ঢাকা, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Banglar Alo

ওবায়দুল কাদেরের সামনেই নিখিল-কচির বাদানুবাদ

Publish : 09:14 AM, 26 July 2024.
ওবায়দুল কাদেরের সামনেই নিখিল-কচির বাদানুবাদ

ওবায়দুল কাদেরের সামনেই নিখিল-কচির বাদানুবাদ

রাজনৈতিক প্রতিবেদক :

কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে বাদানুবাদে জড়ালেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এমপি ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি। বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে দলের সমন্বয় বৈঠকে এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা ও নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপটে দলীয় কর্মকৌশল ঠিক করতে আওয়ামী লীগের ধারাবাহিক বৈঠকের তৃতীয় দিনে এ সভা হয়। সেখানে তৃণমূল নেতারা সহিংসতা প্রতিরোধে দলীয় এমপি ও নেতাদের পাশে না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। কেন্দ্রীয় নেতারা উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খান। 

উপস্থিত কয়েকজন নেতা সমকালকে জানান, এ পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে বৈঠক শেষ করার পর ওবায়দুল কাদের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের নিয়ে তাঁর জন্য নির্ধারিত কক্ষে বসেন। এ সময় ঢাকা-১৪ আসনের এমপি মাইনুল হোসেন খান নিখিল তাঁর এলাকায় সন্ত্রাস-সহিংসতা প্রতিরোধে দলের কোনো নেতাকে পাশে পাননি বলে অভিযোগ করেন। কয়েকজন নেতার নামও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর এ কথায় ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি জোরালো প্রতিবাদ জানালে দুই নেতার মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। কচি এক পর্যায়ে নিখিলকে ‘বেয়াদব’ আখ্যা দিয়ে ‘মাস্তানের মতো আচরণ না করার’ জন্য বলেন। এ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফসহ অন্য নেতারা তাদের শান্ত করেন। 

বৈঠকে ঢাকা-১৪, ঢাকা-১৫ ও ঢাকা-১৬ আসনের এমপিসহ এসব আসনভুক্ত থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ও দলীয় জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে এই তিন আসনের মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুলের কয়েকটি এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটে। মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে।    

যেভাবে শেষ হলো বৈঠক

বৈঠকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য অন্তত ৩০ জন নেতার তালিকা করা হয়। তাদের মধ্যে পাঁচজন বক্তব্য দেওয়ার পরই ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে বৈঠকটি দ্রুত শেষ করতে হয়েছে বলে নেতারা জানান। 

ওবায়দুল কাদেরের সূচনা বক্তব্যের পর রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বক্তব্য দেন মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক, উত্তরের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার বাপ্পী, কাফরুল থানার বিদায়ী সভাপতি জামাল মোস্তফা, পল্লবী থানার বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম, পল্লবীর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তাইজুদ্দিন বাপ্পী, ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী সভাপতি আশিকুল ইসলাম আশিক এবং ৯৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক আমির উদ্দিন। 

বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন নেতা জানান, আমির উদ্দিন তাঁর বক্তব্যে ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদারের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতারা সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠে তৎপর ছিলেন বলে দাবি করেন। এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ওই এলাকার তৃণমূল নেতারা হইচই শুরু করেন। তাদের বক্তব্য ছিল, সন্ত্রাস-সহিংসতা এবং হামলা-ভাঙচুর মোকাবিলায় কামাল মজুমদারকে পাশে পাওয়া যায়নি। অনেক নেতাও ঘর থেকে বের হননি। এ সময় দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম মাইক নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।

জামাল মোস্তফা বলেন, দলের এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী নেতাকর্মীর সমন্বয়হীনতা। ঢাকা মহানগরীতে থানা-ওয়ার্ড কমিটি না থাকায় কোনো সমন্বয় থাকছে না। কমিটি থাকলে এত সমস্যা ও দ্বন্দ্ব-কোন্দলও হতো না। সংকটে নেতাকর্মীকে মাঠে নামানো যেত।

এ সময় মান্নান কচি তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে কথা বলার আহ্বান জানান। তখন থানা-ওয়ার্ড নেতারা হট্টগোল করেন।

তাইজুদ্দিন বাপ্পী সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় ঢাকা-১৬ আসনের এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহর তৎপরতা তুলে ধরতে গিয়ে অন্য নেতাদের তোপের মুখে পড়েন। বাপ্পীর দাবি ছিল, ইলিয়াস লন্ডনে অবস্থান করলেও টেলিফোনে এলাকার পরিস্থিতির খোঁজ-খবর রেখেছেন। তবে অন্য নেতারা তাঁর কোনো ভূমিকা ছিল না বলে দাবি করে চিৎকার-চেঁচামেচি করেন।

সারোয়ার আলম পল্লবীর সব নেতাকর্মী সন্ত্রাস প্রতিরোধে মাঠে নামেন বলে দাবি করে বক্তব্য দিলে অন্য নেতারা ক্ষুব্ধ হন। তারা বলেন, ‘আপনি নিজেই তো মাঠে ছিলেন না।’ এ সময় তাঁকে লক্ষ্য করে অন্যরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান শুরু করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দলের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম মাইক নিয়ে সবাইকে চুপ করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দলের কোথায় কোথায় সমস্যা, আমরা বুঝতে পারছি। প্রয়োজনে থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে বসা হবে।

এর পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে সভার সভাপতি ওবায়দুল কাদের বৈঠকের সমাপ্তি ঘোষণা করে বলেন, নেতারা কারা কারা মাঠে ছিলেন আর কারা ছিলেন না, সব তথ্য দলের কাছে আছে। দলের পদ নিয়ে খারাপ সময়ে নিজেকে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখবেন, এটা হতে পারে না। 

তিনি বলেন, এবারের সন্ত্রাসী হামলার টার্গেট ছিল গণভবন। গণভবনে হামলা করে শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ছিল। আর আপনারা এভাবে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কলহ করছেন? কারা মাঠে ছিলেন না, সবার তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা ধরে ধরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠকস্থল ত্যাগ করেন তিনি।

তবে বৈঠক শেষে বের হওয়ার সময় আরেক দফা তৃণমূল নেতাদের তোপের মুখে পড়েন মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি। এ সময় তৃণমূল নেতারা সাম্প্রতিক সহিংসতা প্রতিরোধে মাঠে থাকা নেতাদের তালিকা সঠিকভাবে প্রণয়নের দাবি জানানোর পাশাপাশি যারা মাঠে ছিলেন না, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপের দাবি জানান।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সবুর, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য তারানা হালিম, আনোয়ার হোসেন, ঢাকা জেলা সভাপতি বেনজীর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ, ঢাকা-১৫ আসনের এমপি কামাল আহমেদ মজুমদার প্রমুখ।

ভেঙে দেওয়া হলো ঢাকার ২৭ কমিটি

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সন্ত্রাস-সহিংসতা প্রতিরোধে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে না থাকার অভিযোগে ভেঙে দেওয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অন্তর্গত ২৭টি ইউনিট কমিটি। 

গতকাল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সূচনা কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা-১৩ আসনের তিনটি থানা ও আটটি ওয়ার্ড নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা থেকে এসব কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পদক আজিজুল হক রানা এবং থানা-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুর, আদাবর ও শেরেবাংলা নগর থানার ২৭টি ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা সন্ত্রাস-সহিংসতা মোকাবিলায় সরাসরি অংশ নেননি বলে অভিযোগ ওঠে। এজন্য এসব ইউনিট কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। 

শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসনের অন্তর্গত আটটি ওয়ার্ডের ১২৬ ইউনিট কমিটির মধ্যে অনেকগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কতটি কমিটি ভাঙা হয়েছে, সেটা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। গণনা করে বলতে পরে পারব।’  

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শিরোনাম ব্যাংক থেকে যত খুশি তোলা যাবে নগদ টাকা শিরোনাম নিউইয়র্কে ইউনূস-মোদির বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব শিরোনাম উপকূলে ঝড়ের শঙ্কায় তিন নম্বর সতর্ক সংকেত শিরোনাম স্টোরিতে কমেন্ট করার সুবিধা চালু করলো ইনস্টাগ্রাম শিরোনাম হাসপাতালে দীপিকা, আজই হতে পারেন সন্তানের মা!