ঢাকা, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Banglar Alo

দেশের প্রতি মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

Publish : 03:16 AM, 10 August 2024.
দেশের প্রতি মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

দেশের প্রতি মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

মাওলানা রফিকুল ইসলাম :

দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। তাই মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো নিজ মাতৃভূমিকে আগলে রাখা, নিজ দেশের সব শ্রেণি, ধর্ম ও বর্ণের মানুষকে ভালোবাসা, দেশের উন্নয়নে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এ ছাড়াও দেশের প্রতি মুমিনের আরও যেসব দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে তা তুলে ধরা হলো।

দেশকে ভালোবাসা : মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। সব নবী-রাসুল মাতৃভূমিকে ভালোবাসতেন। সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন প্রিয়নবী (সা.)। এ জন্য মহান আল্লাহ তাকে মাতৃভূমি মক্কায় ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যিনি আপনার জন্য কোরআনকে বিধান করেছেন তিনি আপনাকে অবশ্যই জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনবেন।’ (সুরা কাসাস ৮৫)

দেশের কল্যাণ কামনা করা : মুমিন সব সময় দেশের কল্যাণ চায়। সে কখনো দেশের অকল্যাণ চায় না। কোরআনে মুমিনদের দোয়া শেখানো হয়েছে, ‘স্মরণ করো, যখন ইব্রাহিম বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! এটাকে নিরাপদ শহর করুন। আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ইমান রাখে তাদের ফলমূল দ্বারা জীবিকা প্রদান করুন।’ (সুরা বাকারা ১২৬)

শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা : মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব হলো সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা। শান্তি-শৃঙ্খলার পরিপন্থী কোনো কাজ না করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তোমরা জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কোরো না।’ (সুরা আরাফ ৫৬)

নিরাপত্তা নিশ্চিত করা : দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রধানত রাষ্ট্রের। তবে যেহেতু মানুষই অপরাধ কর্মের অনুঘটক, তাই ইসলাম মানুষকে অন্যের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নষ্ট হয় এমন সব কিছু থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ কোরো না।’ (সুরা বাকারা ১৮৮) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রম পরস্পরের জন্য নিষিদ্ধ।’ (সহিহ বুখারি ১০৫)

মানবিক সমাজ গঠন করা : ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কে যদিও এক মুমিন অপর মুমিনকে প্রাধান্য দেবে; কিন্তু মুসলমান ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সবার জন্য মানবিক মর্যাদা ও সাম্য নিশ্চিত করবে। কেননা সব মানুষই আদম (আ.)-এর সন্তান এবং মহান আল্লাহ সবাইকে সম্মানিত করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদের উত্তম জীবিকা দান করেছি এবং যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।’ (সুরা বনি ইসরইল ৭০)

দেশের উন্নয়নে কাজ করা : দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হলো দেশ ও জাতির উন্নয়নে সচেষ্ট হওয়া। কেননা জাতির উন্নয়নের চাবিকাঠি মহান আল্লাহ তাদের হাতেই দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে।’ (সুরা রাদ ১১)

পরিবেশ রক্ষা করা : আধুনিক পৃথিবীতে পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। বিজ্ঞানীদের মতে, এর ওপর নির্ভর করছে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। ইসলাম প্রতিটি নাগরিককে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হতে বলে। এ জন্য ইসলাম অনর্থক বৃক্ষনিধন, পশুপাখি হত্যা এবং জলাধার নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। বিপরীতে পরিবেশের উন্নয়ন হয় এমন কাজে উৎসাহিত করেছে। যেমন বৃক্ষ রোপণ। নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে ওই বৃক্ষের ফলের সমান প্রতিদান দেবেন।’ (মুসনাদে আহমদ)

জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা : জাতীয় সম্পদ রক্ষায় প্রতিটি মুমিন সচেষ্ট হবে। যেমন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) রাষ্ট্রীয় কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অর্থে জ্বালানো প্রদীপ নিভিয়ে দিতেন। এ বিষয়ে একজন তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমি মুসলমানের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম, তাই তাদের সম্পদ দিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলাম। এখন তুমি আমার অবস্থা জানতে চেয়েছ, তাই আমি আমার ব্যক্তিগত অর্থে প্রদীপ জ্বালালাম।’ (আল ইকতিসাদুল ইসলালি ২৫৬)

ঐক্যবদ্ধ থাকা : সুনাগরিক হিসেবে মুসলমানের দায়িত্ব হলো আল্লাহর নির্দেশনার ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থরক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকা। কেননা অনৈক্য জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রশি দৃঢ়ভাবে ধরো এবং পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তার অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা তো অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন।’ (সুরা আলে ইমরান ১০৩)

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা : মুমিন দেশকে ভালোবাসে। তাই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। আল্লাহর ভয়ে যে চোখ কান্না করে এবং আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ (নিরাপত্তার জন্য) পাহারা দিয়ে নিদ্রাহীন রাত পার করে।’ (সুনানে তিরমিজি) আল্লাহতায়ালা সবাইকে রাষ্ট্রের সম্পদ রক্ষা করার এবং সব মন্দ স্বভাব থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : মাওলানা রফিকুল ইসলাম

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম কলেজছাত্র হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি ৪৯৯, শেখ হাসিনা নির্দেশদাতা শিরোনাম বাংলাদেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে আলোচনা করেছে মার্কিন প্রতিনিধিদল শিরোনাম পশ্চিমবঙ্গের অচলাবস্থা কাটাতে ‘শেষ চেষ্টা’ মমতার শিরোনাম ত্রাণের ৯ কোটি টাকা কেন ব্যাংকে রেখেছেন সমন্বয়করা? শিরোনাম লঞ্চ হলো গুগল ওয়ান লাইট, খরচ কত? শিরোনাম সত্যিকারের বন্ধু চেনার উপায়