ঢাকা, ২২ অক্টোবর, ২০২৪
Banglar Alo

ভোগের মানসিকতায় বাসযোগ্য পৃথিবী কতটুকু সম্ভব

Publish : 11:02 PM, 20 September 2024.
ভোগের মানসিকতায় বাসযোগ্য পৃথিবী কতটুকু সম্ভব

ভোগের মানসিকতায় বাসযোগ্য পৃথিবী কতটুকু সম্ভব

সোহেলী চৌধুরী :

আমাদের এ ধরণী সময়ে সময়ে বিরূপ হয়ে যাচ্ছে। তার পেছনে অনেক কারণ। সময় পরম্পরায় পৃথিবীতে আমাদের যাপনের ধরন একটি কারণ; বলা চলে অন্যতম কারণ। আমরা যদি প্রতিনিয়ত আমাদের নিয়েই থাকি তবে বিশ্ব আরো বিরূপ হবে। আমাদের বলতে মানুষ শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবে, ফলে প্রকৃতির বাকি সব বিষয় থাকে গৌণ।

একটু খোলাসা করা যাক, ক্রমশ নগর গিলে খাচ্ছে প্রকৃতি। গাছের ডালে যে পাখিটি বসত করত তার বাসস্থান মানে গাছটি আমরা কেটে ফেলছি। সেখানে গড়ে উঠছে নাগরিক আবাস। এতে করে আমরা গাছও হারালাম আবার পাখিও হারালাম। গাছ ও পাখি কিন্তু আমাদের জন্যই। ভাসা ভাসা জ্ঞানে তা আমাদের বোঝার কথা না।

নাগরিক রাস্তায় কিংবা আবাসে আপনার গাড়ি কিংবা ঘরটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এতে আপনার লাভই। কিন্তু একবার ভেবেছেন কি সামগ্রিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে তা প্রভাব রাখছে। সত্যি বলতে কুপ্রভাব রাখছে। আপনার জায়গায় জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবের জন্য দায়ি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে বসিয়ে দিন। ব্যক্তিই কিন্তু বৃহৎ অর্থে সরকারপ্রধান। আর পরিবার বৃহৎ জ্ঞানে দেশ। এমনি করেই সবাই সবার জায়গা থেকে নিজেরটিই ভাবে; স্বার্থপর হয়ে। ফলে ধুঁকে যায় পৃথিবী। আর এতে করেই সমাধান দিতে পারে না বৈশ্বিক জলসা। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় শেষ হয়েছে জলবায়ু বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন কপ-২৬। কিন্তু সময় বাড়িয়ে তাতে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি আসেনি। অর্থাৎ যে অগ্রগতি বিশ্বকে বদলে দেবে। জলবায়ুর আগামীর হুমকি কমিয়ে দেবে তেমন কোনো অগ্রগতি। এর পেছনে কারণ ওই আপনার ব্যক্তির ভাবনার মতোই।

আপনি খুব সহজে ভাবেন- ‘আমার সুখ দেখতে হবে না? আমার বাড়ি কিংবা গাড়িতে শিতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকবেই। আমি গরম সহ্য করতে পারি না।’ ঠিক তেমনি বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো ভাবে- ‘আমার দেশে কয়লার ব্যবহার বন্ধ করলে উন্নয়ন মন্থর হয়ে যাবে। কার্বন নিঃসরণ হলো কি না হলো তাতে আমার কি দায়? আর এ ছাড়া আমার আর করণীয় কী আছে?’ এভাবেই সব চলছে। বিজ্ঞানীদের কথায় আগামী সময়ে পৃথিবীর নিম্নাঞ্চলের অনেক অংশ সমুদ্রে ডুবে যাবে। এতে কিছুই কি করার নেই ধনী দেশগুলোর?

কিন্তু কপ-২৬-এর তেমন কোনো সুরাহা আসেনি। অতীতেও জলবায়ুবিষয়ক নানা বৈঠকে চুক্তি ও ওয়াদাবদ্ধ হয়েও তা কার্যকর হয়নি। আসলে আমরা আছি ভোগের মানসিকতায়। এতে করে কোনো সমাধান মিলবে না। আমরা বুঝছি না আগামীর প্রজন্ম একটি বাসযোগ্য পৃথবী পাবে না আমাদের জন্যই। ঠিক নাগরিক রাস্তায় কোনো ধনী বুঝছে না তার গাড়িটি শীতাতপ হয়ে তাপ বিকীরণ করছে পরিবেশে। ঠিক পাশের সাধারণ যাত্রিটি সেই তাপের শিকার।

