প্রায় ১০ দিন ধরে তাপপ্রবাহ ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে মাদারীপুরে। এর প্রভাব পড়েছে জনস্বাস্থ্যেও। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি। তীব্র গরমে প্রতিদিনই মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে বাড়ছে শিশু রোগীর সংখ্যা। তাদের মধ্যে জ¦র, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যাই বেশি। এদিকে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। ৪০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ১০৮ রোগী। এক শয্যায় দুই থেকে তিনজন এবং মেঝেতেও থাকছে রোগীরা। প্রচণ্ড গরমে গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হওয়ায় ক্ষুব্ধ রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ভর্তির রোগীদের মধ্যে জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্তই বেশি। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ১০৮ জন শিশু। এ ছাড়া ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি শিশুর সংখ্যা ২৫ জন। অথচ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যা সংখ্যা মাত্র ৪০টি। শয্যা সংকট থাকায় এক শয্যায় একসঙ্গে দুই থেকে তিনজন শিশুকে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালের মেঝেতেও রোগীরা মাদুর বিছিয়ে থাকছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এভাবে গাদাগাদি করে থাকার কারণেও রোগীসহ অভিভাবকদের নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এ ছাড়া একসঙ্গে এত শিশুকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের।
অতিরিক্ত গরমের কারণেই হঠাৎ রোগীর সংখ্যা এতটা বেড়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
হাসপাতালে থাকা এক শিশু রোগীর ফুপু অদিতি বলেন, আমার ভাইয়ের ছেলে জ¦র নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি। কিন্তু এক বেডে দুজন রোগীকে থাকতে দিয়েছে। এতে এ গরমের মধ্যে থাকতে সমস্যা হচ্ছে। বাচ্চার মায়েদেরও সারারাত বসে ও দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কী যে দুরবস্থা, বলে বোঝানো যাবে না।
আরেক শিশু রোগীর মা ফারজানা আক্তার বলেন, আমার বাড়ি মাদারীপুরের রঘুরামপুরে। আমার দুই ছেলেই অসুস্থ। একটার বয়স পাঁচ বছর ও আরেকটার ৭ মাস। বড় ছেলের টাইফয়েড ও ছোট ছেলের নিউমোনিয়া হয়েছে। গত ছয়দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু কোনো বেড পাইনি। তাই ফ্লোরেই থাকতে হচ্ছে।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিতু বাড়ৈ বলেন, সোমবার থেকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১০৮ জন রোগী ভর্তি আছে। গরমের কারণে কয়েক দিন ধরে শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কয়েক দিন ধরে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ জন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে আবার চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছে। একসঙ্গে এত রোগী থাকায় মাত্র ৪০ শয্যায় রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবুও আমরা আমাদের সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছি।
মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. খলিলুজ্জামান খান হিমু বলেন, সারা দেশের মতো মাদারীপুরেও প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ চলছে। ফলে রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে একটু বেশি। গরমে শিশু ও বৃদ্ধরাই বেশি অসুস্থ হচ্ছে। তাই সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। তবে ঠান্ডা পানি পান করার প্রয়োজন নেই। বেশি প্রয়োজন হলে ঘর থেকে বের হবেন। যদি রোদের মধ্যে কাজ করতে হয়, তা হলে কিছুক্ষণ পরপর ছায়ায় বিশ্রাম নেবেন। একটানা রোদের মধ্যে কাজ করা যাবে না।