২৪ দফার ইশতেহার নিয়ে সামনে আসছে তরুণদের দল
রাজনৈতিক দল গঠনের লক্ষ্যে সারাদেশে সাংগঠনিক বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। তরুণদের এই দল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে নতুন দেশ গড়তে ২৪ দফার ইশতেহার (মেনিফেস্টো) নিয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। এতে থাকবে রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিকভাবে দেশকে তারা কীভাবে গড়ে তুলতে চায়, সেসব বিষয়। থাকবে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথরেখা। জাতীয় ঐক্যই হবে দলের মূল আদর্শ।
নাগরিক কমিটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আবির্ভূত হবে না। এটি একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে থেকে যাবে। নতুন দলের প্রধান একক কর্তৃত্বশালী যেন না হন, সে জন্য গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাঁকে অপসারণের ব্যবস্থা থাকবে। কারও পারিবারিক পরিচয় নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে যেন তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে উঠে আসতে পারে– এমন বিষয় প্রাধান্য পাবে রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্রে। দলের প্রধান সরকারপ্রধানসহ নির্বাহী কোনো পদে থাকতে পারবেন না।
গণঅভ্যুত্থানের পর রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে প্রকাশ্যে আসে জাতীয় নাগরিক কমিটি। নতুন দল গঠনের লক্ষ্যে নাগরিক কমিটি সারাদেশে ১৬০টির বেশি প্রতিনিধি কমিটি করেছে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র সামান্তা শারমীন। গত ৮ নভেম্বর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় ৬১ সদস্যের প্রতিনিধি কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে নাগরিক কমিটির সাংগঠনিক বিস্তৃতি শুরু হয়। গত ১২ নভেম্বর টাঙ্গাইল সদর উপজেলায় ৩৬ সদস্যের ও মধুপুর উপজেলায় ৫৫ সদস্যের কমিটি করে ঢাকার বাইরে কার্যক্রম শুরু করে নাগরিক কমিটি। সামান্তা শারমীন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময়ে সংবিধান পুনর্লিখন যদি না হয়, নতুন সংবিধানের কথা দলের মেনিফেস্টোতে আমরা অবশ্যই বলব। এতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠনের কথা বলব। ধর্ম-বর্ণের কারণে কেউ যেন নির্যাতনের শিকার না হয়, সে অঙ্গীকার থাকবে।’
তবে থানা কমিটিগুলোর সবাই রাজনৈতিক দলে যুক্ত হবেন এমন নয়। এর মধ্যে যারা আগ্রহী, তারাই দলে যুক্ত হবেন। জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, যে থানা কমিটিগুলো হচ্ছে, সেগুলোর অধিকাংশ সদস্য নতুন রাজনৈতিক দলে অংশগ্রহণ করবেন বলে তারা আশাবাদী।
ফেব্রুয়ারিতেই দলের আত্মপ্রকাশের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনা করে ফেব্রুয়ারিতে নতুন দলের ঘোষণা হতে পারে। দলে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নেতৃত্বের বদলে বহু ব্যক্তির নেতৃত্বকে প্রমোট করতে চাই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, এমন তরুণরাই দলের নেতৃত্বে আসবেন।’
দলটির স্বরূপ-বৈশিষ্ট্য কেমন হবে, এটির গঠনতন্ত্রসহ সব বিষয় ঠিক করতে নাগরিক কমিটির একদল তরুণ কাজ করছে। তাদের একজন নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার। রোববার তিনি সমকালকে বলেন, ২৪ দফা মেনিফেস্টো নিয়ে প্রকাশ্যে আসবে তরুণদের রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে থাকবে জনমানুষের আকাঙ্ক্ষার কথা, তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মেনিফেস্টো চব্বিশের অভ্যুত্থান বিবেচনায় ২৪ দফায় সীমিত রাখতে চাচ্ছি। এতে থাকবে সাংস্কৃতিকভাবে কেমন বাংলাদেশ চাই, রাজনৈতিকভাবে কেমন বাংলাদেশ চাই, আমাদের অর্থনীতি কী রকম থাকবে, অর্থাৎ পুরো রাষ্ট্রকল্পই এতে থাকবে। যদি আমরা সরকারে যাই, তাহলে এটি বাস্তবায়ন করব।’ মেনিফেস্টোতে জীবনে দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ না রাখার কথা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বলা হচ্ছে, দুবার পরপর প্রধানমন্ত্রী নয়, আমাদের বক্তব্য হলো, জীবনে দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
