ঢাকা, ২২ অক্টোবর, ২০২৪
Banglar Alo

যাত্রাবাড়ীতে ‘জেগে’ আছেন শহীদরা

Publish : 11:08 PM, 21 October 2024.
যাত্রাবাড়ীতে ‘জেগে’ আছেন শহীদরা

যাত্রাবাড়ীতে ‘জেগে’ আছেন শহীদরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় সড়কের মাঝের জায়গায় দেয়াল তুলে সারি সারি ফলকে লেখা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ৪৮ জনের নাম। এর মধ্যে বাবা ইমন গাজীর নাম লেখা ফলকটি আঙুল উঁচিয়ে একে অপরকে দেখাচ্ছিল ইশা আক্তার (১৪) ও ইফাদ গাজী (৯)। তাদের বোন ছোট্ট ইকরা আক্তার (৩) এদিক-সেদিক মাথা ঘুরিয়ে মানুষের ছবি তোলা দেখছিল। ইমনের স্ত্রী শান্তি আক্তারের কোলে দেড় বছরের ছেলে ইউসুফ গাজী। কেউ একজন তাদের ছবি তুলল। এর পর শান্তি বললেন, ‘শহীদের সম্মান বলে যে কিছু একটা পাওয়া, এটাই প্রথম। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর চার সন্তানকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েছি। সরকারের কেউ যোগাযোগও করেনি।’

গতকাল সোমবার বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, ডেমরা এলাকায় নিহতদের স্মরণে ‘শহীদি ঐক্য চত্বর’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আক্ষেপ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। শহীদ ইমন গাজীর স্ত্রীর মতো আক্ষেপের সুর শোনা গেল অনুষ্ঠানে আসা অনেকের মুখে।

শহীদ পরিবার থেকে শুরু করে স্থানীয় তরুণ ও অ্যাক্টিভিস্ট এবং বিএনপি, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতারাও জানালেন, জুলাইয়ের আন্দোলনে চরম প্রতিরোধ গড়ে তোলার কারণে যাত্রাবাড়ীকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ‘স্ট্যালিনগ্রাদ’ বলা হচ্ছে। তুমুল লড়াই করে যাত্রাবাড়ীবাসী তাদের ত্যাগের প্রমাণ দিলেও তার স্বীকৃতি মেলেনি একদমই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার যাত্রাবাড়ীর অবদান স্বীকার করা তো দূরের কথা, মনেই রাখেনি। অথচ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধটা যাত্রাবাড়ীতে হয়েছে– এ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কার থেকে শুরু করে অভ্যুত্থান-পরবর্তী যা কিছু হয়েছে, তাতে যাত্রাবাড়ীবাসীর অংশগ্রহণ নেই।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের জার্মান নাৎসি বাহিনী রাশিয়ার স্ট্যালিনগ্রাদ শহরে ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর ইতিহাসে শহরাঞ্চলে এত বড় লড়াই আর হয়নি। বাংলাদেশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যাত্রাবাড়ীতেও তেমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ মিলে ছাত্র-জনতার ওপর প্রতিদিন গুলি চালালেও আন্দোলন দমানো যায়নি।

যাত্রাবাড়ীতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া তরুণদের সংগঠন ‘জুলাই বিপ্লব পরিষদ’ শহীদি ঐক্য চত্বর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সংগঠনটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ফাহাদ শাহনেওয়াজ বলেন, ‘শহীদদের যেন কেউ ভুলে না যায়, তাই এটি নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যয়ের দেড় লাখ টাকাই যাত্রাবাড়ীর স্থানীয়রা দিয়েছেন। জন্ম তারিখ, পেশা ও শহীদ হওয়ার দিনসহ ৪৮ জনের নামফলক দিয়ে শহীদি চত্বর স্থাপন করা হয়েছে। নিচে আরও ১২ জনের নাম বসানো হবে কয়েক দিনের মধ্যে। শহীদের সংখ্যা আরও বেশি। সবার বিস্তারিত তথ্য পেলে ওপরে ফলক বাড়ানো যাবে।’

জাস্টিস ফর জুলাইয়ের আহ্বায়ক আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘যাত্রাবাড়ীতে শেখ হাসিনা সরকারের কবর রচনা হয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারেও এখানকার ছাত্র-জনতাকে সম্পৃক্ত করা দরকার। শহীদদের ৩০ লাখ করে টাকা দেবে বলেছে সরকার। কিন্তু তা কবে দেওয়া হবে তার কোনো গাইডলাইন বলেনি।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন– শহীদ মিরাজের বাবা রব মিয়া, শহীদ ইয়াসির সরকারের বাবা ইউসুফ সরকার, আশরাফুল ইসলাম অন্তরের মা হামিদা বানু, শহীদ মো. ইমরানের মা জাহানারা বেগম, শহীদ হাবিবুর রহমানের বড় ভাই মো. নয়ন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রায় ৩০ শহীদের পরিবারের লোকজন একযোগে সাদা-কালো কাপড় সরিয়ে ‘শহীদি ঐক্য চত্বর’ উদ্বোধন করেন। এ সময় স্লোগান ওঠে– আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ।

যাত্রাবাড়ীতে শহীদি ঐক্য চত্বর স্থাপনে প্রথমে পুলিশ বাধা দিয়েছিল; কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দৃষ্টিগোচর হলে সে সমস্যার সমাধান হয়। এ প্রসঙ্গে আরেফিন বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে সবখানে এমন উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শহীদি ঐক্য চত্বরের ছবি হাজারো মানুষ শেয়ার করেছেন। অনেকে লিখেছেন, ‘যাত্রাবাড়ী, আমাদের স্ট্যালিনগ্রাদ’। যাত্রাবাড়ীর মতো করে শহীদি ঐক্য চত্বর স্থাপন করতে চাইছেন অনেকে। চত্বরের ছবি ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে ইসমাইল আহসান নামে একজন লিখেছেন, ‘আমরা কি পারি না উত্তরায় এরকম স্থায়ী কিছু একটা করতে?’

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা : তেল আবিবে জরুরি অবস্থা, বেন গুরিয়নে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ শিরোনাম উপদেষ্টা, সমন্বয়কের প্রতিক্রিয়া শিরোনাম যাত্রাবাড়ীতে ‘জেগে’ আছেন শহীদরা শিরোনাম নির্বাচনের দিন ঠিক করে কাজ-কর্ম শুরু করুন: নীরব শিরোনাম গাজায় স্কুলে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ১০ শিরোনাম ব্যারিস্টার সুমন এতদিন কোথায় ছিলেন?