ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪
Banglar Alo

শাহ আমানত বিমানবন্দর : স্বর্ণ পাচার থেকে রিয়াল, সব চক্রেই কর্মচারীরা জড়িত

Publish : 10:23 AM, 28 December 2024.
শাহ আমানত বিমানবন্দর : স্বর্ণ পাচার থেকে রিয়াল, সব চক্রেই কর্মচারীরা জড়িত

শাহ আমানত বিমানবন্দর : স্বর্ণ পাচার থেকে রিয়াল, সব চক্রেই কর্মচারীরা জড়িত

নিজস্ব প্রতিবেদক :

এক খুনের তদন্তে প্রকাশ্যে এলো চট্টগ্রাম সিভিল এভিয়েশন কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের রিয়াল চোরাচালানের ঘটনা। চোরাচালানের টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে জড়িয়ে পড়েন খুনোখুনিতে। এক কর্মচারীকে নিজ বাসায় খুন করেন বাকিরা। এর আগে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে স্বর্ণবার চোরাচালানে সিভিল এভিয়েশন কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও এবার প্রথম রিয়াল চোরাচালানে নাম জড়ায়। চুক্তিতে তারা রিয়াল, স্বর্ণবার বাইরে থেকে নিয়ে বিমানবন্দরে ঢুকিয়ে দিতেন এবং ভেতর থেকে বিমানবন্দরের বাইরে পাচার করতেন।

সর্বশেষ ৩৭ হাজার রিয়াল শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দুবাই পাচার করার চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু এক পক্ষ রিয়াল আত্মসাৎ করার জেরে আরেক পক্ষ খুন করে বসে। কিলিং মিশনে থাকা চারজনের দু’জনই এভিয়েশন কর্মচারী। খুন করেই দুবাই চলে যান রিয়াল পাচারের হোতা মো. রাসেল। সিভিল এভিয়েশন অফিস সহকারী উসমান সিকদার খুনের মামলায় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহিম খলিল ও নিরাপত্তাকর্মী বাদল মজুমদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

উসমান হত্যায় গ্রেপ্তার ইব্রাহিম খলিল আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানান, এভিয়েশন কর্মচারী উসমান সিকদারের সঙ্গে ৩৭ হাজার রিয়াল শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পাচার করানোর চুক্তি করেন ফটিকছড়ির রাসেল। কিন্তু পরে উসমান রাসেলকে জানান, রিয়ালগুলো বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা তাঁর কাছ থেকে নিয়ে গেছেন। ফলে তাঁর কথামতো বিমানবন্দরের অভিবাসন পার হওয়া যাত্রীর হাতে তুলে দিতে পারেননি।

কিন্তু রিয়ালগুলো ইব্রাহিম খলিলসহ অন্যরা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। এদিকে রাসেল তাঁর রিয়ালের জন্য চাপ দিতে থাকেন। তখন উসমান রিয়ালগুলো ভাগবাটোয়ারা ও পাচারে কারা কারা জড়িত, তা ঊর্ধ্বতন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলে দেবেন বলে হুমকি দেন। ১১ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে রাসেল, খলিলসহ পাঁচজন একটি গাড়ি নিয়ে সিভিল এভিয়েশন আবাসিক এলাকায় উসমান সিকদারের বাসায় যান। তারা তাঁকে মুদ্রাগুলো ফেরত দিতে চাপ দেন। এ সময় উসমান মুদ্রা ফেরত না দিয়ে বাড়াবাড়ি করলে কারা কারা মুদ্রা পাচারে জড়িত, সব ফাঁস করে দেবেন বলে হুমকি দেন। এক পর্যায়ে পাঁচজন মিলে বাসার ভেতরেই তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন। দফায় দফায় পিটুনির ফলে এক পর্যায়ে তাঁর দেহ নিথর হয়ে যায়। পরে তারা গাড়ির পেছনের ডালায় ভরে বিচ এলাকায় নিয়ে লিংক রোডের পাশে ফেলে দিয়ে চলে যান। সেখান থেকে পুলিশ তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে। 

