চেন্নাইয়ে হাসানঝড় থামিয়ে অশ্বিনদের প্রতিরোধ
চেন্নাই জেগেছিল ঘুম ঘুম চোখে। সূর্যের দেখা নেই, মেঘলা আকাশের নিচে সমুদ্রের হীমশীতল হাওয়া। টেস্ট ম্যাচ খেলার জন্য একেবারে আদর্শ পরিবেশ। সতেজ উইকেটের আর্দ্রতা আর গুমোট আবহাওয়ার সুবিধা কাজে লাগাতে টস জিতে তাই ফিল্ডিং নিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। চেন্নাইয়ে যেটা গত ৪২ বছরে ২১ টেস্টে দেখা যায়নি। সতেজ সকালের সুবিধা ভালোভাবে কাজেও লাগান বোলাররা। হাসান মাহমুদ দারুণ বোলিং করে ভারতের ড্রেসিংরুমে ভীতি ছড়াতে সক্ষম হন। নতুন বলে দুর্দান্ত আউট সুইং করতে থাকেন। ৫ ওভারের ওই স্পেলে ৬ রানে ভারতীয় টপঅর্ডারের তিন ব্যাটারকে একাই শিকার করে নেন। ৩৪ রানের মধ্যে রোহিত শর্মা, শুভমান গিল ও বিরাট কোহলিকে হারিয়ে ঘাবড়ে যায় ভারত। যদিও নিজেদের কিছু ভুল ও প্রাকৃতিক কারণে দিন শেষে হিসাব উল্টে গেছে। বাংলাদেশের বোলারদের ম্লান করে এগিয়ে গেছে ভারত। রবীন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্র অশ্বিনের ১৯৫ রানে অপরাজিত জুটি বড় স্কোরের ভীত দিয়েছে। ৬ উইকেটে ৩২৯ রান ভারতের। উইকেট ও রানের যোগ-বিয়োগ করা হলে সাদা চোখে উভয় দলকে সমান কৃতিত্ব দিতে চাইবেন। কিন্তু বাস্তবের সমীকরণ ভিন্ন। ছন্দটা চলে গেছে ভারতের হাতে। টসের আগে দীনেশ কার্তিক এক বিশ্লেষণে বলেছেন, টস জিতলে ফিল্ডিং নেবে বাংলাদেশ। ভারত জিতলে নেবে ব্যাটিং। কার্তিকের ভাষায়, ‘লাল মাটির পিচে বাউন্স ও টার্ন দুটোই থাকবে।’ তবে এদিন হাসান মাহমুদের সঙ্গে অন্যপাশ থেকে ঝড় তুলতে পারেননি তাসকিন। এলোমেলো বোলিংয়ে প্রথম স্পেলে খরচ করেন ২৩ রান। তবে নাহিদ রানা তাঁর প্রথম বলটিই ১৪৭ কিলোমিটার গতিতে করেন। তিন পেসার দিয়ে টানা ১৮ ওভার করানোর পর স্পিনার মিরাজকে বোলিংয়ে আনেন শান্ত। তবে ভারতের চতুর্থ উইকেটে ৬২ রানের জুটি ভাঙেন সকালের সূর্য হয়ে ওঠা সেই হাসান মাহমুদ। পন্তকে লিটনের গ্লাভসে পাঠানোর পর জয়সোয়াল তাঁর ফিফটি পূরণ করেন। ভারতের ফর্মে থাকা এই ব্যাটার পরাস্ত হন নাহিদ রানার ১৪৮ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার শর্ট ডেলিভারিতে স্পিলে খোঁচা মেরে। পরের ওভারেই লোকেশ রাহুলকে ফেরান মিরাজ। ৬ উইকেটে ভারতের স্কোর তখন ১৪৪, কে জানত দিনের বাকিটা সময় আর উইকেটেরই দেখা মিলবে না। জাদেজা-অশ্বিন জুটি ভাঙতে ইনিংসের ৫২তম ওভারে সাকিব প্রথম বোলিংয়ে আসেন। তবে প্রথম ওভারেই ১১, সব মিলিয়ে ৮ ওভারে ৫০ রানের খরচে উইকেট শূন্য থাকেন সাকিব।
হাসানের বিশ্বাস, বোলিং শৃঙ্খলা কাজে লাগিয়ে আজই ফিরবেন তারা। ভারতকে অলআউট করবেন ৪০০ রানের নিচে। ব্যাটাররা যাতে লড়াই করার মানসিকতা নিয়ে খেলতে পারেন।
বাংলাদেশ প্রথম দিন দুই সেশনে রাজ করেছে। ছয় উইকেটে ১৭৬ রানে চা পানের বিরতিতে গিয়েছিল। জাদেজা ৭ ও অশ্বিন ২১ রানে অপরাজিত ছিলেন। দিন শেষে জাদেজা ৮৬, অশ্বিন ১০২ রানে অপরাজিত। টেস্টে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি অশ্বিনের। বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে মূল এই জুটির কাছে। টাইগার বাহিনীর প্রথম দুই সেশনের সাফল্যকে আড়াল করে দিয়েছেন তারা শেষ সেশনে। হাসানের ভাষায় বোলিংয়ে শৃঙ্খলা ছিল না। এ ছাড়া সময় গড়ানোর সঙ্গে উইকেটও ব্যাটিংবান্ধব হয়ে গেছে। বোলারদের ভুল আর কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই ইনিংস মেরামত করে নিতে পেরেছে ভারত। গেমের ছন্দটা স্বাগতিকদের হাতে চলে গেছে বলে দাবি হাসানের। আজ যা পুনরুদ্ধারে নামবেন নব-উদ্যমে।
এই বৈচিত্র্যের কারণেই টেস্ট ক্রিকেটে রোমাঞ্চ ছড়ানো আনন্দ থাকে। সকালের সূর্য যেমন সব সময় দিনের সঠিক পূর্বাভাস দেয় না, তেমনি টেস্ট ক্রিকেটও। যে পেসাররা প্রথম দুই সেশনে আগুন ঝরা বোলিং দিয়ে ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামালেন, তারাই ধুঁকলেন শেষ বিকেলে।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com