চিরসবুজ গায়ক কুমার বিশ্বজিৎ। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে তার একমাত্র ছেলে নিবিড় কুমার টরন্টোতে সড়ক দুর্ঘনায় গুরুতর আহত হন। এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন এই কণ্ঠশিল্পী। এক বছর তাকে মঞ্চে গান গাইতে দেখা যায়নি। অবশেষে মঞ্চে ফিরছেন তিনি। গান ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন নিপু বড়ুয়া
কেমন আছেন?
ভালো আছি। তবে মনের অবস্থা ভালো নেই। কয়েক দিন হলো কানাডা থেকে দেশে এসেছি। আবার এই মাসের শেষে চলে যাব।
আপনার ছেলের শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?
আগের চেয়ে কিছুটা ভালো। স্লো রিকভারি হচ্ছে। গুরুতর আঘাত পেয়েছে। এখন চোখ খুলে তাকাতে পারছে। ঈশ্বরের কাছে অনেক কৃতজ্ঞতা। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে এখনও বেঁচে আছি।
হাসপাতালে সময়গুলো কেমন কেটেছে?
শুরুর দিকে প্রতিটি মিনিট ছিল ভয়াবহ। ঈশ্বরের কাছে প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করেছি। সেই সব দিনের কথা মনে পড়লে বুকটা ফেটে যায়। এখন প্রতিদিন সকালে হাসপাতালে যাই, রাতে ফিরি। আমি ও আমার স্ত্রী নিবিড়ের রুমের কাছে বসে থাকি কখন সে চোখ খুলে তাকাবে। সন্তানের চোখের দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট ভুলে যাই।
প্রায় এক বছর আপনাকে গানে দেখা যায়নি?
আমি আজীবন প্রাণ দিয়ে গান করেছি। প্রাণটা যদি না-ই থাকে গাইব কী করে। ছেলেকে এ অবস্থায় হাসপাতালে রেখে কণ্ঠে আমার সুর আসবে না। তাই কোথাও গান গাইতে যাইনি।
গত বছর নিবিড়কে নিয়ে একটা গান করেছিলেন?
তখন আমার মনের অবস্থা বুঝে একটা গান তৈরি করেছিল কিশোর দাশ। গানটির শিরোনাম ‘নিবিড় অপেক্ষায়’। গানটির কথা লিখেছেন হাসানুজ্জামান মাসুম। এটাকে আমি গান বলতে চাই না। এটা একজন বাবার আর্তি। আমি ভাবিনি নিবিড় ও তার সহপাঠীদের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর আবার গাইব। সেই মানসিক শক্তি বা আগ্রহ মরে গিয়েছিল। প্রবাসে ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি, ওর কণ্ঠ শোনার অপেক্ষায় ছিলাম।
শুনেছি আবার মঞ্চে ফিরছেন?
গত এক বছরে আমার অনেক শো বাতিল করেছি। গান থেকে দূরে ছিলাম। সবাইকে না করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। এবার দেশে আসার পর সবাই খুব অনুরোধ করছে, গান করতে। তাই আবার মঞ্চে ফিরছি। আগামী মাসে আমেরিকায় একটা শো আছে। সেখান থেকে কানাডায় ছেলের কাছে ফিরে যাব।
সংগীতে আপনার চার দশক পূর্ণ হলো। একটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেছিলেন?
আমার প্রথম স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছিল ১৯৮২ সালে। সেই হিসাবে চার দশক পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে নিজের জনপ্রিয় ৮-১০টি গান নতুন সংগীতায়োজনে গেয়ে শ্রোতাদের উপহার দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় সব এলোমেলো হয়ে গেল। তবে চলতি বছরের শেষের দিকে বিশেষ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছি। আশা করি, ভালো কিছু অপেক্ষা করছে।