লেবাননে হিজবুল্লাহর কঠোর প্রতিরোধ
লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ। সেখানে হিজবুল্লাহর সঙ্গে তাদের তুমুল লড়াই চলছে। ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে শতাধিক রকেট নিক্ষেপ করেছে হিজবুল্লাহ। এতে অন্তত সাতজন আহত হন। বিভিন্ন স্থাপনা ও গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হিজবুল্লাহর নতুন নেতা নাইম কাশেম বলেছেন, তাদের সামরিক সক্ষমতা ও নেতৃত্ব অটুট রয়েছে। যেসব পদে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, সেগুলো পূরণ করা হয়েছে। এদিন লেবাননের রাজধানী বৈরুতের অন্তত ১০টি স্থানে বোমা হামলা চালায় আইডিএফ।
হিজবুল্লাহর উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের হাইফা ও ক্র্যায়ট এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার রকেট ছোড়ে হিজবুল্লাহ। আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অন্তত ৮৫টি রকেট ধ্বংস করেছে। তবে কয়েকটি সরাসরি আঘাত হানে। আরও ২০টি ক্ষেপণাস্ত্র লেবানন-ইসরায়েলের সীমান্ত ক্রসিং এলাকায় ছোড়ে হিজবুল্লাহ।
হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইসরায়েলের হামলায় শীর্ষ নেতা নিহত হলেও তাদের নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ এখনও অটুট আছে। সশস্ত্র সংগঠনটির অন্যতম শীর্ষ নেতা নাইম কাসেম প্রথমবারের মতো টেলিভিশন ভাষণে ইসরায়েলের দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, তাদের সামরিক কাঠামো অটুট আছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের উৎস ও সামর্থ্য ভালো অবস্থায়ই আছে। নেতৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ শক্তপোক্ত। গত কয়েক দিনে আমাদের অভিযান কীভাবে বেড়েছে, সে দিকে তাকালে তার প্রমাণ মিলবে।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের যত দিন যাবে, ইসরায়েল তত বেশি বিপদে ফেঁসে যাবে।’ এর আগে ইসরায়েল দাবি করে, দুই সপ্তাহ ধরে চালানো তাদের হামলায় হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়ে পড়েছে।
শীর্ষ নেতা হাসান নাসরাল্লাহসহ কয়েকজন নেতা নিহত হওয়া প্রসঙ্গে নাইম কাসেম বলেন, হিজবুল্লাহর কমান্ড, নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনা বেশ গোছানো। সংগঠনে এখন কোনো পদ শূন্য নেই। পরে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানান তিনি। নাইম কাশেম বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধে অংশ নেয়নি। তারা হত্যায় অংশ নিয়েছে। এ অপরাধে তাদের সঙ্গে আছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। তারা রাজনৈতিকভাবে এবং তাদের গণমাধ্যমের মাধ্যমে সহায়তা না করলে ইসরায়েল এক মাসও টিকতে পারত না। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল হারজি হ্যালেভির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তুমি এবং তোমার বস (বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু) নিশ্চিতভাবে হারতে যাচ্ছো।’
এ প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেছেন, লেবাননের পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, লেবাননের ২০ শতাংশ মানুষ এখন বাস্তুচ্যুত। লেবানন সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এ সংখ্যা এক লাখের বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ডব্লিউএইচও সতর্ক করে বলেছে, লেবাননের বাস্তুচ্যুতরা ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে বসবাস করায় সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে। তারা পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস-এ-এর মতো রোগের প্রাদুর্ভাবের শঙ্কা প্রকাশ করেন।
গাজায় ভয়াবহ হামলা
লেবাননের পাশাপাশি মঙ্গলবার ইসরায়েল গাজায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। সেখানে এক দিনে নারী-শিশুসহ আরও ৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে হামলা হয়েছে। মধ্যগাজায় বিমান হামলায় অন্তত ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। মোহাম্মদ মাইয়াৎ নামের এক ব্যক্তি সিএনএনকে বলেন, হামলায় তিনি একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছেন। রকেট পড়ল আর লোকজনকে টুকরো টুকরো করে ফেলল। গত এক বছরে হত্যার পাশাপাশি বারবার লোকজনকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে। গাজার স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা মার্সি কর্পসের এক কর্মী জানান, যুদ্ধ শুরুর পর তিনি এক ডজনের বেশিবার স্থানান্তরিত হয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবরের পর গাজায় মৃতের সংখ্যা ৪১ হাজার ৯৬৫ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ৯৭ হাজার ৫৯০ জন। আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। জাবালিয়ায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের গুলি করে হত্যা করছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এ অবস্থায় হামাসের সশস্ত্র গ্রুপ কাশেম ব্রিগেড দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলের এক সেনাকে হত্যা করেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com