ঢাকা, ১৫ মে, ২০২৪
Banglar Alo

শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেনি সিটি করপোরেশন

Publish : 06:56 AM, 29 April 2024.
শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেনি সিটি করপোরেশন

শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেনি সিটি করপোরেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক :

গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্যবাহী গাড়ির চাপায় ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর মারা যান নটর ডেম কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী নাঈম হাসান। ওই গাড়িটি চালানোর কথা ছিল ডিএসসিসির চালক ইরান মিয়ার। কিন্তু চালাত বহিরাগত হারুন। তাঁর ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। ওইদিন হারুন নিজে না চালিয়ে রাসেল নামের আরেকজন বহিরাগত অপেশাদার চালককে গাড়িটি চালাতে দিয়েছিল। তারও কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। এ ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা করেন নাঈমের পিতা শাহ আলম দেওয়ান। 

ওই বছরের ২৬ নভেম্বর র‍্যাব হারুনকে আটক করে। পরে রাসেলকেও আটক করা হয়। ডিএসসিসি শুধু ইরান মিয়াকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করেই দায় সেরেছে। এদিকে নাঈমের মৃত্যুর পরই তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি এখনও সুস্থ হননি বলে সম্প্রতি সমকালকে জানান নাঈম হাসানের ভাই বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মামুন। তিনি বলেন, তাঁর বাবার নীলক্ষেতে বইয়ের ছোট ব্যবসা আছে। তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চলে। মামলা চালানোর মতো অবস্থা তাদের নেই। থানা-পুলিশও কখনও এ ব্যাপারে আর ফোন দেয়নি। তাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি সিটি করপোরেশন বা অন্য কেউ।

এ রকম অবস্থা শুধু নাঈম হাসানের মৃত্যুর ক্ষেত্রেই নয়। গত পাঁচ বছরে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়িতে অন্তত ১১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৪ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। এসব ঘটনায় মামলা হলেও শাস্তির কোনো দৃষ্টান্ত নেই। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মুগদায় ডিএসসিসির ময়লাবাহী গাড়িচাপায় মারা যায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মাহিন আহমেদ। মাহিনকে চাপা দেওয়ার সময় চালকের আসনে থাকা রুবেলও সিটি করপোরেশনের কেউ নন। রুবেলের কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেই। ওই গাড়ির চালকের আসনে থাকার কথা ছিল মো. কামালের। পুলিশ রুবেলকে আটক করলেও ঘটনার পর থেকেই কামাল পলাতক। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কামালকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দাপ্তরিক প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল ডিএসসিসি।

এত মৃত্যুর পরও সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়িচালকদের নিয়মের মধ্যে আনতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিচ্ছন্নতাকর্মী, বহিরাগত চালক ও হেল্পার দিয়ে ময়লার গাড়ি চালানো হচ্ছে। আবার হালকা গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নেওয়া চালককে দেওয়া হচ্ছে ভারী গাড়ি চালানোর দায়িত্ব। 

নগরবাসীর অভিযোগ, বর্জ্যবাহী গাড়ির চালকরা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালান। তারা সিগন্যাল মানেন না। হঠাৎ করে রংসাইডে গাড়ি ঢুকিয়ে দেন। অনেক সময় চালক থাকেন অপ্রকৃতিস্থ। এসব কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। ময়লাবাহী গাড়ি নগরবাসীর কাছে আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে। গাড়ির বেপরোয়া চলাচলের বিষয়ে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগও দুই সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছে। তার পরও কোনো কাজ হয়নি।

নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানের মৃত্যুর পর ডিএসসিসি পেশাদার চালক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়। তখন একসঙ্গে ১১৫ জন ভারী যান চালককে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার পরও চালকের সংকট রয়েছে। বর্তমানে সংস্থার অধীনে গাড়ি আছে মোট ৬২৫টি। এর মধ্যে হালকা গাড়ি ১০৫টি। ভারী গাড়ি ৪৪০টি। ভারী যান যন্ত্রপাতি ৮০টি। এর মধ্যে বর্জ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত কনটেইনার ক্যারিয়ার আছে ৭৯টি। ডাম্প ট্রাক ১২৪টি। কম্পেক্টর ৫৪টি ও খোলা ট্রাক আছে ৯৩টি। কিন্তু এতসব গাড়ি থাকলেও পরিবহন শাখায় ভারী গাড়ির চালক মাত্র ১২৭ জন।

ডিএসসিসির পরিবহন ম্যানেজার গোলাম সরোয়ার বলেন, নতুন চালকদের নিয়োগ দেওয়ার পর ভারী গাড়ি চালানোর লাইসেন্স থাকা চালকদের নামেই শুধু বর্জ্যবাহী গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। কখনও চালক না থাকলে গাড়ি বসিয়ে রাখা হয়। এর পরও চালকরা একই রকম ঘটনা ঘটাচ্ছেন। 

সূত্র জানায়, পরিবহন, যান্ত্রিক ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা– এই তিনটি শাখা ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। মতিঝিল আইডিয়ালের শিক্ষার্থী মাহিন আহমেদকে চাপা দেওয়া গাড়িটি ছিল পরিবহন শাখার। সেটি বরাদ্দ ছিল চালক কামালের নামে। কিন্তু কামাল বহিরাগত হেল্পার রুবেলকে দিয়ে চালাতেন।