আসলে আমরা কিছুই বুঝি না। বুঝলে গাছ ও পাখিটিকে পরিবেশের বাইরে ফেলে দিতাম না। অবাধে বন নিধন করতাম না। পরিবেশকে বিষাক্ত করতাম না। ভোগে বেঁচে থাকার জন্য কার্বন নিঃসরণ করতাম না। তারপরও আমাদের বড় বড় গলা। আমরা হল্লা করে বৈশ্বিক বৈঠকে বসি। যেন আমার মতো প্রকৃতিপ্রাণ পৃথিবীতে একটিও নেই।  এবার কিছু খবর দেখে নেওয়া যেতে পারে। বৈশ্বিক জলবায়ু বিনষ্টের পেছনে কারা জড়িত এবং কীভাবে জড়িত? এবং তাতে করে আমাদের ভবিষ্যত পৃথিবী কেমন হবে?

সম্প্রতি জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, বিশ্বে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা দ্রুতগতিতে বাড়ছে এজন্য নিঃসন্দেহে দায়ী মানুষের কর্মকাণ্ড। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এখন যে চরম তাপপ্রবাহ, প্রচণ্ড ভারী বৃষ্টিপাত, খরা বা সাইক্লোন হতে দেখা যাচ্ছে- তাতে জলবায়ুর এই পরিবর্তন স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। শিল্পযুগের আগে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা যা ছিল, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে সেই তাপমাত্রা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রি বৃদ্ধি পাবে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এর আগে যতটা সময় লাগবে বলে ধারণা করা হয়েছিল, এখন বলা হচ্ছে তার দশ বছর আগেই সেটা ঘটে যাবে।
জাতিসংঘ বলছে, এর ফলে সারা বিশ্বে চরম আবহাওয়া পরিস্থিতি তৈরি হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একমাত্র কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমিয়েই এই পরিবর্তনের গতি কমানো সম্ভব। জানা যায়, ২০১১-২০২০ এই এক দশক সময়কালে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ১৮৫০-১৯০০ এই সময়কালের চেয়ে এক দশমিক শূন্য নয় ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে।

১৮৫০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত থাকা রেকর্ড অনুযায়ী গত পাঁচ বছর ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম। ১৯০১-১৯৭১ এই সময়কালের সাথে তুলনায় সমুদ্রের পানির স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির সাম্প্রতিক হার প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।

১৯৯০-এর দশক থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপি হিমবাহগুলো গলে যাওয়া এবং আর্কটিকে সামুদ্রিক বরফস্তর কমে যাওয়া- এ দুটির পেছনে মানুষের কর্মকাণ্ডই যে দায়ী, এমন সম্ভাবনা খুবই জোরালো (৯০ শতাংশ)। এটা এখন প্রায় নিশ্চিত যে ১৯৫০-এর দশকের পর থেকে অতিরিক্ত গরম পড়া এবং তাপপ্রবাহ অনেক বেশি ঘন ঘন ঘটছে। অন্যদিকে ঠাণ্ডা পড়ার তীব্রতা কমে যাচ্ছে এবং তা ততটা ঘন ঘন হচ্ছে না।

প্রতিবেদনে জাতিসংঘের বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কর্মকাণ্ড পরিবেশের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে তা মানবসমাজের জন্য একটি ‘রেড সিগন্যাল’। প্রতিবেদনের প্রণেতারা আরো বলছেন, এ শতাব্দীর শেষ নাগাদ সমুদ্রের পানির স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির পরিমাণ দুই মিটারের কাছাকাছি চলে যাওয়ার শঙ্কা এখন আর উড়িয়ে দেওয়া যায় না। প্রতিবেদনে বলা হয়, অতীতে এবং ভবিষ্যতে যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ঘটবে- তার ফলে জলবায়ুতে এমন সব পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে যা আর ঠেকানো যাবে না। এর প্রভাবে কয়েক শতাব্দী বা সহস্রাব্দ ধরে পৃথিবীর মহাসাগর, জমে থাকা বরফের স্তর ও সাগরের পানির স্তরের ওপর এর প্রভাব দেখা যাবে।

তবে প্রতিবেদনে এ কথাও বলা হয়েছে যে- কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেনের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বড় আকারে কমাতে পারলে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে হয়তো স্থিতিশীল অবস্থায় আনা যাবে- এমন নতুন আশাবাদও সৃষ্টি হয়েছে। আর কিছু আশা জাগাতেই এবারের কপ-২৬ সম্মেলনের আয়োজন। কিন্তু তাতে ঠিক আশার কথা বলেনি ধনী দেশগুলো। ফলে সময় বেড়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়েছে বলে মনে হয় না। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, কনফারেন্স অব পার্টিজের (কপ) ২৬তম সম্মেলন শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব এড়াতে দেশগুলোর মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর আলোচনা, দরকষাকষি চলে। এ খবর বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা একটি দেশের একজন সাধারণ নাগরিকের জন্য কষ্টের।