এদিকে চট্টগ্রাম থেকে দুবাই রিয়াল পাচারের প্রধান হোতা মো. রাসেল ভিকটিম উসমানকে খুন করেই ৩ ঘণ্টার মধ্যে সকালের ফ্লাইটে শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে দুবাই পালিয়ে যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম-দুবাইয়ে মুদ্রা পাচার, হুন্ডি ও স্বর্ণবার চোরাচালান করে আসছেন। ফটিকছড়ি উপজেলার মধ্য গামরীতলা গ্রামে অবৈধ অর্থে বানিয়েছেন দৃষ্টিনন্দন দ্বিতল বাড়ি। শহরে কিনেছেন ফ্ল্যাট। আট বছর আগে দুবাই পাড়ি দিয়েই চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েন রাসেল।

খুনে ব্যবহার ভুয়া রেজিস্ট্রেশনের গাড়ি

উসমান খুনে ব্যবহার করা হয় ভুয়া রেজিস্ট্রেশন নম্বরের প্রাইভেট কার। নিবন্ধন নম্বর ছিল চট্ট মেট্রো-ঘ-১২-৬০৯৩। কিন্তু বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ির নম্বরটি ভুয়া। সিসিটিভিতে দেখা যায়, ১১ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে শাহ আমানত বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশনের চৈতালী নামের সরকারি কোয়ার্টারের প্রধান ফটক দিয়ে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করেন রাসেলসহ পাঁচজন। বাকি দু’জন হলেন তাদের সহযোগী মো. আরিফ ও গাড়িচালক।

সিভিল এভিয়েশন কর্মচারীদের যত অপকর্ম

রিয়াল পাচারের আগে শাহ আমানতে একাধিকবার স্বর্ণ চোরাচালানে এভিয়েশন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম এসেছে। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এম জেড এ শরীফকে আটক করা হয়। পরে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তাঁকে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৮০ পিস স্বর্ণের বারসহ এভিয়েশন কর্মচারী বেলাল, দেড়শ পিস স্বর্ণের বার পাচারে মেকানিক্যাল শাখার মাহবুবুল আলম ও ক্লিনার হারাধন, এক যাত্রীর লাগেজ তল্লাশি করে ২৫টি স্বর্ণবার উদ্ধারের ঘটনায় এভিয়েশন বিভাগের ব্যবস্থাপকের ব্যক্তিগত সহকারী মোমেন মকসুদ, বিমানের ট্রাফিক হেলপার নুরুদ্দিনের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় দুদক আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। 

যা বললেন সংশ্লিষ্টরা

মামলার বাদী ও নিহতের ভাই এমরান সিকদার বলেন, রাসেলের আত্মসাৎ হওয়া ৩৭ হাজার রিয়াল বাবদ ৯ লাখ টাকা ফেরত দিলেও আমার ভাইকে প্রাণে বাঁচতে দেয়নি তারা।

নগরের পতেঙ্গা থানার ইন্সপেক্টর ফরিদুল আলম বলেন, সিভিল এভিয়েশন কর্মচারী খুনের ঘটনায় সিভিল এভিয়েশনের দুই কর্মচারী সরাসরি জড়িত। তারা খুনের ঘটনা স্বীকার করেছেন। রিয়াল পাচারের দ্বন্দ্ব থেকে এ খুনের ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত চলমান।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর বলেন, এ ঘটনা তদন্তে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তারা তদন্ত কাজ করছেন। যে বা যারা জড়িত– এ ঘটনায় থাকুক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম কোনাবাড়ী এলাকায় কেমিক্যালের ড্রাম বিস্ফোরণে ৪ জন দগ্ধ শিরোনাম মহাখালীতে আবাসিক ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে শিরোনাম ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে বাংলাদেশির মৃত্যু শিরোনাম অর্থ পাচারের নথি নষ্ট করতেই সচিবালয়ে আগুন: রিজভী শিরোনাম প্রধান তিনটি কাজের কথা জানালেন আইন উপদেষ্টা শিরোনাম গণমাধ্যমের কেমন সংস্কার চাই-আহসান কামরুল