রোডম্যাপের খসড়া তৈরি
পুলিশ সংস্কার কমিশনের খসড়া রোডম্যাপ এরই মধ্যে তৈরি করা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে পুলিশ ব্যবহার না করার বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্ব দেবে কমিশন। জনবান্ধব, জবাবদিহিতামূলক ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষভাবে পরিচালনার জন্য আইনের ধারাও পরিবর্তন হবে। আগামী এক মাসের মধ্যেই রোডম্যাপ অনুযায়ী প্রাথমিক কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে। তবে জনবান্ধব পুলিশ তৈরিতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
পুলিশ সংস্কারের বিষয়ে সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা আমাদের সময়কে বলেন, পুলিশকে যাতে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করা হয় সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আইনের কিছু পরিবর্তন দরকার আছে। পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে স্বাধীন কোনো সংস্থার মাধ্যমে বিচার করা যায় কি না, সেই বিষয়টি দেখতে হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে কীভাবে পুলিশে নিয়োগ দেওয়া যায়, সেই বিষয়টিও প্রধান্য দিতে হবে।
পুলিশ সংস্কার কমিশন সূত্র জানায়, পুলিশের আইনটি ১৮৬১ সালের। পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) ১৯৪৩ সালের। ব্রিটিশ উপনিবেশিক আইন দিয়ে চলছে পুলিশ। গণতান্ত্রিক দেশে এমন একটি পুলিশ বাহিনীর পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যাদের মুখ্য উদ্দেশ্য হবে জনগণকে সেবা দেওয়া।
এ জন্য কিছু জায়গায় আধুনিকায়ন করা উচিত। পুলিশের বিষয়ে প্রচুর আইনের বই এবং নীতিমালা সংগ্রহ করা হয়েছে। একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। যে যে ধারা পরিবর্তন বা সংশোধন লাগবে, সেসব বিষয় নিয়ে সুপারিশ থাকবে। এ জন্য জনসাধারণ, পুলিশ কর্মকর্তা, ছাত্র-শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীদের পরামর্শ চাইবে কমিশন।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসে দ্বিতীয় বৈঠক করেন পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্যরা। কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন বলেন, পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করার বিষয়ে গুরুত্ব দেবে কমিশন। জুলাই-আগস্টের মতো রক্তাক্ত অধ্যায় যেন আর না হয়, তা নিশ্চিতে সুপারিশ করা হবে। পুলিশকে জনবান্ধব, জবাবদিহিমূলক ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করাই কমিশনের লক্ষ্য। এ জন্য পুলিশ আইনের কোন ধারা পরিবর্তন করা হবে, সেটি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। সিআইডি ও এসবি কীভাবে কাজ করছে, কোনো ভুল আছে কি না, থানায় মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি আছে কি নাÑ সেগুলো খতিয়ে দেখে সুপারিশ করবে কমিশন।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক আমাদের সময়কে বলেন, পুলিশ সবচেয়ে বেশি বিতর্কিত হয়েছে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের কারণে। বিরুদ্ধ মত দমনের জন্য পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে। সংস্কারের মূল্য লক্ষ্যই হতে হবে পুলিশ রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য ব্যবহৃত হবে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এখনও ১৮৬১ সালের আইন দ্বারা পুলিশ পরিচালিত হয়। আমরা স্বাধীন দেশে, একটা স্বাধীন আইন প্রত্যাশা করি। সেখানে আমাদের দেশের অপরাধের ধরন এবং সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে আইনগুলো সাজাতে হবে। পুলিশের অপরাধের ক্ষেত্রে বাহিনীর মধ্যে যে বিচারব্যবস্থা, তার স্বচ্ছতা নিয়েও মানুষের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। তাই এখন পুলিশের অপরাধ তদন্তের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার জন্য একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি তদন্ত কমিটি থাকা উচিত। সেখানে পুলিশের কর্মকা- ও আইন সম্পর্কে অবগত বিভিন্ন পেশার মানুষ রাখতে হবে।
ড. তৌহিদুল হক বলেন, জুলাই বিপ্লবে দেখেছি, মাঠ পুলিশ ঊর্ধ্বতনদের অবৈধ আদেশের চ্যালেঞ্জ করতে পারেন না। এখন অধঃস্তন পুলিশ সদস্য যদি বেআইনি কোনো আদেশ দেন, তাহলে সেটি চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ যেন থাকে আইনে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সরকার বদল হলেই পুলিশ বদলে যাবে না, এই কাঠামো পুলিশের মধ্যে দাঁড় করাতে হবে। তবে শেষ কথা হচ্ছে, রাজনীতি ভালো না হলে, কোনো কিছুই ভালো হবে না। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকেও পুলিশের সংস্কার মেনে নেওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com