ঢাকা, ২২ অক্টোবর, ২০২৪
Banglar Alo

উপদেষ্টা, সমন্বয়কের প্রতিক্রিয়া

Publish : 11:11 PM, 21 October 2024.
উপদেষ্টা, সমন্বয়কের প্রতিক্রিয়া

উপদেষ্টা, সমন্বয়কের প্রতিক্রিয়া

রাজনৈতিক প্রতিবেদক :

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা। তারা বলেছেন, হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরপরই জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের কথা জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। এখন ভিন্ন তথ্য দেওয়ায় তাঁর রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। 

রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ বলেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, এটা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির শপথ লঙ্ঘনের শামিল। তিনি যদি তাঁর বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে তাঁর রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কিনা, তা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে। সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ, তিনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় কী আছে, সে বিষয়ে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে আপিল বিভাগে রেফারেন্স পাঠানো হয়েছিল। এ কথা উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে জানতে চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবং অন্য বিচারপতিরা মিলে একটি মতামত দেন। সেই মতামতের প্রথম লাইনটি হচ্ছে, দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন...। তারপর অন্যান্য কথা। রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এসব কথা। এই রেফারেন্সে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতির স্বাক্ষর আছে।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘এই যে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এই মতামতের ভিত্তিতে একটি নোট আমরা মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে প্রেরণ করি। রাষ্ট্রপতি এই অভিমত দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এর পর তিনি নিজেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, রাষ্ট্রপতি ৫ আগস্ট রাতে নিজের ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এরপর একের পর এক কার্যাবলির মধ্য দিয়ে এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত, তিনি পুরো জাতির কাছে নিশ্চিত এবং পুনর্বার নিশ্চিত করেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন। এখন প্রায় আড়াই মাস পর যদি উনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেননি, এটা এক ধরনের স্ববিরোধিতা হয়। এতে ওনার শপথ লঙ্ঘন হয়েছে। এ পদে থাকার আর ওনার যোগ্যতা আছে কিনা, সে সম্পর্কে প্রশ্ন আসে।

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, আপনার যদি শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা না থাকে বা আপনি যদি গুরুতর অসদাচরণ করেন, তখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আপনি থাকতে পারেন কিনা, সেটা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ সংবিধানে রয়েছে।’

অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘এত কিছুর পর উনি (রাষ্ট্রপতি) এটা কীভাবে বলতে পারেন, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। ...এখন তাঁর স্ববিরোধী কথাবার্তা বলার কোনোরকম সুযোগ নেই। যদি তিনি এ বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে ওনার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কিনা, সেটা আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখতে হবে। এটি উপদেষ্টামণ্ডলীতে আলোচনা হতে পারে। বিষয়টি আলোচনা হওয়ার মতো মনে হচ্ছে।’

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র সরকারের কাছে আছে কিনা– সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতির দপ্তরে থাকার কথা। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, এটি নিয়ে আদালতেও প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। এটি ওনার কাজ। এখন উনি যদি বলেন নেই, তাহলে পদত্যাগপত্র কী করেছেন, ওনাকেই জিজ্ঞাসা করেন।’

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘যদি আপনি আপনার নিজের কথা, পুরো জাতির সামনে বলা কথার স্ববিরোধিতা (করেন), সেটা তো অসদাচরণের পর্যায়ে পড়ে। তখন এই প্রশ্ন আসে, আপনার আসলে মানসিক সক্ষমতা আছে কিনা রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। এ প্রশ্নগুলো আসতে পারে। এই প্রশ্নগুলো আসার সুযোগ তিনি তৈরি করে দিয়েছেন।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘আজ বিভিন্ন জায়গায় যখন দেখি, পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ-আয়োজন করছে, তখন হঠাৎ করে তিনি (রাষ্ট্রপতি) আড়াই মাস পর এমন কথা বললেন কেন, সেটা নিয়ে সমাজে প্রশ্ন আসতে পারে, প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক।’

‘মৌখিকভাবে’ পদত্যাগ 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিনের কাছে ‘মৌখিকভাবে’ পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য দেন তিনি।

ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রপতির কাছে মৌখিকভাবে পদত্যাগ করেছিল স্বৈরাচারী খুনি হাসিনা। পদত্যাগপত্র নিয়ে বঙ্গভবনে যাওয়ার কথা থাকলেও ছাত্র-জনতা গণভবনের কাছাকাছি চলে এলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় খুনি হাসিনা।’

দুই সমন্বয়কের প্রতিক্রিয়া

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘হাসিনাকে উৎখাত করা হয়েছে, একটি অবৈধ সরকারকে জনগণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করেছে। এখানে পদত্যাগপত্রের কোনো ভূমিকা নেই।’

আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের সমকালকে বলেছেন, রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের মাধ্যমে ফ্যাসিস্টকে পুনর্বাসনের চেষ্টা প্রতীয়মান। এমন বক্তব্যের পর তাঁর আর রাষ্ট্রপতি থাকার অধিকার নেই।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার দিনই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।’

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা : তেল আবিবে জরুরি অবস্থা, বেন গুরিয়নে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ শিরোনাম উপদেষ্টা, সমন্বয়কের প্রতিক্রিয়া শিরোনাম যাত্রাবাড়ীতে ‘জেগে’ আছেন শহীদরা শিরোনাম নির্বাচনের দিন ঠিক করে কাজ-কর্ম শুরু করুন: নীরব শিরোনাম গাজায় স্কুলে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ১০ শিরোনাম ব্যারিস্টার সুমন এতদিন কোথায় ছিলেন?