অর্থনৈতিকভাবে বড় বড় মাফিয়া সিন্ডিকেট ভাঙতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা এবং পৃষ্ঠপোষকতা করা, পাশাপাশি অর্থনীতিতে যারা অবদান রাখে, পাচার করে না, তাদেরও পৃষ্ঠপোষকতা করার কথা থাকবে। এখন সবাই বিসিএসমুখী। তরুণরা যেন উদ্যোক্তা হতে পারে, সেজন্য প্রকৃত অর্থে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাবনা রয়েছে আমাদের। প্রতিবছর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতে হবে, এতে যেন কোনো ছেদ না পড়ে।’
সারোয়ার তুষার আরও বলেন, গঠনতন্ত্রে আমরা এমন বিষয় রাখতে চাই, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যেন তৃণমূলের কাছে দায়বদ্ধ থাকে এবং স্থানীয় পর্যায় থেকে যোগ্যতার বলে কাজ করে যেন যে কেউ কেন্দ্রে উঠে আসতে পারে– কারও ছেলে, কাকা-ভাতিজা পরিচয় দিয়ে নয়। দলের যিনি প্রধান, তিনি অন্য কোনো নির্বাহী পদে থাকবেন না। এ ছাড়া গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে দলের প্রধানকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে তাঁকে অপসারণের ব্যবস্থাও থাকবে।
নাগরিক কমিটির সহমুখপাত্র সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, দলে তরুণরা প্রাধান্য পাবেন। তরুণরা নতুন বাংলাদেশ কেমন দেখতে চান, তার ভিত্তিতে কাজ হবে। অনেক প্রস্তাবনা আসছে, দলের নাম কী হবে, নেতা কে হবেন ইত্যাদি বিষয়ে। তবে এখন পর্যন্ত দলের নাম বা নেতা কে হবেন, তা ঠিক হয়নি।
জাতীয় নাগরিক কমিটিকে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। এতে পেশাজীবী, গবেষণা, সাংস্কৃতিক, শ্রমিক উইংসহ বিভিন্ন শাখা থাকবে। এগুলোর সবাই রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন না। আদর্শ রাজনৈতিক দল তৈরি করতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দলের কাঠামো বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। দলের আর্থিক নীতিও ঠিক করা হচ্ছে। নতুন দলের কাঠামো কেমন হবে– এ প্রশ্নে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন সমকালকে বলেন, ‘আমরা দল গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন টিমে কাজ করছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই চূড়ান্ত নয়। মেনিফেস্টোতে অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা দেব। এতে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকবে এবং দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক কাঠামো থাকবে।
বাংলাদেশ প্রশ্নে ঐক্যই হবে এই দলের মূল আদর্শ।’ তিনি বলেন, তারা জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়েও কাজ করছেন এবং সারাদেশে জনসংযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে গণমানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তারা নতুন রাজনৈতিক দলের বার্তা দিচ্ছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কী কী দুর্বলতা আছে, তাও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আলাউদ্দীন মোহাম্মদ বলেন, ‘তাদের দলের অভিনবত্ব হবে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেয়ালে দেয়ালে যে সংবিধান লেখা হয়েছে, সেটির প্রতিফলন থাকবে। প্রতিটি কমিটিতে আন্দোলনে আহত এবং শহীদদের পরিবার সদস্যদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাখা হবে। মেনিফেস্টোতে রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের পথরেখা থাকবে। আগামী দিন আমাদের রাজনীতি আবর্তিত হবে ২৪ দফার ভিত্তিতে।
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন এতে থাকবে। সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য, বাংলাদেশকে রিপাবলিক হিসেবে গড়ে তোলার ভিত্তি এখানে প্রতিফলিত হবে।’
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com