদ্দেশ্যে এসেছিলাম। খুব ভালো লাগছে, প্রত্যেকেই নিজের কাজগুলো ঠিকমতো করতে পেরেছেন। আমাদের পেসাররা তাদের কাজের নীতিতে দুর্দান্ত ছিলেন। সে জন্যই আমরা এমন ফলাফল করতে পেরেছি। সবাই নিজের জায়গায় সৎ ছিলেন এবং জিততে চাচ্ছিলেন। আমি আশা করব, এই ইচ্ছাটা সামনেও অব্যাহত থাকবে।’ প্রথম টেস্টে মুশফিকের সেই ১৯১ রানের ইনিংস, মিরাজের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ১৯৬ রানের রেকর্ড জুটি ধৈর্য আর আত্মবিশ্বাসের সাক্ষী ছিল। দ্বিতীয় টেস্টেও যখন ২৬ রানে ৬ উইকেট পড়ে যায়, তখন লিটন আর মিরাজের ১৬৫ রানের জুটি দলকে আস্থা দিয়েছিল। ১৩৮ রানের ইনিংসটি লিটনকে এই টেস্টের সেরার পুরস্কার দিয়েছে আর সিরিজসেরার পুরস্কার নিশ্চিতভাবেই গিয়েছে মিরাজের হাতে। তবে পুরস্কারের চেক না পেয়েও যারা এই টেস্টে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, তাদের দু’জন অবশ্যই পেসার নাহিদ রানা আর হাসান মাহমুদ। রেকর্ড বলছে, টেস্টে প্রথমবারের মতো এক ইনিংসে বাংলাদেশের পেসাররা ১০ উইকেট শিকার করেছেন। রাওয়ালপিন্ডিতে নাহিদ রানার ঘণ্টায় ১৪৯.৪ কিলোমিটার গতিতে বোলিং, যা দেখে আমির সোহেলের মতো পাকিস্তানের সাবেকরা অবাক হয়ে গেছেন। ম্যাচের ৭৩ শতাংশ বোলিং ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন নাহিদ। অন্যদিকে সুইংয়ের কৌশলে ম্যাচের পাঁচ উইকেট দখল করেছেন হাসান মাহমুদ। পিন্ডিতে বাংলাদেশি পেসারদের এই আগুনে বোলিংয়ে রীতিমতো অপ্রত্যাশিত ছিল পাকিস্তানিদের কাছে। প্রচণ্ড হতাশ ছিল তারা, যা কিনা ম্যাচের পর অস্বীকার করেননি পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ, ‘আমরা ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে পারেনি। দুটি টেস্টে আমরা দুটি সুযোগ পেয়েছিলাম বাংলাদেশকে অলআউট করতে; কিন্তু আমরা তা পারিনি।’ ভেঙে পড়া এক নাবিকের মতো দেখাচ্ছিল শান মাসুদকে। অন্যদিকে বাংলাদেশিদের মধ্যেও উচ্ছ্বাস পরিমিত। কেননা পাকিস্তান জয়ের পর সামনে এবার ভারত। দুই টেস্ট আর তিন টি২০ খেলতে ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত যাবেন শান্তরা। ১৯ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ে সেখানে প্রথম টেস্ট শুরু। সেখানে লক্ষ্য এবার ভারত-বধ মিশন ‘বাংলাওয়াশ’।

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি গ্রেপ্তার শিরোনাম শ্রীলঙ্কায় রাবেয়াদের জয়ের ধারা অব্যাহত শিরোনাম সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুলের বিছানাজুড়ে টাকা আর টাকা শিরোনাম কোমোরোসের প্রেসিডেন্টকে ছুরিকাঘাত শিরোনাম স্বজনপ্রীতির তিক্ততায় রাকুল শিরোনাম আফগানিস্তানে বন্দুকধারীদের অতর্কিত হামলা, নিহত ১৪