ঢাকা, ০৯ জানুয়ারি, ২০২৫
Banglar Alo

জল্পনার অবসান, খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা

Publish : 08:58 AM, 08 January 2025.
জল্পনার অবসান, খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা

জল্পনার অবসান, খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে লন্ডনের পথে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা ছাড়েন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা ঘিরে রাজধানীতে বড় শোডাউন করেছেন বিএনপি নেতাকর্মী। উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে যাত্রা করলেও রাজনৈতিক কর্মসূচির মতো বিএনপি নেত্রীর গাড়িবহরের সামনে-পেছনে ছিল নেতাকর্মীর ঢল। ঘোষিত কর্মসূচি না থাকলেও তাঁর গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে বিমানবন্দর ছাড়িয়ে উত্তরা পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে লাখো নেতাকর্মী জড়ো হন। এতে বিমানবন্দর থেকে মহাখালী পর্যন্ত তীব্র যানজট হয়। খালেদা জিয়ার নির্ধারিত ফ্লাইট সোয়া এক ঘণ্টা বিলম্বে উড্ডয়ন করে। অনেকে দেরিতে পৌঁছানোয় ফ্লাইট মিস করেন। আবার একাধিক ফ্লাইট বিলম্বে বিমানবন্দর ছাড়ে বলে সূত্র জানিয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা চেয়ারপারসনকে বিমানবন্দরে বিদায় জানান। তাঁর বিদেশযাত্রার কারণে কড়া নিরাপত্তা ছিল বিমানবন্দর এলাকায়। বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার বিকেল ৪টার দিকে খালেদা জিয়ার লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা। পথে দোহায় যাত্রাবিরতি করবেন। সেখানে কাতারের আমিরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে।

চিকিৎসকসহ ১৫ জন খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী। তাদের মধ্যে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সিঁথি রহমানও আছেন। সরকারি কোনো পদে না থাকলেও খালেদা জিয়াকে হিথরো বিমানবন্দরে ভিআইপি প্রটোকল দেওয়া হবে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষায় রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ হাজারো নেতাকর্মী। সাড়ে সাত বছর পর ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হবে খালেদা জিয়ার। তবে তিনি কবে দেশে ফিরবেন, তা নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আল মামুন সমকালকে জানান, উন্নত চিকিৎসায় খালেদা জিয়া কত দিন বিদেশে থাকবেন, তা দেশি-বিদেশি চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড বলতে পারবে। বোর্ড যেভাবে পরামর্শ দেবে, সেভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চলবে। তিনি লিভারসহ নানা জটিলতায় আক্রান্ত। লম্বা চিকিৎসা নিতে দেড়-দুই মাস লাগতে পারে। তবে এর আগে সুস্থ হয়ে গেলে দেশে চলে আসবেন। বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান।

২০০৭ সালে কারাবন্দি দুই নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল তৎকালীন সেনা-সমর্থিত সরকার, যা ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নামে পরিচিত। সে সময় শেখ হাসিনা প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশ গেলেও, দেশে থাকার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন খালেদা জিয়া।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালান। তাঁর বিরুদ্ধে গণহত্যা, গুম, খুনের মামলা চলছে। তাঁকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি দিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রার মাধ্যমে গত সাড়ে চার দশকে এই প্রথম দুই নেত্রী বিদেশে। দুই রাজনৈতিক পরিবারেরও কেউ নেই দেশে।

শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতনের পর খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রায় সরকারি বাধা না থাকলেও তিনি পাঁচ মাস সময় নিয়েছেন। বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, তারেক রহমান দেশে না থাকায় বিদেশে যাননি খালেদা জিয়া। একসঙ্গে দু’জনের অনুপস্থিতি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল। যদিও সরকারের দিক থেকে আশ্বস্ত করা হয়, কাউকে মাইনাস করার ইচ্ছা নেই। গত ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, তখনই স্পষ্ট হয়– বিএনপি নেত্রীর বিদেশযাত্রায় ঝুঁকি নেই।

