ঢাকা, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Banglar Alo

পোশাকশিল্প খাতে অস্থিরতা : শ্রমিক অসন্তোষে দিনে ক্ষতি ৪শ কোটি টাকা

Publish : 12:37 AM, 15 September 2024.
পোশাকশিল্প খাতে অস্থিরতা : শ্রমিক অসন্তোষে দিনে ক্ষতি ৪শ কোটি টাকা

পোশাকশিল্প খাতে অস্থিরতা : শ্রমিক অসন্তোষে দিনে ক্ষতি ৪শ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক :

ঢাকার আশুলিয়া ও গাজীপুরে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় চলমান শ্রমিক অসন্তোষ এবং হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। মালিকপক্ষ এ তথ্য দিয়ে বলছে, পরোক্ষভাবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। এমন অবস্থায়ও পোশাকশিল্পে অস্থিরতা বন্ধে কারখানার মালিকরা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়ে শুধু আশ^াস পাচ্ছেন; কিন্তু হামলা-ভাঙচুর থামছে না। দিন যত গড়াচ্ছে, রপ্তানিমুখী এই শিল্পে ক্ষতির পরিমাণ তত বেড়েই চলছে। কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় বড় ধাক্কা লেগেছে রপ্তানিতেও। এভাবে চলতে থাকলে তৈরি পোশাকশিল্পে বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কা করছেন এই শিল্পের মালিকরা।

বিজিএমইএর পরিচালক মো. সোহেল সাদাত জানান, গতকাল শুক্রবার বিকালে আশুলিয়া অঞ্চলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং নেতৃস্থানীয় মালিকরা মতবিনিময় করেন। আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আজ শনিবার সব কারখানা খোলা রাখা এবং উৎপাদন পুনরায় শুরু করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিল্পকারখানার জোন হিসেবে খ্যাত সাভার আশুলিয়ায় শ্রমিকদের আন্দোলন ও বহিরাগতদের ভাঙচুর, লুটপাটের কারণে পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অস্থিরতা কাটাতে মালিক ও শ্রমিকরা এক সঙ্গে কাজ করছে। তার পরও এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে শ্রমিকদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।

বিজিএমইএর সহসভাপতি (অর্থ) মো. নাসির উদ্দিন গতকাল আমাদের সময়কে বলেন, যে এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে, সেখানে অনেকগুলো বড় কারখানা আছে। এদের অনেকেই আবার মাসে ৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি করে। আমাদের ধারণা, শ্রমিক বিক্ষোভ এলাকায় দৈনিক গড়ে আনুমানিক ৪০০ কোটি টাকার সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে। তবে পরোক্ষ ক্ষতি আরও বেশি।

সরকারের পাশাপাাশি শিল্পমালিকরা রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন জানিয়ে একজন পোশাক কারখানার মালিক বলেন, ইতোমধ্যে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির নেতৃবৃন্দ বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার কাছে সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

এ অবস্থায় আজ শনিবার পোশাকশিল্প মালিকদের সঙ্গে চলমান শ্রম অসন্তোষ বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় বসবেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এবং যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ কার্যালয়ে এ বৈঠকের আয়োজন করেছে বিজিএমই। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম। থাকবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, শ্রমিকদের প্রতিনিধি, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতিবৃন্দসহ অংশীজনরা।

এদিকে তৈরি পোশাক খাত (আরএমজি) এবং নন-আরএমজি খাতের শ্রম অসন্তুষ্টি পর্যালোচনার ‘শ্রমসংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে শ্রম অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক এবং শ্রম অধিদপ্তরের ট্রেড ইউনিয়ন ও সালিশির পরিচালককে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিতে তিনজন শ্রমিক নেতা, দুজন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী এবং মালিকপক্ষের দুজন সদস্য আছেন।

এদিকে সরকার, মালিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারির পরও দেশের পোশাক শিল্পাঞ্চলগুলোয় চলছে অস্থিরতা। মাঝখানে কিছুটা স্বাভাবিক হলেও রহস্যজনক কারণে গত বৃহস্পতিবার আরও কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে এ পর্যন্ত ২১৯টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রপ্তানিতে। এসব পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ পণ্য উৎপাদন করতে না পারায় সময়মতো পণ্য জাহাজীকরণও করতে পারছেন না। এতে বিদেশিদের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণœœ হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা হারানোর শঙ্কা বাড়ছে।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গত বৃহস্পতিবার বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুতই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে মুখ ফিরিয়ে নেবে ক্রেতারা। তৈরি পোশাকের বাজার অন্য দেশে চলে গেলে এই শিল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৪০ লাখ শ্রমিকের অনেকের জীবন অনিশ্চয়তায় পড়বে। আর পরোক্ষভাবে উপকারভোগী অন্তত দুই কোটি মানুষ বিপাকে পড়বে। চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি।

