ঢাকা, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪
Banglar Alo

রপ্তানি খাতে ছন্দপতন

Publish : 12:55 AM, 28 July 2024.
রপ্তানি খাতে ছন্দপতন

রপ্তানি খাতে ছন্দপতন

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক :

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির শিকার দেশের পুরো রপ্তানি খাত। সংঘাতময় পরিবেশ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকায় ভেঙে পড়ে পণ্য রপ্তানির শৃঙ্খল (এক্সপোর্ট চেইন)। উদ্ভূত অচলাবস্থা এখন অনেকটাই কেটে গেছে; সবকিছু আবার সচল হতে শুরু করেছে। এর পরও উৎপাদন ও রপ্তানি প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি গতি আসতে সময় লাগবে। পণ্য জাহাজীকরণে দীর্ঘ জটে শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে সঠিক সময়ে পণ্য পৌঁছানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন রপ্তানিকারকরা। এর ফলে বড় লোকসানের পাশাপাশি ক্রেতা হারানোর শঙ্কাও রয়েছে। এদিকে আমদানিও ব্যাহত হওয়ায় দেশের কলকারখানায় চলছে কাঁচামালের সংকট। ফলে স্বাভাবিক উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও কারফিউর কারণে সপ্তাহখানেক পণ্যপরিবহন ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে অচলাবস্থা দেখা দেয়। এর মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে গেলে স্থবিরতা নেমে আসে গোটা রপ্তানি খাতে। এ সময় পণ্য বন্দর থেকে খালাস করা যায়নি। এতে বন্দরে এখনো পণ্যের জট লেগে আছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনিতেই তারা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন। সেখানে পণ্য খালাসে বিলম্বের কারণে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হলে তাদের খরচের চাপ বেড়ে যাবে। উপরন্তু তাদের অনেকেই রপ্তানির জন্য পণ্য বন্দরে নিয়ে গেলেও তা জাহাজীকরণ হচ্ছে না। তাই পণ্য আমদানি ও রপ্তানিকারকদের বন্দর ও শিপিং ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আমদানি-রপ্তানিকারকদের আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে আনতে বন্দর ও শিপিং ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করা দরকার। পাশাপাশি বন্দরের ক্লিয়ারিং কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিন এই চার্জ আরোপ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। চার দিন স্থবির থাকার পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। এরপরও পণ্য জাহাজীকরণে দীর্ঘ জট রয়েছে। এর ফলে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পণ্য পৌঁছানো কঠিন হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকও একই সমস্যায় ধুঁকছে বলে জানান বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, রপ্তানি খাতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। একদিকে শিল্পকারখানা ও রপ্তানি প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থা, অপরদিকে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিল। এ সময় কেবল তৈরি পোশাক খাতেই দৈনিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অপরদিকে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। সবকিছু সচল হতে শুরু করলেও ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা দূর হয়নি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এখন ইন্টারনেট চালু হয়েছে। তারপরও সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। বন্দরে রপ্তানি প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। কিন্তু আগের যে জট রয়েছে সেটা কাটিয়ে উঠতেই দশ থেকে পনেরো দিন সময় লেগে যাবে, সেখানে নতুন পণ্যের জাহাজীকরণের চাপও রয়েছে। সবমিলিয়ে শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে না পারলে আর্থিক লোকসানের পাশাপাশি ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও ক্রেতা হারানোর ঝুঁকি থাকে।

পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে সঠিক সময়ে পণ্য পৌঁছানো যেমন কঠিন হবে, তেমনি অনেক পণ্য স্টকলটের শিকার হতে পারে। তাতে ব্যবসায়ীদের বড় লোকসান গুনতে হয়।

এদিকে প্লাস্টিক খাতের রপ্তানি পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, অনেক সম্ভাবনাময় খাত হওয়া সত্ত্বেও প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি কমছে। আমাদের হিসাবে গত বছর ১ দশমিক ৬ থেকে ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ছিল। এ বছর সেটা ১৫ শতাংশের মতো কম হবে বলে ধারণা করছি। এর মধ্যে এই যে একটা অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হলো, তাতে এ খাতে রপ্তানি আয় আরও কমবে। সপ্তাহখানেকের স্থবিরতায় প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে দৈনিক আনুমানিক ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।

সময়মতো পণ্য পৌঁছানো নিয়ে চিন্তিত পাট ও পাটজাতপণ্যের রপ্তানি খাতে রপ্তানিকারকরাও। তারা বলছেন, বন্দরে ইন্টারনেট সংযোগ চালু হলেও পণ্যের জট কাটতে আরও সময় লাগবে। এখনো পণ্যবোঝাই অনেক পরিবহন আটকে রয়েছে।

কথা হলে বাংলাদেশ জুট গুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেজিএমএ) চেয়ারম্যান আহমেদ মজুমদার বলেন, ইন্টারনেট চালু হলেও বন্দরের জট এখনো খোলেনি। বন্দরে অনেক পণ্য আটকে আছে। কারখানাগুলোতেও এ মুহূর্তে ৫০০ থেকে ৬০০ কনটেইনার পণ্য রপ্তানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।

এমনিতেই ধুঁকতে থাকা এ খাতে বর্তমানে দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান এ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ইন্টারনেট চালু হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো তা ব্যবহার করতে পারছি না, এখনো বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। বর্তমানে আফ্রিকা, ইরান ও তুরস্কের অনেক অর্ডার রয়েছে। সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে না পারলে ক্রেতা হারানোর শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে বিদেশি ক্রেতাদের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে, যা ভবিষ্যতে রপ্তানি আয়ে প্রভাব ফেলতে পারে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও কারফিউর কারণে সপ্তাহখানেকের অচলাবস্থায় রপ্তানি খাতে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে বেশ সময় লাগবে। এর প্রভাব চলতি অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উপরেও পড়বে।

বন্দরের জট নিয়ে কথা হলে চট্টগ্রামের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জোরাক ট্রেড সোর্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরশাদ হোসেন শালিম বলেন, আমাদের মতো অন্যান্য রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোরও শিপমেন্ট আটকে রয়েছে। ইন্টারনেট সংযোগ চালু হলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ করতে পারছি না। শিডিউল বিপর্যয় ও ক্রেতাদের গুডউইল ধরে রাখা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি। আমরা চাই, দ্রুত আমাদের পণ্যগুলো ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে।

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা শিরোনাম দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সয়াবিন ও পাম তেলে ভ্যাট ছাড় শিরোনাম ঈদ ও পূজার ছুটি বাড়লো শিরোনাম বিড়াল তাড়াতে গিয়ে প্রাণ গেল নারীর শিরোনাম শমসের মবিন চৌধুরীর বাসায় অভিযান শিরোনাম নতুন দায়িত্ব নিয়ে ঢাকায় পিটার হাস