আট মাসের প্রশিক্ষণে চার সেকেন্ডের উন্নতি
লা ডিফেন্স অ্যারেনা হচ্ছে অলিম্পিক গেমস সাঁতারের ভেন্যু। শহর থেকে খানিকটা দূরে হলেও প্যারিসের যোগাযোগব্যবস্থা এতো ভালো যে, সাঁতারের ভেন্যুতে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগেনি। সাঁতার দেখার জন্য ফ্রান্সবাসীর মধ্যে আগ্রহ বেশ। ২০৬ দেশের অংশগ্রহণ এবারের প্যারিস ৩৩তম অলিম্পিক গেমসে।
বিভিন্ন দেশ থেকেও সাঁতার দেখার জন্য হাজির। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ফাইনাল রাউন্ডের সাঁতারে তো আগ্রহ আছেই, হিটেও দর্শক আগ্রহ একবিন্দু কমতি ছিল না। একটা স্টেডিয়ামের ভেতরে হচ্ছে সাঁতার। হিট চলছে প্রত্যেক ইভেন্টে। সবকটি ইভেন্টে দর্শক উপচে পড়ছে। একটা চেয়ারও খালি নেই। সাঁতারুদের জন্য আধুনিক সরঞ্জাম, দর্শকের চিৎকার অন্যরকম শিহরণ তৈরি করে। এমন একটি চোখ ধাঁধাঁনো পরিবেশে এবার প্রথম লড়াই করলেন বাংলাদেশের সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি।
অলিম্পিক গেমসের সুইমিংপুলে নেমে বাংলাদেশের তরুণ সাঁতারু সামিউল ইসলাম রাফি সাঁতারের দুনিয়াটা দেখলেন। বুঝতে পারলেন সাঁতারের দুনিয়াটা কতো বড়। বাস্তবতা বুঝতে পারলেন, বাংলাদেশের সাঁতার কোথায় আর পৃথিবীর সাঁতারুরা কোথায় অবস্থান করছেন। ১৯ বছর বয়সি এই সাঁতারু ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইল ইভেন্টে লড়াই করে ৭৯ জনের মধ্যে ৬৯তম হয়েছেন। বাংলাদেশের হিটে এসএ গেমসের সদস্য দেশ শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও নেপালের সাঁতারু ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের সাঁতারু শ্রীলঙ্কা ও নেপালের সাঁতারুকে অতিক্রম করতে পারেননি।
বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কার সাঁতারু রয়েছে ১৪ জন সাঁতারুর উপরে। আর নেপাল রয়েছে রাফির চেয়ে ১০ ধাপ উপরে। সহজেই বুঝা যায় দেশের সাঁতারুর মান কোথায় নেমেছে। শিলং, গৌহাটি এসএ গেমসে বাংলাদেশ স্বর্ণ পেয়েছিল। মাহফুজা খাতুন শিলা স্বর্ণপদক এনে দিয়েছিলেন। এতো দিন পর এস এ গেমসের সাঁতারুদেরও অতিক্রম করা গেল না। সামিউল ইসলাম রাফি থাইল্যান্ডে উন্নত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বছর জুড়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন তিনি। সেখান থেকে এসে অলিম্পিকে গেলেন। লড়াইয়ে নেমে দেখলেন সাফের সাঁতারুদের সঙ্গেও পারছেন না। তাহলে কী উন্নতি হলো?
সামিউল ইসলাম রাফির কাছে প্যারিস অলিম্পিকের প্রাপ্তি নিজের টাইমিং অতিক্রম করেছেন। টাইমিং ছিল ৫৩.১০ সেকেন্ড। থাইল্যান্ডে বয়সভিত্তিক খেলায় তার টাইমিং ছিল সেটার চেয়ে ৪ সেকেন্ড উন্নতি হয়েছে। এটা ৮ মাসের অনুশীলনের ফসল। সামিউল ইসলাম রাফি বলছিলেন, '৮ মাসে ৪ সেকেন্ড উন্নতি হয়েছে।' লা ডিফেন্স অ্যারেনার পেছনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন রাফি। এতো নিরাপত্তা কোথাও দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাদের মুখে হাসি ছিল না। মনটা ভালো ছিল না। অলিম্পিক গেমসে গিয়ে বুঝলেন এতো বড় মঞ্চে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কণা। পরিকল্পনা নেই। অলিম্পক গেমস যেন যাওয়া আসার জন্য। চার বছর পর পর যদি অলিম্পিক গেমসে গিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয় তাহলে তো সারা জীবন এভাবেই চলবে দেশের সাঁতার ।। রাফি মুখে কিছু বলেননি, তার কথায় পরিষ্কার বুঝা যায় এভাবে কোনো দিনও অলিম্পিক গেমসে গিয়ে ভালো কিছু করা যাবে না। দরকার বড় পরিকল্পনা। রাকঢাক না করে রাফি বললেন, 'এক রাফি দিয়ে হবে না। আরো অনেক রাফি দরকার। প্রশিক্ষণের জন্য অনেক সাঁতারু দরকার, পরিকল্পনা দরকার।'
শ্রীলঙ্কা নেপালের সঙ্গে পারল না বাংলাদেশ, কেন? রাফি বললেন, 'ওরা তো পাঁচ বছর ধরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। শুধু ভুটান নেপাল কেন যারাই অলিম্পিকে এসেছেন তারা দুই তিন অলিম্পিক গেমস আগে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছেন এখন তারা সেরা আটে খেলবেন।' রাফি সেটাই বললেন যা সবাই জানেন, 'ছোট বয়স থেকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তাহলে একটা সময় অবস্থানে পৌঁছাতে পারবেন।' এমন পরিকল্পনা কী আছে বাংলাদেশ সুইমিং ফেডারেশনের।
প্যারিস অলিম্পিকে এসেছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এম বি সাইফ জানালেন, 'আমাদের প্রশিক্ষণের জন্য গ্যাস নেই, নানা সংকট। আমরা রাফিকে ১ বছরের জন্য থাইল্যান্ডে পাঠিয়েছিলাম, ওর আরো ৪ মাস বাকি আছে। এরই মধ্যে আরো এক বছর তাকে থাইল্যান্ডে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।'
সত্যিকার অর্থে অলিম্পিক গেমসের মতো বড় মঞ্চে বাংলাদেশের সাঁতারুরা কি আদৌ কোনো দিন কিছু করতে পারবে? দেশের ফেডারেশন যেভাবে চলে, রাজনৈতিক প্রভাবিত ব্যক্তির হাতে পরিচালনার দায়িত্ব আসে। পছন্দের লোকটি যদি চেয়ারের বসেন তাহলে নেতা খুশি, অনুসারীও খুশি। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে নির্ধারিত খেলাটা কতো দূর যেতে পারবে সেই বিবেচ্য বিষয়টি আমলে নেওয়ার দায়িত্ব কার।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com