মাছের সরবরাহ কম, অনেক দোকান বন্ধ
দেশজুড়ে চলমান কারফিউর কারণে গেল কয়েকদিন ঢাকার পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলোতে মাছের সরবরাহ বেশ কমে গেছে। এতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেকটা বেড়ে গেছে মাছের দাম। তবে গত সপ্তাহজুড়ে অস্বাভাবিক দরে বিক্রি হওয়া সবজির বাজার রয়েছে কিছুটা কমতির দিকে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও, বাসাবো, মালিবাগ, শাহজাহানপুর, শান্তিনগর এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া যায়। মাছের অল্প কয়েকটি দোকান খোলা ছিল। তুলনামূলক বেশি দোকান খোলা ছিল শান্তিনগর বাজারে।
খুচরা মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, মাছের সরবরাহ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগও নেই। দামও তুলনামূলক বাড়তি। অন্যদিকে ক্রেতা তেমন নেই। কারফিউর কারণে পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তারা বলেছেন, দেশের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মাছবাহী ট্রাক আসতে পারছে না। রাতে ঢাকার আশপাশের কয়েকটি জেলা থেকে কিছু ট্রাক এসেছে। কিন্তু মাছ এত কম এসেছে যে, পাইকারি বাজারে গিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনমতো মাছ কিনতে পারছেন না। দামও কারফিউ শুরুর আগের তুলনায় কেজিতে ৭০ থেকে ১০০ টাকা বেশি।
সরেজমিন দেখা গেছে, খিলগাঁও তালতলা সুপারমার্কেটে ১৫ থেকে ২০টির মতো মাছের দোকানের মধ্যে খোলা ছিল মাত্র চারটি। এসব দোকানে মাছের পরিমাণ ছিল অনেক কম। শাহজাহানপুরের বাজারে ১০ থেকে ১২টি মাছের দোকানের মধ্যে খোলা দেখা গেছে মাত্র একটি। একই চিত্র ছিল বাসাবো ও মালিবাগ বাজারে। তবে শান্তিনগর বাজারে তুলনামূলক বেশি মাছের দোকান খোলা ছিল।
এসব বাজারে দেড় থেকে আড়াই কেজি আকারের রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা দরে। মাঝারি মানের তেলাপিয়া ও পাঙাশের কেজি কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হয়েছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা। ছোট বেলে মাছ কেনাবেচা হয়েছে কমবেশি ৮০০ টাকা দরে। আর টেংরা মাছ বিক্রি হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়। এ ছাড়া মাঝারি আকারের হরিণা চিংড়ির দাম দোকানিরা ৮০০ টাকা পর্যন্ত হেঁকেছেন।
শাহজাহানপুরের মাছ বাজারের ব্যবসায়ী মো. রমজান একাই মাছ বিক্রি করছিলেন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারেই মাছ নাই, খুচরা বাজারে ক্যামনে পাইবেন? কারফিউর কারণে ট্রাক আসতে পারছে না। কারওয়ান বাজারে মাছের আমদানি কম। সব মাছের দাম বেশি।’
কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তদার মো. সাইদুল বলেন, কারফিউর কারণে হাওর এলাকা থেকে মাছ পাঠাতে পারছেন না চাষিরা। এ জন্য ঢাকার পাইকারি বাজারে সরবরাহ কমেছে। তবে কারফিউ শিথিল করাতে সামনের দিনগুলোতে সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।
এদিকে সপ্তাহজুড়ে অস্থির থাকা সবজির বাজারে দর কিছুটা নিম্নগতি দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, কারফিউর শুরুর দিকে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষক ঠিকমতো সবজি পাঠাতে পারেননি। এখন কারফিউ শিথিলতার সময় বাড়ানো হয়েছে। সে জন্য সবজির সরবরাহ বাড়ছে। ফলে দাম কিছুটা কমেছে।
গতকাল পটোল, ঢ্যাঁড়শ, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দু’দিন আগে এসব কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হয়েছে বাজারভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। একইভাবে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হওয়া বেগুন ও বরবটির কেজি কমে নেমেছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। করলা কেজিতেও ৩০ টাকার মতো কমে বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। এভাবে অন্য সবজির দর কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে কমেছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী রবিউল আলম বলেন, কয়েকদিনের তুলনায় সোমবার রাতে সবজির ট্রাক এসেছে বেশি। সে জন্য আড়তে দর কমে। এর প্রভাবে খুচরা বাজারে দাম কমেছে। কয়েকদিন ধরে কাঁচামরিচের বাজারে ছিল এক ধরনের বিশৃঙ্খলা। বাজারভেদে দামে বিশাল ফারাক ছিল। তবে গতকাল দামের ব্যবধান কমে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ২২০ থেকে ৩৭০ টাকা।
পেঁয়াজ, আলুর বাজারে স্বস্তি ফেরেনি। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে। দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকা এবং দেশি হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের কেজি কেনা গেছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা দরে। কিছুটা কমেছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দর। গতকাল ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হয়েছে ১৯০ থেকে ২১০ টাকা। দু’দিন আগে এ দর ছিল ২২০ থেকে ২৪০ টাকা। ডিমের দরে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। ফার্মের ডিমের ডজন কোথাও ১৫৫, কোথাও ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে; যা গত রোববার বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা দরে। সরবরাহ বাড়লে ডিম ও মুরগির দর আরও কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com