‘বার বার নেতা পরিবর্তন না করে নীতি ও আদর্শের পরিবর্তন করতে হবে’
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, বার বার নেতা পরিবর্তন না করে নীতি ও আদর্শের পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে আমাদের বার বার রক্ত দিতে হবে। নেতা পরিবর্তনের মাধ্যমে কখনো শান্তি ও বৈষম্য আসতে পারে না। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর এ দেশের মানুষ বহুবার রক্ত দিয়েছে, আন্দোলন করেছে কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। দেশে ন্যায় বিচার ও ইনসাফ কায়েম হয়নি। নিজে পরিবর্তন হয়ে, দেশ পরিবর্তন করতে হবে।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকালে ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বরে ইসলামী আন্দোলন আয়োজিত এক গনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যায় জড়িতদের বিচার, হতাহতদের ক্ষতি পূরণ, দুর্নীতিবাজদের বিচার ও নির্বাচন কমিশন পুণর্গঠনসহ ৭ দফা দাবী বাস্তবায়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এই গণসমাবেশের আয়োজন করে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ এইচ এম মোমতাজুল করীমের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব হোসেন, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক মুফতি আহমদ আব্দুল জলিল, ঝিনাইদহ জেলা সেক্রেটারি প্রভাষক মাওলানা শিহাব উদ্দীন, আলাহাজ্ব ক্কারী ওমর আলী, মুহাম্মদ রায়হান উদ্দীন, মুহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক মন্ডল, মাওলানা নিজাম উদ্দীন মুন্সি মাুলানা মিরাজ হুসাইন, মুফতি নাজির আহম্মেদ, মুফতি মুহাম্মাদ আলী হুসাইন, মাওলানা শহীদুল ইসলাম, মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক, মুহাম্মদ ফারুক হোসেন ও এইচ এম নাঈম মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, এই ভূখন্ড মুসলমানরা শাসন করেছে। কিন্তু কিছু মুনাফেকদের কারণে আমরা পরাজিত হয়েছি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সে সময় দিল্লীর ষড়যন্ত্রে ৮০ হাজার মাদ্রাসা ধ্বংস করা হয়েছে। আলেমদেরকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। হাজার হাজার আলেম হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, বৃটিশরা যখন দিল্লী দখল করেছিল, তখন ওলী আওলিয়ারা আন্দোলন করে তাদের এই ভূখন্ড থেকে তাদের বিতাড়িত করেছিল। কিন্তু মুসলমানরা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান পায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হিন্দু জমিদাররা বিশেষ করে রবি ঠাকুর চিঠি লিখে ৪১ বার বাঁধা দিয়েছিল। তারপরও নবাব স্যার সলিমুল্লাহ (রঃ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল। যখন রক্ত দিয়ে মুসলমানরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল আর সেই মুসলমানদেরকে বলা হয় সাম্প্রদায়িক।
তিনি বলেন, এই উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারে মুসলমানরা রক্ত দিয়ে অবদান রেখেছে। তাই এই দেশ মুসলমানদের হলেও অধিকার সবার। পাকিস্তান গঠনের মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। সেই পাকিস্তান গঠনেও নেতৃত্ব দিয়েছিল মুসলমানরা। পাকিস্থান সৃষ্টির পর পূর্ব পাকিস্তানে মানুষ আবারও বৈষম্যের শিকার হতে থাকেন। দেশের মানুষ আবারো যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মূলমন্ত্র ছিল সাম্য, মানবিকতা, ন্যায় বিচার ও সামাজিক মর্যাদা। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর ৭২ সালের সংবিধানে মূলনীতি হিসেবে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মতো কুফরি মতবাদ চাপিয়ে দেয় ভারত। ভারতের প্রেসক্রিপশনে সংবিধান লেখা হয়। ফলে দেশের মানুষ সাম্য ও ন্যায় বিচরার থেকে বঞ্চিত হতে থাকে।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা এই দেশটা লুটপাট করেছে। তার মন্ত্রী, এমপি ও সাধাারণ নেতাকর্মীরা শত নয়, হাজার নয়, লাখ লাখ কোটি টাকার মালিক। যে দেশে শেখ হাসিনার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়, পিয়ন হেলিকপ্টারে ঘোরে, ফরিদপুরের ছাত্রলীগ নেতা দুই হাজার কোটি পাচার করে, মন্ত্রীরা কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করে, বিদেশে ভূমি মন্ত্রির হাজার হাজার কোটি টাকার বাড়ি পাওয়া যায় সেদেশের অর্থনীতির আর কি অবশিষ্ট্য থাকতে পারে?
তিনি বলেন, হাসিনার আমলে যুবলীগ নেতা সম্রাট সিঙ্গাপুরে কেসিনো খেলে ২০০ কোটি টাকা হারে, ১৪ কোটি লাখ টাকা পাচার করা হয়, ৯৮ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয় এটাই কি দেশের মানুষ চেয়েছিল? যারা আ.লীগ করে তাদের জন্য সাত খুন মাফ হবে এটা সাম্যতা হতে পারে না। এ জন্য আমরা দেশ স্বাধীন করিনি।
তিনি বলেন, আমরা মুসলিম লীগ দেখেছি, আ.লীগ দেখেছি, জাতীয় পার্টি দেখেছি, বিএনপি দেখেছি। কিন্তু মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে দেখিনি। তাই আসুন দেশে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হলে, ঘুষ দুর্নীতি ও কালো টাকার নির্বাচন বন্ধ করতে হলে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন চাই। তিনি বলেন, দেশে যদি কেউ মডারেট ইসলাম কায়েম করতে চাই, সে বেঈমান হয়ে যাব। দেশে কারও মনগড়া ইসলাম কায়েম করতে দেওয়া হবে না। গত ৫ আগষ্টের পর দেশব্যাপী যারা লুটপাট, চাঁদাবাজী ও দখলদারিত্ব কায়েম করেছে তাদের প্রত্যাখান করতে জনগনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
পরে তিনি দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com