সুস্থ হলেও বাড়ি ফিরতে পারছে না নুহা-নাবা : কথা ছিল বিনামূল্যে চিকিৎসার, বিল এলো ২২ লাখ টাকা
মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো দুই শিশু নুহা-নাবা ব্যয়বহুল ও জটিল অস্ত্রোপচারের পর এখন অনেকটাই সুস্থ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের আলাদা করা হয়। সুস্থ হয়ে ওঠায় ৭ নভেম্বর তাদের ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের বাবা আলমগীর রানার হাতে ধরিয়ে দিয়েছে ২২ লাখ টাকার একটি বিল। অথচ তাদের চিকিৎসা হওয়ার কথা বিনামূল্যে। এখন এ সমস্যা সমাধানের জন্য দপ্তরে দপ্তরে ঘুরছেন আলমগীর। এর ফলে বাড়িতেও ফিরতে পারছে না নুহা-নাবা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, টাকা মওকুফের উপায় খুঁজছে তারা।
২০২২ সালের ২১ মার্চ কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ীর পরিবহন শ্রমিক আলমগীর রানার স্ত্রী নাসরিন আক্তার মেরুদণ্ডে জোড়া লাগানো দুই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। ওই বছরের ৪ এপ্রিল তাদের ঢাকায় আনা হয়। তখন থেকে তারা বিএসএমএমইউতে ভর্তি। হাসপাতালের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরো স্পাইন সার্জন অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেনের অধীনে তাদের ভর্তি করা হয়। কয়েক ধাপে অস্ত্রোপচারের পর চূড়ান্তভাবে আলাদা করা হয় গত ২০ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ১৫ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচার শেষে নুহা ও নাবা আলাদা হয়।
দুই শিশুকে আলাদা করার পর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘শিশু দুটির চিকিৎসা ব্যয়বহুল। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি উপাচার্যকে বলেছেন, দুটি শিশুর চিকিৎসার যা খরচ, তিনি বহন করবেন।’
গতকাল মঙ্গলবার বিএসএমএমইউর কেবিন ব্লকে কথা হয় আলমগীর ও নাসরিনের সঙ্গে। তারা জানান, ৭ নভেম্বর নুহা-নাবার ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ছিল। তবে হাসপাতাল ছাড়ার আগে ৭০৫ দিনের কেবিন ভাড়া ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৫০০ টাকার বিল ধরিয়ে দেয় হাসপাতাল প্রশাসন। এই টাকা পরিশোধের সামর্থ্য তাদের নেই। বিল মওকুফে গত ১২ দিন বিএসএমএমইউর কর্তৃপক্ষের দপ্তরে দপ্তরে ফাইল নিয়ে ঘুরেও কোনো সমাধান মেলেনি।
বিএসএমএমইউ সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত নুহা-নাবা হাসপাতালের নিউরোসার্জারি মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল। ২০২২ সালের ৪ ডিসেম্বর তাদের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। সেই থেকে কেবিন ব্লকের ৬১৮ নম্বর কেবিনে আছে শিশু দুটি। এখন পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে দু’জনের আলাদা আলাদা আটটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। আরও একটি অস্ত্রোপচার বাকি আছে। বর্তমানে শিশু সার্জন অধ্যাপক ডা. এ কে এম জাহিদ হোসেনের অধীনে চিকিৎসাধীন আড়াই বছরের নুহা-নাবা।
আলমগীর বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে এখন হাঁটাচলা করতে পারে। ওরা ভালো আছে। ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে তাদের আরেকটি অপারেশন করতে হবে। এখন আমাদের হাসপাতাল থেকে চলে যেতে বলেছে। ৭ নভেম্বর ছুটির কাগজপত্র প্রস্তুত করা হয়েছে, কিন্তু আমরা বাড়ি যেতে পারছি না। কেবিন ভাড়ার বিষয়ে কোনো ফয়সালা হচ্ছে না। এতদিন চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাদের বিল নিয়ে চিন্তা করতে না করা হয়েছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর অনেকেই ভয় দেখাচ্ছে, বিল দিতে না পারলে আমার নামে মামলা হবে।’
সন্তানদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় থাকতে গিয়ে কাজ হারিয়েছেন আলমগীর। তিনি বলেন, ‘বাচ্চাদের সঙ্গে থাকার কারণে কাজ চলে গেছে, ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, জমি বন্ধক ও ধার করে চলতে হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬ লাখ টাকার মতো ধার হয়েছে। আমি এখন ২২ লাখ টাকা কোথায় পাবো!’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএমএমইউর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক শাহীনুল আলম সমকালকে বলেন, ‘নুহা-নুবার বিষয়টি আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এত টাকা মওকুফ করার সুযোগ আমাদের কম। তবে উপ-উপাচার্য ও হাসপাতাল পরিচালককে বিষয়টি সমাধানের উপায় বের করতে বলা হয়েছে। তাদের থেকে টাকা নেওয়া হবে না। শিগগিরই আমরা কোনো একটা উপায় খুঁজে ছাড়পত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com