ডিএসসিসি জানায়, বর্জ্যবাহী গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনতে কার্যক্রম নানাভাবে তদারকি করা হয়। কোনো অনিয়ম পেলেই ডিএসসিসি কঠোর ব্যবস্থা নেয়। নাঈম হাসানের মৃত্যুর পর থেকে এ পর্যন্ত সাতজন চালককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আরও তিনজন চালককে সাময়িক বরখাস্ত করার পর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তাদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে অন্যদের দিয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। ডিএসসিসির নিয়ম অনুযায়ী, কোনো চালকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্তের পাশাপাশি তাঁর অবসর সুবিধা বাতিল করা হয়। কিন্তু এতেও চালকদের মধ্যে কোনো ভয় ঢুকছে না বলে মন্তব্য করেন ডিএসসিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) হায়দর আলী। তিনি বলেন, চালক স্বল্পতা যে একেবারে নেই, তা বলা যাবে না। অবসর ও মৃত্যুজনিত কারণে পদ শূন্য হচ্ছে। তার পরও অপেশাদার কোনো চালককে এখন গাড়ি দেওয়া হচ্ছে না। সেই পেশাদার চালকরা যদি অসাধুতার আশ্রয় নেন, তবে কী করার আছে। 

এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সমকালকে বলেন, ‘বর্জ্যবাহী গাড়ি চালানোর অনিয়ম একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছিল। গাফিলতি-চুরি নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেখান থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি। শূন্য সহনশীলতায় সব রকমের দুর্নীতি ও অপকর্ম রোধের চেষ্টা করছি। এতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। তার পরও কেউ কেউ আগের মানসিকতায় রয়েছেন।’ 

ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় যত মৃত্যু

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরে বর্জ্যবাহী একটি গাড়ির চাপায় মারা যান একজন পোশাক শ্রমিক। ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি মহাখালীর ফ্লাইওভারের কাছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়ির ধাক্কায় সংস্থাটিরই পরিচ্ছন্নতাকর্মী শিখা রানী ঘরামির মৃত্যু হয়। শিখা রানীর পরিবার রাজধানীর মহাখালী সাততলা বস্তিতে থাকত। তাঁর মৃত্যুর পর দিনমজুর স্বামী সন্তানদের নিয়ে সাততলা বস্তি ছেড়ে গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে চলে যান বলে সম্প্রতি বস্তিতে গিয়ে জানা গেছে। ২০২২ সালের ২ মে শাহজাহানপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধায়ক স্বপন আহমেদ দীপুর মৃত্যু হয় ময়লার গাড়িচাপায়। দীপুর ভাই বাবুল সমকালকে বলেন, ওই মামলা তারা তুলে নিয়েছেন। তাঁর ভাবিও সন্তান নিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। এখন আর এ নিয়ে কথা বলতে চান না।

২০২৩ সালের ৬ মার্চ মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় ডিএনসিসির ময়লাবাহী গাড়ির ধাক্কায় মারা যান আবু তৈয়ব নামের একজন কাপড় ব্যবসায়ী। আবু তৈয়ব নরসিংদীর শিবপুরের বড়ই গ্রাম থেকে ব্যবসার পণ্য কিনতে ঢাকায় এসেছিলেন। গত বছরের ২ এপ্রিল রাতে খিলগাঁওয়ে ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় নাসরিন খানম নামের এক নারী নিহত হন। আহত হন তাঁর স্বামী মোটরসাইকেল চালক শিপন। একই বছরের জুলাইয়ে মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের সামনে ময়লার গাড়ির চাপায় সাব্বির আহমেদ নামের এক তরুণ নিহত হন। ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর দুপুরে পান্থপথ এলাকায় সংবাদকর্মী আহসান কবির খানের মৃত্যু হয়। ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর ওয়ারী এলাকায় ময়লার গাড়ির ধাক্কায় স্বপন কুমার সরকার নামে একজন নিহত হন।

২০১৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কে এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে গেণ্ডারিয়ার দয়াগঞ্জে, এপ্রিলে যাত্রাবাড়ীতে, মে মাসে টিটিপাড়ায় এবং আগস্টে শ্যামপুরে ময়লার গাড়ির চাপায় মোট সাতজন প্রাণ হারান। এর আগে ২০১৮ সালে  সবুজবাগ এলাকায় ময়লার গাড়িচাপায় নিহত হন খালাতো দুই ভাইবোন।

একের পর এক দুর্ঘটনা নিয়ে ডিএনসিসির একজন আইন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব ঘটনায় অভিযুক্ত চালককে চাকরিচ্যুত করা ছাড়া অন্য কোনো শাস্তি দেওয়ার সুযোগ নেই। মামলা হলে বিষয়টি আদালতে চলে যায়। তখন সবকিছু আইনের গতিতে চলে।

Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম ৪০ গ্রাম হেরোইন বহনের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন শিরোনাম রাবিতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি শিরোনাম ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বন্ধের পথে ‘বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা’ শিরোনাম ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বন্ধের পথে ‘বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা’ শিরোনাম মুন্সীগঞ্জে ৩ নারী ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার শিরোনাম মুন্সীগঞ্জে ৩ নারী ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার