চাইলেই ট্রাম্প কি সবকিছু করতে পারবেন
নির্বাচনের রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরাবৃত্তি করেন, ‘প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, প্রতিশ্রুতি রাখা হয়েছে।’ রিপাবলিকানদের প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকায় তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করাও অনেক সহজ। এই একক-দলীয় নিয়ন্ত্রণ বা ঐক্যবদ্ধ সরকার একসময় সাধারণ ব্যাপার ছিল। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোয় এটি বিরল ও ক্ষণস্থায়ী হয়ে উঠেছে। প্রায়ই ক্ষমতায় থাকা দলটি দুই বছর পর মধ্যবর্তী কংগ্রেসনাল নির্বাচনে আসন হারায়। ট্রাম্প ও জো বাইডেন উভয়েই হোয়াইট হাউসে তাদের প্রথম দুই বছর একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা উপভোগ করেছিলেন। তবে এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকার অর্থ এই নয়, প্রেসিডেন্ট চাইলেই সবকিছু করতে পারবেন।
এর আগে ট্রাম্প একটি বিলে স্বাক্ষর করেছিলেন, যেখানে করপোরেট কর ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২১ শতাংশ করা হয়। তবে ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত ‘সাশ্রয়ী মূল্যে যত্ন আইন’ বাতিল করতে ব্যর্থ হন তিনি। কারণ, তাঁর নিজের দলের সিনেটর জন ম্যাককেইন বিলের পক্ষে ভোট দিতে অস্বীকার করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবকাঠামো বিল পাস করতেও ব্যর্থ হন ট্রাম্প। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা হাউস ও সিনেটে একক নিয়ন্ত্রণ থাকা অবস্থায় প্রথম দুই বছরে বাইডেন আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান, ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড জবস অ্যাক্ট ও চিপস অ্যান্ড সায়েন্স অ্যাক্ট পাস করতে সফল হন। এ ক্ষেত্রে তিনি নিজ দলের একজন সিনেটরের বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। সিনেটে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি ৫২ আসন এবং ডেমোক্র্যাটদের দখলে রয়েছে ৪৭ আসন। আর হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে ডেমোক্র্যাটদের ২০৮ আসনের বিপরীতে ২১৮ আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে রিপাবলিকানরা। সিনেটে কোনো বাধা ছাড়া বিল পাস করতে তিন-পঞ্চমাংশ, অর্থাৎ ৬০ ভোটের প্রয়োজন হয়। তবে যথেষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্পের কাছে সেই ম্যাজিক সংখ্যাটি নেই, যা কোনো বিল কোনো বাধা ছাড়াই পাস করতে পারেন।
তবে সামগ্রিকভাবে হাউস ও সিনেটে দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নের সম্ভাবনাকে বাড়াতে পারে। আর এটিই ট্রাম্পকে তাঁর বড় প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণে সহায়তা করতে পারে। যেমন, অভিবাসীদের বিতাড়ন, পণ্য আমদানির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ এবং পরিবেশ সুরক্ষার আইন শিথিলকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তবে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এই কাজগুলো করা হলেও আদালত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আদালত একটি বড় বাধা ছিল। কারণ, তখন তিনি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কাজ করেছিলেন, যা নিয়মিতভাবেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল এবং অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো বাতিল হয়ে গেছে।
তবে এবার বিচার বিভাগের পরিস্থিতিও ট্রাম্পের অনুকূলে। তাঁর প্রথম মেয়াদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল তিন রক্ষণশীল বিচারককে সুপ্রিম কোর্টে মনোনীত করা। এটি তাঁকে আইনগতভাবে সুবিধা এনে দিতে পারে। তা ছাড়া তিনি আরও অর্ধশতাধিক বিচারককে ফেডারেল আপিল কোর্টে নিয়োগ দিয়েছিলেন, যা কয়েকটি আদালতের স্রোত রক্ষণশীল ধারায় ফিরিয়ে আনে। সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা ট্রাম্পের জন্য আরেকটি কাজের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এবার তিনি সহজেই প্রশাসনিক পদগুলোয় পছন্দমতো নিয়োগ দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নিতে পারবেন। যেটা ২০১৭ সালে তাঁর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ, তখন রিপাবলিকান পার্টির মধ্যেই তাঁর প্রতি উল্লেখযোগ্য বিরোধিতা ছিল। সব মিলিয়ে, সামনের দুই বছর ব্যস্ত ও কিছুটা অস্থির হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক ইতিহাস বলে, এমন সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেশি দিন স্থায়ী হয় না।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com