চট্টগ্রামে হঠাৎ ডায়রিয়া রোগী কয়েক গুণ : আক্রান্তের ৭০ শতাংশই ৫ এলাকার
বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকায় পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। হঠাৎ করেই রোগী কয়েক গুণ হয়ে গেছে। ডায়রিয়ায় কাবু হয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন শতাধিক মানুষ। এর অর্ধেকের বেশি শিশু।
ডায়রিয়ায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন চট্টগ্রামের পাঁচ এলাকার বাসিন্দারা। মোট আক্রান্তের প্রায় ৭০ শতাংশ এসব এলাকার। আক্রান্তদের একটি বড় অংশ এক থেকে তিন বছর বয়সী শিশু এবং চল্লিশোর্ধ্ব। অনেকের ডায়রিয়ার সঙ্গে দেখা দিচ্ছে বমি, জ্বর; মিলছে কলেরার জীবাণুও।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন ১২০ জনের বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত আসছে। ৮ জানুয়ারি ১৩৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ১২ জানুয়ারি এ সংখ্যা ছিল ১২৩ জন। আক্রান্ত মোট রোগীর প্রায় ৭০ শতাংশই আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, পটিয়া ও বাঁশখালী এলাকার বাসিন্দা।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে ৯৪ শয্যার বিপরীতে গত কয়েক দিন ধরে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছেন ১৩০ থেকে ১৪০ জন। এর মধ্যে প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন ৫০ থেকে ৬০ জন।
বিশেষায়িত মা ও শিশু হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪৫ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি থাকছেন ৬০ থেকে ৭০ জন। প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন গড়ে ২০ জন। চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে ১১০ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি থাকছেন দেড় শতাধিক। অর্ধেকের বেশি নতুন রোগী। এ ছাড়া রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, পার্কভিউ, মেট্রোপলিটন, ডেল্টা, ম্যাক্স, ন্যাশনাল, সিএসসিআর, শেভরন, ট্রিটমেন্ট, মেডিকেল সেন্টার এবং একুশে হাসপাতালেও।
সরেজমিন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, কোনো শিশুর হাতে, কোনো শিশুর পায়ে লাগানো হয়েছে স্যালাইন দেওয়ার ক্যানুলা। কম বয়সী হওয়ায় বিভিন্ন পরীক্ষা করতে রক্ত নিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে দেখা যায় ডাক্তার, নার্স ও ল্যাবের লোকদের। ডায়রিয়া নিয়ে হাটহাজারীর জোবরা এলাকা থেকে ভর্তি হওয়া দেড় বছরের তাজওয়ার রহমানের মা লিপি রহমানকে হাতে স্যালাইন লাগানো ছেলেকে কোলে নিয়ে দুশ্চিন্তায় বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘ছেলেটা একেবারে সুস্থ ছিল। কয়েক দিন আগে মধ্যরাতে দেখি ঘুম থেকে উঠে কান্না করছে। একটু পরপর পায়খানা করছে। পরিচিত একজনের সঙ্গে কথা বলে ওষুধ খাওয়ানোর পরও পায়খানা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। পরে এক দিনে ১০-১২ বার পর্যন্ত পায়খানা করে। শুরু হয় বমিও। দুদিনে মুখে কিছুই খাওয়াতে পারিনি। এখানে নিয়ে এলে চিকিৎসরা জানান, সে অতিমাত্রায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। তিন দিন ধরে ভর্তি থাকলেও এখনও স্বাভাবিক হচ্ছে না তার শারীরিক অবস্থা।’
হাসপাতালের প্যাথলজি থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করতে আসা ফাহিম আল হাসান বলেন, ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কম বয়সী রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, হঠাৎ করেই ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। হাসপাতালের পাশাপাশি চেম্বারেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। এবার এমন অনেক শিশু পাওয়া যাচ্ছে, যাদের এক দিনেই ১০-১৫ বার পর্যন্ত পায়খানা হচ্ছে। সঙ্গে হচ্ছে বমিও।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, শিশুদের পাশাপাশি বয়স্করাও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
কয়েক দিন ধরে চট্টগ্রামের কয়েকটি এলাকার বাসিন্দা হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে। শয্যার কয়েক গুণ রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মা শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ডা. সেঁজুতি সরকার বলেন, রোগীরা অনেক দেরিতে হাসপাতালে আসছেন। তাই সুস্থ হতে টানা চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে। অনেকের মাঝে সচেতনতা বাড়ছে না।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া রোগী বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি স্যালাইনসহ যাবতীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কেন পাঁচটি এলাকায় ডায়রিয়া বেশি ছড়িয়ে পড়েছে, সে ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই প্রশাসনের কাছে। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, যে কয়েকটি এলাকায় বেশি রোগী আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। কয়েকটি এলাকায় পুকুরের পানি পান করার তথ্য মিলেছে, তা যাচাই করা হচ্ছে।
ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ার কারণ বের করতে প্রয়োজনে ঢাকা থেকেও বিশেষজ্ঞ দল আসবে বলে জানান সিভিল সার্জন।
চিকিৎসকরা জানান, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে বেশি অবহেলা করেন মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরা। অনেকে স্থানীয় পল্লিচিকিৎসকদের দিয়ে শিশুর চিকিৎসা করাচ্ছেন। অনেকে আবার একেবারেই ওষুধ খাওয়ান না। অবস্থার অবনতি হলেই হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করে।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com