ঢাকা, ১৩ মার্চ, ২০২৫
Banglar Alo

মেয়ে হত্যা লুকাতে মাকেও খুন

Publish : 05:02 AM, 11 February 2025.
মেয়ে হত্যা লুকাতে মাকেও খুন

মেয়ে হত্যা লুকাতে মাকেও খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক :

রংপুরের পীরগঞ্জে এক নারীর মাথাবিহীন লাশ এবং পরে মাথা উদ্ধারের পর এবার পাওয়া গেছে তাঁর মেয়ের লাশ। গতকাল রোববার উপজেলার বড় বদনাপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান মণ্ডলের বাড়ির পেছনে গর্ত থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত শুক্রবার এক নারীর মাথাবিহীন লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটে। একদিন পর শনিবার বিকেলে পাওয়া যায় খণ্ডিত মাথা। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাঁর পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তাঁর নাম দেলোয়ারা। এর দুদিন পর তাঁর পাঁচ বছরের মেয়ে সাইমার লাশ উদ্ধার করল পুলিশ।

দেলোয়ারার লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বড় বদনাপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি দেড় মাস আগে দেলোয়ারার মেয়ে সাইমাকে হত্যার কথা পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। স্বজনরা দেলোয়ারার লাশ নিতে অস্বীকৃতি জানালে শনিবার রাতে পুলিশের উদ্যোগে রংপুর সদরের মুন্সিপাড়া সরকারি কবরস্থানে দাফন করা হয়। রোববার সাইমার লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা আতিকুরের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (ডি-সার্কেল) আছিফা আফরোজা আদুরি জানিয়েছেন, নিহত দেলোয়ারার স্বামী ছিলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দিলালপুর গ্রামের রেজাউল করিম। রেজাউল করিম পুলিশকে বলেছেন, তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর মেয়ে সাইমাও ছিল। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার আতিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে, দেড় মাস আগে শিশুটিকে হত্যা করা হয়। লাশ লুঙ্গিতে পেঁচিয়ে বাড়ির পেছনে বাগানে গোবরের স্তূপের পাশে ৩-৪ ফুট গর্ত করে পুঁতে রাখেন তিনি। তাঁর স্বীকারোক্তির পর ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জায়গাটি থেকে শিশু সাইমার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

মামলার বাদী পীরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অনন্ত কুমার বর্মণ জানান, আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে জানা গেছে, দেলোয়ারা যাত্রায় নাচের জন্য ‘ঝিনুক মালা’ নাম নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যাত্রাদলের সঙ্গে থাকতেন। ছোটবেলায় তাঁর বাবা-মা মারা যান, ভাই-বোনও ছিলেন না। মামা-মামি তাঁকে বড় করেন। ১২-১৩ বছর বয়সে পালিয়ে গিয়ে যাত্রা দলে যোগ দেন তিনি। পরে বাড়ি ফিরলেও মামা-মামি তাঁকে আর গ্রহণ করেননি।

রেজাউল করিম যাত্রা প্যান্ডেলে জুয়ার গুটিচালক (ডাবু) ছিলেন। সেখানে তাদের পরিচয়ের পর বিয়ে হয়। দেলোয়ারা তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী। আতিকুর রহমানও একই ধরনের কাজ করতেন। যাত্রায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয় দেলোয়ারার। পরিচয়ের পর তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে চলাফেরা করায় রেজাউল স্ত্রীকে তালাক দেন। এরপর থেকে আতিকুরের বাড়িতে থাকতেন দেলোয়ারা। ৪৫ দিন আগে দুষ্টুমি করায় শিশুটিকে আতিকুর আঘাত করেন। এতে সে চেতনা হারিয়ে ফেলে। পরে আর চেতনা না ফেরায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে ধারণা পুলিশের। 

ঘটনার সময় শিশুটির মা বাড়িতে ছিলেন না। যাত্রা থেকে ১৫-২০ দিন পর ফিরে দেলোয়ারা সন্তানের খোঁজ করলে আতিকুর বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন। এর জেরেই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে। এতে আরও অনেকের সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে জানান এসআই অনন্ত কুমার। গত শুক্রবার বড় বদনাপাড়ায় এক নারী মরিচ তুলতে ক্ষেতে গিয়ে নারীর মাথাবিহীন লাশ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দেন। এ সময় স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে এসে পুলিশকে খবর দেন। সিআইডির ক্রাইম সিন দল ঘটনাস্থলে গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে তাঁর পরিচয় ও ঠিকানা শনাক্ত করে।

তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁর নাম দেলোয়ারা (৩১) বলে জানা সম্ভব হয়। নীলফামারীর জলঢাকায় তাঁর বাবার বাড়ি। শনিবার চতরা ইউনিয়নের করতোয়া নদীর তীরে পাকার মাথা টোংরারদহ এলাকা থেকে তাঁর কাটা মাথা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বড় বদনাপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান মণ্ডল ও তার মা আপিয়া বেগমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসআই অনন্ত কুমার বর্মণ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। পুলিশের একটি দল বস্তা ও ব্যাগে থাকা ছবি, সিমকার্ড, কাগজে লিখিত কয়েকটি মোবাইল ফোন নম্বরের মাধ্যমে নিহত নারীর পরিচয় জানতে পারে।

প্রাথমিক তদন্তের এক পর্যায়ে আতিয়ারের গতিবিধিতে নজর রাখে পুলিশ। গত শনিবার সকালে বোরকা পরে পালিয়ে যাওয়ার পথে কাবিলপুর ইউপির ঘনশ্যামপুর সড়ক থেকে তাঁকে আটক করে পরে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে আতিকুরের মা আপিয়া বেগমকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। শিশু সাইমার লাশ গুমের তথ্য গোপন রাখায় তাঁকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে মামলায়।

আতিকুরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী দুটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য এবং হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারে তদন্ত চলছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি এমএ ফারুক। তিনি বলেন, আতিকুরের মা আপিয়া বেগম সবকিছু জেনেও পুলিশকে সহায়তা করেননি। তাই হত্যার কারণও জানা যায়নি। 

আতিকুর এলাকায় জুয়াড়ি হিসেবে পরিচিত ছিল বলেও জানান ওসি। গতকাল তাঁর সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। 

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম মাগুরার শিশুর মৃত্যু: আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ শিরোনাম সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বাড়ল আরও ২ মাস শিরোনাম জয়া যেন অষ্টাদশী যুবতী, ভাইরাল ভিডিও শিরোনাম লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন আরও ১৭৬ বাংলাদেশি শিরোনাম সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের আশপাশে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ শিরোনাম কর দিয়ে কেউ দেউলিয়া হয় না