তারেকের সামনে বাধা সাজা পাওয়া আরও চার মামলা : সরকার পতনের পর কিছু মামলা তুলে নিয়েছে বাদীপক্ষ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও বাধা চারটি মামলা। বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের প্রত্যাশা, সাজা পাওয়া এই চার মামলায়ও ন্যায়বিচার পাবেন তিনি।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুই মামলায় রোববার হাইকোর্টে খালাস পেয়েছেন তারেক রহমান। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহসহ বিভিন্ন অভিযোগে আরও ৪৯টি মামলা বিচারাধীন। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের আমলে এসব মামলা হয়। গ্রেনেড হামলা, অর্থ পাচার, মানহানিসহ পাঁচ মামলায় সাজাও হয়েছিল গত ছয় বছরে। পলাতক দেখিয়ে মামলাগুলোর বিচার সম্পন্ন করেছেন বিভিন্ন আদালত।
তারেক রহমানের আইনজীবী বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সমকালকে বলেন, ‘আরও চারটি মিথ্যা মামলায় তারেক রহমান সাজাপ্রাপ্ত। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যেমন ন্যায়বিচার পেয়েছেন, আশা করি সাজাপ্রাপ্ত ওই চার মামলায়ও ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা আইনগতভাবে অগ্রসর হচ্ছি।’
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৭টি মামলা হয়। পরবর্তী সময় শেখ হাসিনার সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থ পাচার এবং দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা-থানায় মানহানির মামলাসহ অন্তত ৮৮টি মামলা হয়। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেশ কয়েকটি মামলা তুলে নিয়েছে বাদীপক্ষ।
দলীয় সূত্র বলছে, কোনো অনুকম্পা বা নির্বাহী আদেশ নয়, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলাগুলো মোকাবিলা করতে চান তারেক রহমান। এ জন্য তাঁর পক্ষে একটি শক্তিশালী আইনজীবী প্যানেল কাজ করছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মামলায় মুক্ত হলে আগামী জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে লন্ডন থেকে দেশে ফিরবেন তিনি।
অর্থ পাচার মামলায় সাত বছর জেল
সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলায় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় তারেকের বন্ধু ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। ২০১৬ সালে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেন। এটি ছিল তারেক রহমানের প্রথম সাজা। এ মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে আপিল বিভাগে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা করে দুদক। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ট্রাস্টের কাজে ব্যবহার না করে নিজেদের হিসাবে জমা রাখার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে– এমন অভিযোগে এই মামলাটি দায়ের করা হয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। একই সঙ্গে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগে মামলা
২০০৭ সালে তারেক রহমান, তাঁর স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও জোবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবাল বানুর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় আবেদনে বলা হয়, তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রীর ঘোষিত আয়ের বাইরেও ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থের অবৈধ সম্পদ রয়েছে। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট এ মামলায় তারেক রহমানকে ৯ বছরের এবং তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ঢাকার আদালত।
মানহানির মামলায় কারাদণ্ড
২০১৪ সালে লন্ডনের এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজাকার ও পাকবন্ধু বলে কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ আনা হয় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ এনে সে সময় নড়াইলে তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বিশ্বাস। ওই মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন নড়াইলের আদালত। ঢাকার আদালতেও মানহানির অভিযোগে কমপক্ষে ১০টি মামলা বিচারাধীন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি ও ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে এসব মামলা হয়েছে।
সিলেটে দুটি মামলা খারিজ
সিলেটে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ২০১৪ সালে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রলীগ নেতার দায়ের করা দুটি মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। বাদী উপস্থিত না হওয়ায় গত রোববার সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মামলা দুটি খারিজের রায় দেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com