শিল্পপুলিশের তথ্য অনুসারে, বৃহস্পতিবার ২১৯টি কারখানার মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য ৮৬টি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাকি ১৩৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিজিএমইএ জানিয়েছে, মোট বন্ধ কারখানার সংখ্যা ১১৫। এর মধ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য ৭৫টি, বাকি ৪০টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে বিজিএমইএর সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, শ্রমিক অস্থিরতা কাটাতে বিজিএমইএ, মালিক-শ্রমিক এক সঙ্গে কাজ করছে। তিনি আশা করছেন আজ শনিবার থেকে কারখানা পুুরোদমে চলবে।

শিল্পকারখানার মালিকরা বলছেন, দেশের তৈরি পোশাকশিল্প খাত অস্থিতিশীল করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিভিন্ন জায়গায় নানা অজুহাতে আন্দোলন ও কারখানা ভাঙচুর শুরু করেছে দুর্বৃত্তরা। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়বে। এতে বেশি লাভবান হবে প্রতিবেশী দেশ।

জানতে চাইলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত শিল্পপুলিশ শক্ত অবস্থানে যেতে পারেনি। আইনশ্ঙ্খৃলা পরিস্থিতির উন্নতি দরকার। পাশাপাশি শ্রমিকদের দাবিগুলো নিয়ে মালিকদের বসে যতটা পারা যায় সমাধান করতে হবে।

এদিকে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি দল হিসেবে কাজ করতে চাই। আমরা অতীতের পচা বাংলাদেশ থেকে নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে চাই। আসুন, আমরা এক সঙ্গে কাজ করি। তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো বিষয়ে আমরা কোমর বেঁধে নেমে পড়লেই তা করে ফেলতে পারি। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আমরা দ্বিতীয় স্থানে আছি। এখন কী করে এক নম্বরে যেতে পারি, সেই চেষ্টা আপনারা করতে পারেন।

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দাবি হচ্ছে শিল্পাঞ্চলে চলমান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটতরাজ বন্ধ করা; ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক সুন্দর করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে দল হিসেবে কাজ করার জন্য আপনারা মনস্থির করে ফেলেন। সবকিছু থেকে আপনারা এখন মুক্ত। পুরনো কিছু আর আপনাদের টানবে না।

এ সময় আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, চলমান অস্থিরতায় ইতোমধ্যে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মাদ হাতেম বলেন, চলমান শ্রমিক অসন্তোষ থামাতে না পারলে যথাসময়ে পণ্য রপ্তানি করা যাবে না। অন্যদিকে এ অবস্থা চলমান থাকলে বৈশ্বিক ক্রেতারা আমাদের ওপর আস্থা হারাবে। ফলে আগামী মৌসুমের জন্য পরিমাণমতো কার্যাদেশ পাওয়া যাবে না। ক্ষতি কেবল মালিকদের হবে না। এখানে শ্রমিকরাও ক্ষতির মুখে পড়বে। কারখানা বন্ধ থাকলে অথবা উৎপাদন না হলে শ্রমিকরা চাকরি হারাবে।

বিজিএমইএ পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, পোশাকশিল্পে অস্থিরতার পেছনে বহিরাগত শক্তির সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্রের যোগসাজশ থাকতে পারে। অস্থিরতা দীর্ঘমেয়াদি হলে রপ্তানিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ অর্ডার কমেছে। ক্রেতা হারানোর শঙ্কা তৈরি হবে। এমনকি এ খাতের উদ্যোক্তারা ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবেন।

এদিকে শ্রমিক নেতা গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশন সভাপতি মোশরেফা মিশু আমাদের সময়কে বলেন, শ্রমিক অসন্তোষ ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে আগেই উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। শ্রম ও কর্মস্থান উপদেষ্টাকে দ্রুত শ্রমিকদের সঙ্গে বসে কথা বলা দরকার। ঘটনাস্থলে তিনি গেলে পরিবেশ হয়তো ভালো হতো।

আন্দোলনের নেতৃত্বে যারা : সাধারণত শ্রমিকদের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে ট্রেড ইউনিয়নগুলো নেতৃত্ব দেয়। কিন্তু চলমান বিক্ষোভে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা যুক্ত নন, বরং তারা এটাকে অযৌক্তিক আন্দোলন বলছেন। মালিক ও শ্রমিক নেতারা মনে করেন এ আন্দোলনের পেছনে আধিপত্য বিস্তার ও ব্যবসা দখলের অপচেষ্টা চলছে। তারা বলছেন, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, বহিরাগত ও স্থানীয় লোকজন শ্রমিকদের উসকে দিয়ে তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য- ঝুটের ব্যবসা, খাবার ও অন্য সামগ্রী সরবরাহ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা : সাজা থেকে খালাস খালেদা জিয়া শিরোনাম হাসপাতাল থেকে যাবেন তারেক রহমানের বাসায় : হুইলচেয়ার ছাড়াই হাঁটছেন খালেদা জিয়া শিরোনাম সকালে উচ্ছেদ বিকেলে দখল শিরোনাম বাড়তে পারে মিটারহীন আবাসিক গ্যাসের দাম শিরোনাম যুক্তরাষ্ট্রে দাবানল : লস অ্যাঞ্জেলেস যেন ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ শিরোনাম টাকা জমিয়ে মারবেল খেলা