ব্যবসা নয়, সেবাই ছিল রতন টাটার ধর্ম : মুম্বাইয়ে শেষকৃত্যে মানুষের ঢল
রতন টাটা। অনন্য সাধারণ শিল্পপতির গল্পটি শেষ হয়েছে গত বুধবার রাতে তাঁর জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে। ছিলেন ভারতের অন্যতম বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী টাটা গ্রুপের কর্ণধার। তবে রতন টাটা যতটা ভারতের, ততটাই বৈশ্বিক। আর সব শিল্পপতি থেকে তিনি যেখানে আলাদা তা তাঁর ব্যবসার চেয়ে সেবার মনোভাবে। জনহিতৈষী এ শিল্পপতির শেষকৃত্যে তাই বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ে নেমেছিল জনতার ঢল।
এদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দক্ষিণ মুম্বাইয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর পারফর্মিং আর্টসে রাখা হয় রতন টাটার মরদেহ। সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশে নেই। সরকারের হয়ে শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে, উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল থেকে দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিরা আসেন তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে। পরে মুম্বাইয়ের ওরলিতে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
ব্যবসা জগতে রতন টাটার শুরু টাটা স্টিলের মধ্য দিয়ে। ১৯৬২ সালে বিদেশে পড়াশোনা শেষে তিনি টেলকো সংস্থায় সাধারণ কর্মী হিসেবে যোগ দেন। সেখানে বাকি পাঁচজন কর্মীর মতোই করতেন কাজ। এমনকি বেলচা দিয়ে চুনাপাথরও তুলেছেন। এর ৯ বছর পর তিনি ন্যাশনাল রেডিও অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ হন। ১৯৯১ সালে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান জেআরডি টাটা পদত্যাগ করলে রতন টাটা তাঁর উত্তরসূরি হন। প্রথম দিকে কিছুটা বিরোধিতার মুখে পড়লেও ২০১২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় তাঁর হাত ধরে টাটা গ্রুপ ওঠে সাফল্যের শিখরে।
স্টিল থেকে শুরু করে অটোমোবাইলস, টেলিকমিউনিকেশন– সব ক্ষেত্রেই রতন টাটার অসাধারণ নেতৃত্বে ব্যবসার পরিধিতে ভারতের সর্ববৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী হয়েছে টাটা। টাটা গোষ্ঠীর মালিকানায় রয়েছে টাটা মোটরস, জাগুয়ার, ল্যান্ড রোভারের মতো অটোমোবাইলস কোম্পানি। এয়ার ইন্ডিয়া, ভিস্তারার মতো প্রতিষ্ঠানও পরিচালনা করে গ্রুপটি। লাইফস্টাইল সেক্টরে রয়েছে টাইটান, তানিস্ক, ফাস্ট ট্রাক, জুডিও, ওয়েস্টসাইডের মতো ব্র্যান্ড।
ভারতসহ বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে টাটা গ্রুপ। গত ফেব্রুয়ারি মাসের হিসাবে এ শিল্পগোষ্ঠীর মূলধন আনুমানিক ৩৬ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। তবে এত বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী হয়েও কর্মীবান্ধব হিসেবে ভারতের যে কোনো প্রতিষ্ঠানের তুলনায় সব সময় এগিয়ে টাটা।
টাটার মতো শিল্পগোষ্ঠীর মূল মালিক হয়েও প্রয়াত রতন টাটার মোট সম্পত্তির পরিমাণও মাত্র ৩ হাজার ৮০০ কোটি রুপির কাছাকাছি। বিশ্বের সেরা ধনীর তালিকায় ভারতের আদানি, আম্বানির মতো তিনি কখনও জায়গা করে নেননি। এর বড় কারণ, রতন টাটা কখনও ধনকুবের হতে চাননি। তাঁর উপার্জনের ৬৬ শতাংশই যেত দাতব্য কার্যকলাপে।
রতন টাটা একবার বলেছিলেন, তাঁর বন্ধু প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা মূলত ব্যবসায়ী, কিন্তু তিনি শিল্পপতি। শিল্পপতিদের সমাজের প্রতি কিছু দায়িত্ব-কর্তব্যবোধ থাকে। তাই সেরা ধনী হওয়া তাদের লক্ষ্য নয়। সমাজে অবদান রাখাই টাটা গোষ্ঠীর লক্ষ্য। তাঁর স্বজন দোরাবজি টাটা বলেছিলেন, তাঁর জন্য সম্পদ উপার্জন করা অনেক পরের বিষয় ছিল। তিনি ভারতের মানুষের শিল্প ও সামগ্রিক অবস্থার উন্নয়নকে সব সময় অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com