ঢাকা, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
Banglar Alo

লন্ডভন্ড অবস্থা থেকে ১০০ দিনে সবল দেশের অর্থনীতি

Publish : 05:11 AM, 18 November 2024.
লন্ডভন্ড অবস্থা থেকে ১০০ দিনে সবল দেশের অর্থনীতি

লন্ডভন্ড অবস্থা থেকে ১০০ দিনে সবল দেশের অর্থনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায়ের পর লন্ডভন্ড অবস্থা থেকে মাত্র ১০০ দিনে দেশের অর্থনীতি সবল অবস্থানে চলে এসেছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন অতিক্রম উপলক্ষে রোববার (১৭ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।  

তিনি বলেন, ১০০ দিন আগে আর্থিক দিক থেকে আমরা যে লন্ডভন্ড অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম--সেটা এখন অতীত ইতিহাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই একশো দিনে অর্থনীতি সবল অবস্থানে চলে এসেছে। এটা সম্পূ্র্ণ নিজস্ব নীতিমালা দিয়ে হয়েছে। বলা বাহুল্য এখনো আমাদের বন্ধুদের কাছ থেকে যে সাহায্যের আয়োজন হয়েছে তা আসা শুরু করেনি। বন্ধু রাষ্ট্রগুলি শুধু যে আমাদের বড় বড় অংকের সাহায্য নিয়ে আসছে তাই নয়, তারা এই সাহায্য দ্রুততম সময়ে আসা শুরু করবে এই প্রতিশ্রুতিও আমাকে দিয়েছে। এই সাহায্য আসা শুরু করলে আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত মজবুত এবং আকর্ষনীয় অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীরাও নানা রকম বিনিয়োগে উৎসাহীত হয়ে এগিয়ে আসবে।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। আশার কথা, এই রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে। গত তিন মাসে রিজার্ভে কোনো রকম হাত না দিয়েই আমরা প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে পেরেছি। জ্বালানি তেল আমদানিতে পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার হতে কমিয়ে ১৬০ মিলিয়ন ডলারে আনতে পেরেছি। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-সহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ইতোমধ্যে ঋণ ও অনুদান হিসেবে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে সক্ষম হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পতিত সরকার আমাদের জন্য যে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি রেখে গিয়েছে তাতে রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। এর মধ্যেও জুলাইয়ের নেতিবাচক অবস্থা থেকে অক্টোবর নাগাদ রাজস্ব আদায়ে পৌনে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বিপুল রাজস্ব ঘাটতি ছিল। যে কারণে এবার শুরু থেকেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এর ফলে স্বৈরাচার পতনের পরবর্তী তিন মাসে পৌনে ৯ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির পরও লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২৩ শতাংশের বেশি ঘাটতি থেকে যায়। রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে আমি এখন অন লাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহিত করছি।

আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউএনডিপি ইত্যাদির প্রধানদের সঙ্গেও আমার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। তারাও বাংলাদেশকে নতুনভাবে এবং সর্বাত্মকভাবে সাহায্যের জন্য তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এখন থেকে আমরা আলোচনা শুরু করে দিয়েছি। বিশ্বের রাষ্ট্রপুঞ্জের মজলিসে আমরা এখন সম্মানিত এবং প্রশংসিত দেশের অবস্থানে পৌঁছাতে পেরেছি। এর কারণে পরাজিত শক্তি নানা কৌশল করেও তাদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে না। তারা নানা চেহারা নিয়ে আপনাদের প্রিয়পাত্র হবার চেষ্টা করছে। পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন, দেশকে মুক্ত রাখুন। এ ব্যাপারে অনড় থাকুন। এমন কিছু করবেন না যা তাদেরকে উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। তাদেরকে সকল দিক থেকে নিরাশ করুন। সেটা নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের আর কোন বিষয়ে সংশয় করার প্রয়োজন নেই। সরকারের পক্ষ থেকে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি সকল প্রকার সীমাবদ্ধতা সত্বেও আমরা আপনাদেরকে একটা মজবুত অর্থনীতি দিয়ে যাবো, ভবিষ্যতে চলার পথকে সহজগম্য করে যাবো, নাগরিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করে যাবো। বিপক্ষ শক্তি যত শক্তিশালীই হোক, নাশকতার যত রকমই উদ্ভট পরিকল্পনাই করুক-- সব কিছু নস্যাৎ করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। এবার যেমুক্তি আমরা অর্জন করেছি তা আমাদের কাছ থেকে কেউ যেন ছিনিয়ে নিতে না-পারে তার জন্য সর্বমুহুর্তে প্রস্তুত থাকুন।

‘আপনারা জেনেছেন, পতিত সরকার ও তার দোসররা প্রতিবছর দেশ থেকে ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। দুর্নীতি বিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ সম্প্রতি এই তথ্য দিয়েছে। পাচার হয়ে যাওয়া এই অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য সম্ভব সকল ধরনের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করেছি। এ কাজে সফল হতে পারলে আমাদের অর্থনীতি আরো গতি পাবে। এ কাজে আমরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সাহায্য নিচ্ছি।’