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পরের দুই বছর খালেদা জিয়া পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে একাকী কাটান দুই মামলায় দণ্ডিত হয়ে। বাসায় থাকা, রাজনীতি না করাসহ নানা শর্তে নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালের মার্চে সাজা স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়। পরের চার বছরের অধিকাংশ সময় হাসপাতালে কাটে নানা রোগের জটিলতায়। লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, করোনাসহ নানা রোগে তাঁকে একাধিকবার আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বারবার আবেদনেও আওয়ামী লীগ সরকার চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেয়নি।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরদিনই খালেদা জিয়ার সাজা মওকুফ করেন রাষ্ট্রপতি। তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করা খালেদা জিয়া আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাজা থেকে খালাস পেয়েছেন। অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার সাজা স্থগিত হয়েছে আপিল বিভাগে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয় ১/১১ সেনা-সমর্থিত ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। এর পাঁচটি ছিল দুর্নীতির। নাইকো মামলা বিচারাধীন। গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলা থেকে সম্প্রতি অব্যাহতি পেয়েছেন। নাশকতা ও মানহানির ৩২ মামলা থেকেও মুক্তি পেয়েছেন খালাস, খারিজ ও অব্যাহতির মাধ্যমে। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং নাইকো মামলা চলমান থাকলেও সাজামুক্ত হওয়ার মাধ্যমে তিনি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য হয়েছেন।

খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা উপলক্ষে গতকাল বিকেল থেকে গুলশান ঘিরে ছিল বিএনপি নেতাকর্মীর ঢল। সন্ধ্যা ৬টার দিকে একটি গাড়িতে তাঁর লাগেজ বিমানবন্দরে পাঠানো হয়। রাত সোয়া ৮টার দিকে ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-২৬১২ নম্বরের গাড়িতে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা থেকে রওনা দেন। এত দিন হুইলচেয়ার লাগলেও গতকাল বাসা থেকে তিনি হেঁটে এসে গাড়িতে ওঠেন। এর আগে তাঁর সঙ্গে মির্জা ফখরুলসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা দেখা করেন।

খালেদা জিয়াকে গাড়িতে তোলার সময় নেতাকর্মীর ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। নেতাকর্মীর ভিড়ের কারণে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়ি রাজনৈতিক শোভাযাত্রার মতো ধীরগতিতে বিমানবন্দরের দিকে এগিয়ে যায়। শুধু ঢাকা নয়; গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের জেলা থেকেও নেতাকর্মী আসেন। তারা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সড়কের দুই পাশে দাঁড়ান। খালেদা জিয়ার নামে নানা স্লোগান দেন। নেতাকর্মীর কারণে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ রুটে সাধারণ যাত্রীদের চলাচলের জন্য বেশ কিছু জায়গায় বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে বলা হয়। নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয় গুলশান থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার পথজুড়ে। সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, র‍্যাব, এপিবিএন, আনসার বাহিনীসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরাও অবস্থান নেন। ৮ নম্বর হ্যাঙ্গার গেট দিয়ে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়া।

বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, হিথরো বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়াকে সরাসরি পশ্চিম লন্ডনের ‘লন্ডন ক্লিনিক’-এ নেওয়া হবে। সেখানকার চিকিৎসকরা সুপারিশ করলে পরে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে নেওয়া হতে পারে।

২০১৭ সালের ১৬ জুলাই সর্বশেষ যুক্তরাজ্যে যান খালেদা জিয়া। ওই বছরের ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি। সেই সময় খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যের ডা. হ্যাডলি ব্যারির অধীনে চিকিৎসা নেন।

বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ সমকালকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে জিয়া অরফানেজ ও জজ আদালতে নাইকো দুর্নীতির মামলা চলছে। নাইকো মামলায় ৬৮ সাক্ষীর ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ ১৪ জানুয়ারি। এসব মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে আছেন। ফলে এখন উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ যেতে আইনি বাধা নেই তাঁর।

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়া শিরোনাম সাড়ে সাত বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ শিরোনাম শুল্ক ও করের হার বাড়াতে বা কমাতে পারবে না এনবিআর শিরোনাম ‘গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত সুখকর নয়, তারপরও বাড়াতে হবে’ শিরোনাম ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে থাকছে না আর ফ্যাক্ট চেকার শিরোনাম কামরুল, পলক, মামুনরা নতুন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার