ঢাকা, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Banglar Alo

তীব্র গ্যাস সংকটে ব্যাহত উৎপাদন, দুঃশ্চিন্তায় শিল্পমালিকরা

Publish : 07:16 AM, 05 July 2024.
তীব্র গ্যাস সংকটে ব্যাহত উৎপাদন, দুঃশ্চিন্তায় শিল্পমালিকরা

তীব্র গ্যাস সংকটে ব্যাহত উৎপাদন, দুঃশ্চিন্তায় শিল্পমালিকরা

নিজস্ব প্রতিনিধি :

তীব্র গ্যাস সংকটে শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। মুখ থুবড়ে পড়েছে অনেক কারখানা। উৎপাদনমুখী কারখানাগুলোর উৎপাদন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। শিল্পমালিকরা বলছেন, সময়মতো পণ্য দিতে না পারায় বাতিল হচ্ছে ক্রয়াদেশ। পণ্য না পেয়ে অনেক গ্রাহক চলে যাচ্ছেন অন্য জায়গায়। 

সংশ্লিষ্টদের মতে, একটি কারখানার বয়লার চালানোর জন্য প্রতি ঘনফুটে ১৫ পিএসআই গ্যাসের চাপ দরকার হলেও সে চাপ কমে প্রতি ঘনফুটে এক থেকে দুই পিএসআইতে দাঁড়িয়েছে। কোথাও কোথাও শূন্যে নেমেছে। এভাবে চলতে থাকলে অনেক শিল্পকারখানা একেবারেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় মালিকরা।

দীর্ঘদিন গ্যাস সংকটে ভুগছে নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জে অবস্থিত অনন্ত পেপার মিলস লিমিটেড। কোম্পানিটির কারখানায় গ্যাসের চাপ নেমে এসেছে ১-দেড় পিএসআইতে। যার ফলে চাহিদার আলোকে কারখানার উৎপাদান বন্ধ হয়ে গেছে অনেকাংশেই। গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় প্রয়োজনীয় উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। 

দীর্ঘদিন গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ রাখতে হয়েছে কোম্পানিটির কয়েকটি ইউনিট। দুটি ইউনিট কোনো রকমে চললেও গ্যাসের চাপ না থাকায় ঠিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে না। চাহিদার বিপরীতে গ্যাস নেমে আসছে ৩০ শতাংশে। এরফলে সঠিক সময়ে পণ্য না দিতে পারায় গ্রাহকরা চলে যাচ্ছে অন্য জায়গায়। 

গ্যাস সংকট নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনন্ত পেপার মিলসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এমদাদুল হক সেলিম সোনালী নিউজকে বলেন, ‘আমি এই কোম্পানিতে এসেছি দেড় মাস হলো, একদিনও ঠিক মতো গ্যাস পাইনি, এতো সংকট। শুনেছি আমি আসার আগেও এমন সমস্যা ছিল। গ্যাস সংকট নয়, বলা যায় তীব্র সংকট। ক্লায়েন্টকে পণ্য সরবারহ করতে পারছি না। বাধ্য হয়ে সব ইউনিট বন্ধ করে মাত্র একটি ইউনিট চালু রেখেছি। এভাবে চললে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘যেখানে চাহিদার আলোকে গ্যাস প্রয়োজন ১০০ শতাংশ, সেখানে পাচ্ছি ৩০ শতাংশ। তাহলে কিভাবে ইউনিট চালু রাখবো। গ্যাসের চাপ নেমে এসেছে ১-২ পিএসআই, যা দিয়ে কারখানা চালু রাখা সম্ভব না। পণ্যের অর্ডার চাহিদা থাকা সত্বেও উৎপাদন করতে পারছি না। দিন দিন ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।’ 

