গরিব রোগীর চিকিৎসায় তোলা চাঁদায় পিকনিক : বিএসএমএমইউর রক্তরোগ বিভাগ
গরিব রোগীর চিকিৎসা, গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক সেমিনারের জন্য সংগ্রহ করা অর্থ। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে তা রাখা হয় ব্যাংক হিসাবে। অথচ সেই অর্থে করা হয়েছে পিকনিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রক্তরোগ বিভাগে এমন কাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন শাহ।
বিভাগের একাধিক চিকিৎসক জানান, ডা. সালাহউদ্দিনের নেতৃত্বে ২০২২ সালে হেমাটোলজি প্যাশেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সাপোর্ট প্রোগ্রামের নামে পূবালী ব্যাংকে একটি গোপন হিসাব খোলা হয়। এতে প্রায় ২২ লাখ টাকা জমা হয়। কিন্তু গবেষণা দূরে থাক রোগীর চিকিৎসায় এর একটি টাকাও ব্যয় করা হয়নি। গাজীপুরে একটি রিসোর্ট ভাড়া করে বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী, চিকিৎসক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হয়েছে বনভোজন।
দুই বছর আগে দিনব্যাপী এ আয়োজন হলেও এখন পর্যন্ত কত টাকা খরচ এবং টাকার জোগান এসেছে কোথা থেকে, তা অনেকেই জানেন না। তবে সম্প্রতি ওই ব্যাংক হিসাবের তথ্য সমকাল পেয়েছে। এতে দেখা যায়, দেশের কয়েকটি খ্যাতনামা ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে অর্থ জমা করেছে।
গত ৯ জুলাই ডা. সালাহউদ্দিনকে বিভাগের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রদবদল আনে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন দপ্তরে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে ডা. সালাহউদ্দিনের মতো অনেক চিকিৎসক কর্মস্থলে বিরত রয়েছেন।
ডা. সালাহউদ্দিন আওয়ামী লীগের চিকিৎসক সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সদস্য ছিলেন। রক্তরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান থাকাকালে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ল্যাব ওয়ানের ব্যয়বহুল বিভিন্ন পরীক্ষা বিএসএমইউ থেকে বিনামূল্যে করিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী কায়দায় বিভাগ চালানো, একাধিক কক্ষ ব্যবহার ও চিকিৎসককে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী ডা. আদনান হাসান মাসুদ বলেন, বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থেকে গরিবের চিকিৎসা করানোর নামে টাকা এনে পিকনিক করেছেন ডা. সালাহউদ্দিন। তাঁর এ প্রতারণার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। অনেক চিকিৎসককে মানসিক নির্যাতন করেছেন তিনি। যোগ্যতার শর্ত পূরণের পরও ১৫ বছর পদোন্নতি দেননি সালাহউদ্দিন। তিনি আরও বলেন, ২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত হেমাটোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক পদ দখল করে রাখেন সালাহউদ্দিন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চাকরি থেকে অপসারণ করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, ডা. সালাহউদ্দিনের রোষানলের প্রথম শিকার অধ্যাপক ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ। সৌদি আরবের কিং ফয়সল হাসপাতালের মতো বিখ্যাত হাসপাতালে দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রতিথযশা এ চিকিৎসককে তার নেতৃত্বে জামায়াত ও রাজাকার ট্যাগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্টারিং এবং কক্ষে তালা দেওয়া হয়। ক্যাম্পাসে হেনস্তার মুখে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে বাধ্য হন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘বৈজ্ঞানিক সেমিনার এবং গরিব রোগীর চিকিৎসা ও গবেষণায় খরচের জন্য তহবিল জোগাড় করা হয়। কিন্তু ফ্যামেলি গেট টুগেদারের পর ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। এখনও কিছু টাকা অ্যাকাউন্টে রয়েছে। রক্তরোগ বিভাগ চাইলে এ অর্থ গরিব রোগীর চিকিৎসায় ব্যয় করতে পারে।’
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নাকচ করে তিনি বলেন, ‘এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ব্যাংক হিসাব নয় যে, কর্তৃপক্ষকে জানাতে হয়। অধ্যাপক মঞ্জুর মোর্শেদ নিজে চাকরি ছেড়েছেন। কেউ তাকে বের করে দেয়নি।’
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com