ডিমের বাজার সামাল দিতে নতুন কৌশল
ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পূর্বে নির্ধারিত মুরগির ডিমের দাম বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিম উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে ডিম ব্যবসায় মধ্যস্বত্বভোগী দালালদের দৌরাত্ম্য রোধে সরাসরি পাইকারদের কাছে ডিম পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া পাইকারি বাজার ছাড়াও রাজধানীর বড় বাজারগুলোতে উৎপাদকরা ভোক্তার কাছে সরাসরি ডিম বিক্রি করতে পারবেন। সভায় জানানো হয়, পরীক্ষামূলকভাবে আগামী দুই সপ্তাহ ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি তেজগাঁও ও কাপ্তান বাজারে ডিলারদের কাছে সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্যে ডিম সরবরাহ করবে। পাশাপাশি প্রতিদিন ডিমের মূল্য ভোক্তা-সাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রচারের জন্য গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বৈঠক শেষে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আজ বুধবার থেকে সারাদেশে উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম কিনতে খরচ করতে হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।
ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যাতে বৃদ্ধি না পায় এবং সরবরাহ যেন স্বাভাবিক থাকে সে লক্ষ্যে সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করবে বলে জানান তিনি।
এদিকে ডিমের নির্ধারিত দাম বাস্তবায়ন করতে বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এরপরও দাম কমেনি। উল্টো তেজগাঁও আড়তের ব্যবসায়ীরা ডিম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেক খুচরা বিক্রেতারাও গতকাল দোকান বন্ধ রেখেছেন অথবা, বিক্রির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।
চট্টগ্রামে আড়তে তালা, দুই দিন ধরে ডিম বিক্রি বন্ধ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে দুদিন ধরে আড়তে তালা দিয়ে ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল থেকে নগরীর পাহাড়তলী ও স্টেশন রোডে বন্ধ আড়তে ব্যবসায়ীদের আর দেখা মিলছে না। নেতৃস্থানীয় আড়তদাররা মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়েছেন। কয়েকটি আড়তে কর্মচারীদের দেখা গেলেও তারা ডিম বিক্রি করছেন না। সরকারি দামে ডিম কেনাবেচা করতে না পারার অজুহাত দেখিয়ে তারা আড়ত বন্ধ রেখেছেন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ব্রয়লার মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। এতে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা দর নির্ধারণ করা হয়। এ হিসেবে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম হয় ১৪২ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এখন ১৭০-১৮০ টাকায় ডিম বিক্রি হচ্ছে।
কিন্তু বাজারে সরকারের বেঁধে দেওয়া এই দামে ডিম মেলেনি। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পাইকারি বাজার বা আড়ত থেকেই তাদের ডিম কিনতে হচ্ছে ডজনপ্রতি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। এ অবস্থায় তাদের ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি ছাড়া উপায় নেই।
আড়তে দাম বাড়তির কারণ প্রসঙ্গে পাহাড়তলী ডিম আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কুর লিটন বলেন, উৎপাদন পর্যায়ে সরকারি দর হচ্ছে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা। আমাদের জন্য সরকার নির্ধারিত দাম ১১ টাকা ০১ পয়সা। আর খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিমের দাম ১১ টাকা ৮৬ পয়সা বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমাদের ডিম কিনতে হচ্ছে ১২ টাকা ৮০ পয়সা দরে। তিনি বলেন, বেশি দামে ডিম কিনে বেশি দামে বেচতে গিয়ে জরিমানা ও হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে, তাই ডিম বিক্রি বন্ধ।
চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী বাজার ও স্টেশন রোডে শতাধিক ডিমের আড়ত আছে। এসব আড়তে লাখখানেক ডিম মজুদ আছে। কিন্তু গত দুদিন ধরে আড়তদাররা ডিম বিক্রি করেননি। অধিকাংশ আড়তই তালাবদ্ধ আছে। কিছু আড়তের ভেতরে কর্মচারীদের দেখা গেছে। আড়ত থেকে বিক্রি বন্ধ থাকায় খুচরা বাজারে ডিমের সংকট তৈরি হতে শুরু করেছে।
নগরীর মোমিন রোডের রাজিব স্টোরের মালিক রিপু নাথ বলেন, দুই দিন ধরে পাইকাররা ডিম সরবরাহ করছে না। আমাদের কাছে যা আছে, সেগুলো বিক্রি করছি। ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছি। সাপ্লাই শুরু হলে ডিমের দাম কমবে।
বাজারে ডিমের সংকটকে কৃত্রিম উল্লেখ করে দাম বৃদ্ধির জন্য আড়তদার-পাইকারি ব্যবসায়ীদের দুষছেন এ খুচরা বিক্রেতা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com