শিল্পমালিকরা বলছেন, শিল্পকারখানায় গ্যাস সংকট নতুন নয়। গত এক মাস বা তার চেয়েও বেশি সময় চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ মিলছে না। বেশ কিছুদিন ধরে এ সংকট তীব্র হয়ে পড়েছে কারখানাগুলোতে।এতে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পের উৎপাদন।শতভাগ গ্যাস না পাওয়ায় এখন বিকল্প উপায়ে কারখানায় উৎপাদন চালু রাখতে হচ্ছে বলে জানান তারা। এর ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। 

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘টেক্সটাইল, স্পিনিং এবং ডাইং এগুলো তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা চলে। গ্যাস সংকটের কারণে এ খাতে কোথাও কোথাও ৫০ শতাংশ আবার কোথাও ৭০ শতাংশ পর্যন্ত নেমে আসে উৎপাদন।’

তথ্য মতে, দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা অনুযায়ী ১ হাজার ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি মেটানো হয় এলএনজি দিয়ে। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের একটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শিল্পকারখানায় গ্যাস-সংকট বেড়েছে।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সোনালী নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানোর আগে আমরা ভালোই গ্যাস পেতাম কিন্তু দাম বাড়ানোর পর দিনে বলেন আর রাতে, কোনো সময়েই ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছি না। এতে সব মেশিন চালানো যাচ্ছে না। গ্যাস-সংকটের কারণে সুতা ও কাপড় ডাইংয়ের কাজ ব্যাহত হওয়ায় কাঁচামাল সময়মতো কারখানায় আসছে না। এতে প্রতিটি ক্রয়াদেশের বিপরীতে সরবরাহ বিলম্বিত হচ্ছে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘ব্যবসা বাণিজ্যের প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো গ্যাস, দ্বিতীয় এনবিআর এবং তৃতীয় হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এতো কিছুর মধ্যে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গ্যাস চাহিদার আলোকে তো পাচ্ছিই না, আর পাবো কিভাবে আমাদের দেশে গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে কি পর্যাপ্ত গ্যাস কূপ খনন হচ্ছে?

তিনি বলেন, ‘সরকার দিন দিন আমাদের সুবিধাগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে কিন্তু তার বিপরীতে কোনো উপায় বের করছে না। এজন্য আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। আমরা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছি না। কারণ বায়াররা যে রেট দেয় তার সাথে আমাদের খরচ মিলছে না। আবার আমরা যে দাম দেই তা বায়ারদের পছন্দমত হচ্ছে না। বিদেশি অনেক বায়ারের ক্রয়াদেশ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো আছে তা শেষ হলে একদম খালি হয়ে যাবে ক্রয়াদেশ। এতে করে শুধু আমরাই না দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

দেশে গ্যাসের সংকট নতুন কোনো বিষয় নয়। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস-সংকটে ভুগছে শিল্প খাত। এই সংকট দেখিয়েই সরকার গ্যাস আমদানির পথে হেঁটেছিল। ২০১৮ সালের শেষ দিকে দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি শুরু হয়। 

কিন্তু ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যায়। একপর্যায়ে সরকার চড়া দামের কারণে বৈশ্বিক খোলাবাজার (স্পট মার্কেট) থেকে গ্যাস কেনা বন্ধ করে দেয়। এখন অবশ্য এলএনজির দাম অনেক কমে গেছে।

গ্যাসের স্থানীয় উৎপাদন না বাড়ায় গ্যাস খাত এরই মধ্যে বিদেশনির্ভর হয়ে পড়েছে। এলএনজি আমদানি করে তা গ্যাসে রূপান্তরের মাধ্যমে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে একটি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি মেরামতের জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়েছে।

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম শিরোনাম ব্যাংক থেকে যত খুশি তোলা যাবে নগদ টাকা শিরোনাম নিউইয়র্কে ইউনূস-মোদির বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব শিরোনাম উপকূলে ঝড়ের শঙ্কায় তিন নম্বর সতর্ক সংকেত শিরোনাম স্টোরিতে কমেন্ট করার সুবিধা চালু করলো ইনস্টাগ্রাম শিরোনাম হাসপাতালে দীপিকা, আজই হতে পারেন সন্তানের মা!