এলডিসি উত্তরণ না পেছালে অর্থনীতিতে ধস নামবে
বিগত সরকার ফোলানো-ফাঁপানো অর্থনীতির চিত্র দেখিয়ে বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ফলে বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের সময় অন্তত তিন বছর পেছাতে হবে। তা না হলে অর্থনীতিতে বড় ধস নামবে। বিশেষ করে বেশি ক্ষতিগস্ত হবে বস্ত্র ও পোশাক খাত।
গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ এমন মত দেন। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বিসিআই কার্যালয়ে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী, পরিচালক শহিদুল ইসলাম, দেলোয়ার হোসেন, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি থেকে বের হওয়ার কথা বাংলাদেশের। এ লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে রপ্তানি পণ্যে প্রণোদনা কমানোর কৌশলগত পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিসিআই সভাপতি বলেন, বিগত সরকারের তথ্যের ওপর ভর করেই ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, উত্তরণ সম্ভব। কিন্তু কোনো পরিসংখ্যানই সঠিক ছিল না। অর্থনীতির বর্তমান চিত্র বলছে, এখন উত্তরণ করতে গেলে নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে বাণিজ্য চালাতে হবে। এতে খরচ অনেক বাড়বে।
আনোয়ারুল আলম চৌধুরী বলেন, সরকার আইএমএফের প্রেসক্রিপশন মেনে চলছে। এতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি মনে করেন, গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া স্বস্তি ফিরবে না। যত দ্রুত সম্ভব অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যাওয়া উচিত। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল বিগত সরকারের বাজেট সংশোধন করা। কারণ এনবিআরকে রাজস্বের বড় লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। এনবিআর ব্যবসায়ীদের ওপর করের বোঝা চাপাচ্ছে।
বিগত সময়ে দু-চারজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যারা ব্যাংক লুট করেছে, তাদের দায় সবার ওপর চাপানো হলে অবিচার হবে বলে মনে করেন বিসিআই সভাপতি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা হতাশায় ভুগছেন। তারা মানসম্মান নিয়ে চলতে চান। ব্যবসায়ীদের ঢালাওভাবে খেলাপি বলা হয়। বিগত সময়ে বিভিন্ন কারণে যে পরিমাণে ব্যবসায়িক খরচ বেড়েছে, তা সবার পক্ষে সামলানো সম্ভব হয়নি। এ কারণে অনেকেই খেলাপি হয়েছেন। খেলাপি ঋণ নিয়ে সরকারের যেমন নীতি আছে, প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বও সরকারের।
লিখিত বক্তব্যে বিসিআই সভাপতি বলেন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) কারণে শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভিয়েতনাম ২০২৭ সাল থেকে শূন্য শুল্কে রপ্তানি করতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হলে ১২ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হবে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এলডিসি উত্তরণের মেয়াদকাল তিন বছর পেছানো দরকার।
তিনি বলেন, গত এক বছরে ১০০টি গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরও ২০০ কারখানা বন্ধের পথে। বর্তমান সরকার জিএসপি সুবিধা পাওয়ার জন্য শ্রম আইন সংশোধনে আমেরিকার প্রেসক্রিপশনে কাজ করছে। অথচ আমেরিকা জিএসপি দিলেও সেখানে পোশাক ও বস্ত্র খাত কখনও শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে না।
আনোয়ারুল আলম চৌধুরী বলেন, ঋণের সুদহার আবার বাড়ানো হচ্ছে। ভ্যাট ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হয়েছে। ঋণ শ্রেণীকরণের মেয়াদ ছয় মাস থেকে কমিয়ে তিন মাসে নিয়ে আসার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরপর উপদেষ্টারা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলছেন, পণ্যের দাম বাড়বে না, শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এসব বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য শিল্প উদ্যোক্তাদের চিন্তায় ফেলে দেয়। দেশি উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করতে ভয় পেলে বিদেশিরা কেন আসবেন!
বিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যবসায়ীরা এই মুহূর্তে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে। সরকার এবং রাজনীতিবিদরা অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিতে ভুলে গেছেন। তারা অন্যান্য ইস্যু নিয়ে ব্যস্ত। অথচ অর্থনীতির চাকা না ঘুরতে থাকলে ভবিষ্যতে যারা সরকার গঠন করবে তারা অর্থনীতি সামাল দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন সংস্কারের পাশাপাশি অর্থনীতির চাকা ক্ষতিগ্রস্ত না করার উপায় বের করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার উদ্যোগ নেবে অন্তর্বর্তী সরকার। যাতে কর্মসংস্থান ধরে রাখা যায়, বিনিয়োগ বাড়ানো যায় এবং উৎপাদন খরচ সহনীয় পর্যায়ে রেখে মূল্যস্ফীতি কমানো যায়। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com