জানা যায়, কপ-২৬-এ শেষ মুহূর্তে যেসব বিষয় নিয়ে দরকষাকষি চলে তার মধ্যে কয়লা ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি প্রসঙ্গ এবং দরিদ্র দেশগুলোকে কী পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে তা-ই প্রাধান্য পায় বলে জানিয়েছে বিবিসি। এর মাঝে একটি খবর মর্মান্তিক। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে পড়া ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর দূতরা কপ-২৬-এ শেষ পর্যায়ে বলেছেন, তাদের ভূখণ্ড ধারণার চেয়েও দ্রুতগতিতে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
এসবের মাঝেই বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব এড়ানো যাবে। প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে এ লক্ষ্য অর্জনে বেশিরভাগ দেশ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল।

তারা বলছেন, লক্ষ্য অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ কমানো, আর ২০৫০ সালের মধ্যে মোটামুটি শূন্যের কাছাকাছি নিয়ে আসা দরকার। এমনটি যেন হয় সেই আশা নিয়ে বসে আছে পৃথিবীর প্রতিটি জয়বায়ু ঝুঁকিতে থাকা মানুষ। কিন্তু বাস্তবতা হলো গ্লাসগোর সম্মেলনে নতুন কোনো চুক্তি না হওয়ারই কথা। এ সম্মেলন হচ্ছে ১৯৯২ সালের ইউএনএফসিসি কনভেনশনের পক্ষের রাষ্ট্রগুলোর (কনফারেন্স অব দ্য পার্টি সংক্ষেপে সিওপি বা কপ) মধ্যে এবং সেই কনভেনশনের আলোকে গৃহীত প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সর্বজনীন, সর্বশেষ এবং সম্ভবত চিরস্থায়ী চুক্তিটি হচ্ছে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি। শিল্পযুগ-পূর্ব সময়ের তুলনায় (১৮৫০-১৯০০) পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়ে যায়, হিমবাহ গলে সমুদ্রের স্তর উঁচু হয়ে ওঠে, বিভিন্ন নিচু এলাকায় সমুদ্রের লবণাক্ত পানি ঢুকে যায়, এতে জীববৈচিত্র্য ও প্রাণীর আবাসস্থলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা একই গতিতে বাড়তে থাকলে আগামী ৫০ বছরে পৃথিবীর অধিকাংশ এলাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে। প্যারিস চুক্তিতে তাই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশ নিচে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত এবং তা এক দশমিক পাঁচ ডিগ্রিতে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করার অঙ্গীকার গৃহীত হয়। এ জন্য যত দ্রুত সম্ভব বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধি ঠেকানো এবং ২০৫০ সালের দিকে তা শূন্যের কোঠায় (নেট-জিরো) নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।

গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বিশ্বে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কোটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে নগর ও বসতি নির্মাণ, কৃষি ও খামারের সম্প্রসারণ, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও অবৈধ বাণিজ্যের কারণে। প্রতিবছর এখনো প্রায় ২০০ কোটি গাছ কেটে ফেলা হয় এসব কারণে। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে তা শুধু বন্ধ করা নয়, নতুন বনায়নের মাধ্যমে ক্ষতিমোচনের চেষ্টাও করতে হবে।

এর বাস্তবায়ন খুবই জটিল, ব্যয়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য। কারণ, এটি করতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির (যার ওপর আমাদের শিল্পকারখানা, যানবাহন, ভোগবাদী জীবনাচরণ নির্ভরশীল) ব্যবহার এবং বন ও জলাশয় উজাড় বন্ধ করতে হবে। মিথেনের উৎস (গবাদিপশুর খামার ও ফসলের ভূমি) নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরিবেশবান্ধব জ্বালানির (সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ) ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যাপক বনায়ন করতে হবে।

