ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘বাংলাদেশ’
বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম বা ত্রিপুরা রাজ্যের লোকসভা, অথবা বিধানসভা নির্বাচনে অবৈধ অনুপ্রবেশ, সীমান্ত সংক্রান্ত অপরাধ, সিএএ অথবা এনআরসি সংক্রান্ত ইস্যুতে বারবার আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের দক্ষিণের রাজনীতিতে সেভাবে কখনোই বাংলাদেশকে অযাচিতভাবে টেনে এনে ভোটবাজারে প্রাসঙ্গিক করতে পারিনি ভারতীয় রাজনীতিবিদরা। সম্প্রতি সেই রেকর্ড ভেঙেছে।
তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের অদূরে ভারত মহাসাগরের উপর অবস্থিত কাতচাথিভু দ্বীপ শ্রীলঙ্কার কাছে হস্তান্তর ইস্যুতে তামিলভূমসহ গোটা দক্ষিণের রাজনীতিতে বাংলাদেশকে টেনে এনেছেন ভারতীয় রাজনীতিবিদরা।
১৯৭৪ সালে কাতচাথিভু দ্বীপটি শ্রীলঙ্কাকে হস্তান্তর করেছিল ভারত সরকার। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সরকারি নথিপত্রে বলা হয়, ওই দ্বীপে বসবাসকারী তামিলদের স্বার্থের কথা ভেবেই শ্রীলঙ্কাকে সেটি হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে ওই দ্বীপ থেকে প্রায় ছয় লাখ তামিলভাষী মানুষ ভারতে আশ্রয় পান। তারা ভারতের নাগরিক হতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ৫০ বছর আগের এই দীর্ঘ হস্তান্তর ইস্যু সম্প্রতি খুঁচিয়ে তুলে নির্বাচনের আগে তামিল জাত্যাভিমান উসকে দিতে শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
ভোটের ময়দানে কংগ্রেসকে টার্গেট করতে দক্ষিণের প্রকাশ্য জনসভায় বারবার নরেন্দ্র মোদী প্রশ্ন তুলেছেন, কেন ওই দ্বীপ শ্রীলঙ্কাকে দেওয়া হয়েছিল? তাঁর বক্তব্য, দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে ভারতের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হয়েছে।
এমন অবস্থায় মোদির অভিযোগের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা জয়রাম রমেশ টেনে এনেছেন বাংলাদেশকে। তিনি তুলে আনেন ২০১৫ সালের এনডিএ আমলে ভারত বাংলাদেশ স্থল সীমান্ত চুক্তি ও ছিট মহল হস্তান্তর ইস্যু। রমেশের অভিযোগ, এই চুক্তির মাধ্যমে লাভবান হয়েছে একমাত্র বাংলাদেশ ।
জয়রাম রমেশ বলেন, এই চুক্তির ফলে ভারতকে ১০ হাজার ৫১ একর ভারতীয় ভূখণ্ড হারাতে হয়েছে। ভারতের মোট ১৭ হাজার ১৬১ একর জমির মধ্যে এসেছে মাত্র ৭ হাজার ১১০ একর। সে সময় কংগ্রেস কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে শিশুসুলভ অভিযোগ তোলেনি।
তিনি আরও বলেন, কংগ্রেস দল সংসদের উভয় কক্ষে বিলটিকে সমর্থন করেছিল।
এর আগে সিএএ বা এনআরসি চালু হলে অবৈধ মুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সিল করা হবে, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন - ইত্যাদি বেশকিছু বিতর্কিত ইস্যুতে নির্বাচনের সময় বক্তব্য রেখে বিতর্ক বাড়িয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা প্রমুখ।
ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশেরই নির্বাচন পর্যবেক্ষক ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডক্টর দেবজ্যোতি চন্দ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে ভারত। কারণ নির্বাচনে ভারতীয় হস্তক্ষেপ ইস্যু। সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ভারতের নির্বাচনগুলোতেও বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের নির্বাচন হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ নেই। তবে নির্বাচনে এগিয়ে এলেই ভারতের রাজনীতিবিদদের মুখে মুখে ঘোরে বাংলাদেশের নাম। কখনো সাফল্যের বড়াই করতে কখনো আবার ব্যর্থতা ঢাকতে, বলা যায় ভারতীয় রাজনীতিবিদ দের সাফল্যের চাবিকাঠি খুঁজতে সফট টার্গেট এখন বাংলাদেশ।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com