ড. ইউনূসবলেন, আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই বিশ্ব নেতৃবৃন্দকেও। বাংলাদেশের এই সংকটময় সময়ে তারা প্রায় সবাই সহযেগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি যখন সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেই, সে সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন,কানাডা, ইতালি, হল্যান্ড, জাতিসংঘ মহাসচিব-সহ বিশ্বের অনেক দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে আমার বৈঠক করার সুযোগ হয়। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তান-সহ প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গেও আমার বৈঠক হয়েছে যেখানে আমি সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলেছি।

দেশে ফিরে আসার পর এসব দেশের রাষ্ট্রদূতগণ যারা ঢাকায় স্ব:প্রবৃত্ত হয়ে আমার সঙ্গে দেখা করে তাদের সরকার প্রধানদের অঙ্গীকার পুনঃব্যক্ত করে গেছেন। তারা সম্পূর্ণ নতুনভাবে আমাদের জন্য সহায়তার নতুন ছক তৈরির কাজ শুরু করেছেন। যে-সব রাষ্ট্রদূত দিল্লিতে অফিস করেন তারা দিল্লি থেকে এসে দেখা করে গেছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২০ দেশের ২০ জন রাষ্ট্রদূত দিল্লিতে থাকেন। সাত দেশের সাত রাষ্ট্রদূত ঢাকায় আছেন। দিল্লি থেকে একসঙ্গে ২০ জন রাষ্ট্রদূতসহ মোট ২৭ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত সমবেতভাবে আমার সঙ্গে বৈঠক করার জন্য আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকায় আসছেন। আগে কখনো ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ২৭ জন রাষ্ট্রদূত একত্রিত হয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেনি। দিল্লী থেকে এ বিশাল সংখ্যক রাষ্ট্রদূত একসঙ্গে বৈঠক করার জন্য আসেনি ।এবার একাজটি করার পেছনে আছে ইইউ-র  সমর্থন প্রকাশ করা এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা গড়ে তোলা। ইতোমধ্যে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ব্রাজিল, তুরস্ক, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, লিবিয়া-সহ অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত। দ্বিপাক্ষিক নানা সহযোগিতাসহ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশ্বাস তারা দিয়েছেন।

আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও তরুণদের কর্মসংস্থানের মূলে রয়েছে বেসরকারি খাত। আমাদের বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান দুই শতাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীর সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন। নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মতবিনিময়ের অভাব, সরকারি অফিসের জটিল প্রক্রিয়া এবং সর্বোপরি দুর্নীতি, বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের সমস্যায় ফেলেছে। বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ নিরসনে আমরা অনেকগুলো কাজ করেছি ।ইতোমধ্যে সত্যিকারের ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু হয়েছে , বিনিয়োগ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ সমাধানে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন হয়েছে । বেসরকারি খাতের উপদেষ্টা কাউন্সিল ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সরকারি অফিসে না-এসে প্রয়োজনীয় কর্ম সম্পাদনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা আমাদের অগ্রগতির বিষয়ে সবাইকে মাসিক ভিত্তিতে আপডেট করে যাচ্ছে।

আমরা প্রবাসীদের কল্যাণে কাজ করছি। আমার অনুরোধে সংযুক্ত আরব আমিরাত সাজাপ্রাপ্ত ৫৭ জন সহ অন্যান্য বাংলাদেশিকে মুক্তি দিয়েছে। এসব বাংলাদেশি কারাবাসের ঝুঁকি নিয়ে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে প্রতিবাদ করেছি। বাংলাদেশিরা এরকম প্রতিবাদ আরো অনেক দেশেই করেছেন। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

কয়েকদিন আগে বাকুতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট জনাব শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে । তাঁকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।তিনি বলেছেন বাংলাদেশের জন্য যেকোন সাহায্য লাগলে আমি যেন তাকে জানাই।প্রবাসীদের কল্যাণে আমাদের সরকার সম্ভব সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছি। আপনারা জানেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছেন। ১৮ হাজার বাংলাদেশি, যারা সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা মেনে চলার পরও স্বৈরাচারী সরকারের অব্যবস্থাপনার জন্য মালয়েশিয়া যেতে পারেননি, তিনি তাদের জন্য মালয়েশিয়ার দ্বার আবার উন্মুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আমরা কাজও শুরু করেছি।

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম শেখ হাসিনা এখনও প্রধানমন্ত্রী— এমন কথা বলেননি ট্রাম্প শিরোনাম সংসদ নির্বাচনের সময় জানালেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত শিরোনাম সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে আদালতে লড়বেন জেড আই খান পান্না শিরোনাম ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের বিক্ষোভ, সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ শিরোনাম শীতকালেও ঠোঁট থাকবে গোলাপের মতো সুন্দর শিরোনাম সাবেক এমপি শাহজাহান ওমর থানা হেফাজতে, গাড়িতে হামলা