বিশাল এই কর্মযজ্ঞ কীভাবে সম্পাদন করতে হবে, তার প্রাথমিক কর্মকৌশল প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সব পক্ষ রাষ্ট্র কতটুকু কার্বন নিঃসরণ কমাতে পারবে এবং কীভাবে তা করবে, তা ঠিক করে জানাতে বলা হয়। যে দলিলে এটি জানানো হবে, তার নাম হচ্ছে ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন বা সংক্ষেপে এনডিসি। তবে প্রায় ২০০ দেশের যেসব এনডিসি পাওয়া গেছে, তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলেও বৈশ্বিক তাপমাত্রা তিন ডিগ্রির বেশি বেড়ে যাবে। যা প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও মানুষের সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। এ জন্য পাঁচ বছর অন্তর অন্তর প্রতিটি রাষ্ট্রের নতুন এনডিসিতে আরো বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০২১ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল জমা দেওয়ার অঙ্গীকারও করা হয়েছে এতে।
এনডিসি বা দীর্ঘমেয়াদি কর্মকৌশল মূলত কাগুজে অঙ্গীকার, এর মধ্যেও বহু ফাঁকি রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন দেশের দলিলে অস্পষ্টতা রয়েছে, এতে লক্ষ্যমাত্রায়ও ভিন্নতা রয়েছে। যেমন এটি যারা জমা দিয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশ দেশ ২০৫০ সালের মধ্যে জিরো কার্বন নিঃসরণের কথা বললেও কোনো কোনো দেশ (চীন ও রাশিয়া) এটি ২০৬০ সালের মধ্যে করবে বলেছে। অনেক দেশ এটি এখনো জমাও দেয়নি।

আমরা জানি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে শরণার্থী ও উদ্বাস্তু। নতুন খবর, বিশ্বজুড়ে যত শরণার্থী ও উদ্বাস্তু রয়েছেন তারা যেসব দেশ থেকে এসেছেন তার প্রায় সবগুলোই জলবায়ু পরিবর্তনের সবথেকে ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশ। এসব দেশ বন্যা ও ঘূর্নিঝড়ে প্রায় প্রতি বছর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সঙ্গে নতুন করে যোগ দিয়েছে খড়া ও মরুকরণ।

এগুলো সবই জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। বুরকিনা ফাসো থেকে বাংলাদেশ কিংবা আফগানিস্তান থেকে মোজাম্বিক, জলবায়ু পরিবর্তন এসব দেশে দারিদ্রতা, অস্থিতিশীলতা এবং উদ্বাস্তু সংকট বৃদ্ধির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে। তীব্র খড়ার কারণে অনেক জনবহুল এলাকা অনুর্বর হয়ে পড়েছে। মানুষ বাধ্য হচ্ছে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে কোটি কোটি মানুষ এখন উদ্বাস্তু হওয়ার পথে। ঘন ঘন বন্যা ও ঘূর্নিঝড় মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন করে তুলেছে। আর এটিই বিভিন্ন দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। দশকের পর দশক ধরে এসব দেশে সহিংসতা লেগেই আছে।

উন্নত দেশগুলোর মানুষের কাছে এখনো এসব অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। কিন্তু ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা আইপিসিসি গত আগস্ট মাসেই জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি ইউরোপে এ বছর দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বন্যায়। চরম তাপ প্রবাহ দেখতে পেয়েছে কানাডা। সাইবেরিয়ার মতো জায়গায় দাবানলে পুড়ে গেছে হাজার হাজার একর বনাঞ্চল। তুরস্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্র সর্বত্রই বনে আগুনের খবর পাওয়া গেছে বছরজুড়ে।

বিশ্ব এখন ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। কিন্তু বর্তমানে যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হচ্ছে তাদের পাশে এখনো কাউকে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে প্রাথমিকভাবে যেসব আঘাত আসবে তা হয়তো ধনী রাষ্ট্রগুলো সামলে নিতে পারবে। মোজাম্বিকের মতো দেশগুলো কীভাবে এই নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেবে? ২০১৯ সালে ঘূর্নিঝড় ইদাইয়ের আঘাতে দেশটিতে সাত লাখেরও বেশি মানুষ উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে। সেই ধাক্কাই এখনো দেশটি সামলে উঠতে পারেনি।

পরিশেষে বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা আর কোনো ভবিষ্যতের বিষয় নয়। তাই এখনি সাবধান হতে হবে। ভোগের মানসিকতায় বাসযোগ্য পৃথিবী সম্ভব নয় এটি মনে রাখতে হবে সর্বাগ্রে।


সোহেলী চৌধুরী : সাংবাদিক ও জনকল্যাণ সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম হিজবুল্লাহর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা : তেল আবিবে জরুরি অবস্থা, বেন গুরিয়নে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ শিরোনাম উপদেষ্টা, সমন্বয়কের প্রতিক্রিয়া শিরোনাম যাত্রাবাড়ীতে ‘জেগে’ আছেন শহীদরা শিরোনাম নির্বাচনের দিন ঠিক করে কাজ-কর্ম শুরু করুন: নীরব শিরোনাম গাজায় স্কুলে ইসরায়েলের হামলা, নিহত ১০ শিরোনাম ব্যারিস্টার সুমন এতদিন কোথায় ছিলেন?