লালদীঘির বৈশাখী মেলা
ফুলঝাড়ু, সুই-সুতা, পিঠাপুলি, খাট পালংক থেকে রান্নার হাঁড়ি পর্যন্ত কী নেই পণ্যের পসরায়! তীব্র গরমেও ছোট বড় সব বয়সী মানুষ ব্যস্ত পছন্দের এসব পণ্য কেনায়। জমজমাট বিক্রিতে মহাখুশি দোকানিরাও। চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্ববৃহৎ বৈশাখী মেলার আয়োজনটি আবদুল জব্বারের বলীখেলাকে ঘিরে। লালদীঘির মাঠ ও আশপাশের প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকায় হরেক রকমের পণ্য নিয়ে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মেলাটি। গতকাল শুক্রবার ছিল মেলার শেষ দিন। তবে খাতা কলমে তিন দিনের মেলা হলেও তা চলে সপ্তাহব্যাপী। সারাবছর বাঙালির ঐতিহ্যের স্বাক্ষর লালদিঘীর এ বৈশাখী মেলা থেকে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসটি কিনে নেবেন এমন আশায় থাকেন নগরবাসী।
তরুণদের মধ্যে ব্রিটিশবিরোধী মনোভাব গড়ে তুলতে আবদুল জব্বার সওদাগর ১৯০৯ সাল থেকে এই বলীখেলার প্রবর্তন করেন। এরই ধারাবাহিতকায় গত বৃহস্পতিবার বসে বলীখেলার ১১৫তম আসর। এতে চ্যাম্পিয়ন হন কুমিল্লার বাঘা শরীফ। এ খেলাকে কেন্দ্র করে লালদীঘির আশপাশে বসেছে বৈশাখী মেলা। গতকাল শুক্রবার মেলার শেষ দিন হওয়ায় দর্শনার্থীও ছিল বেশি। বিকেলের দিকে বাড়তে থাকে ভিড়ও। তীব্র গরম ও ভিড় উপক্ষো করে সবাই ঘুরে বেড়ায় মেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। বিক্রিও ছিল জমজমাট। এতে খুশি বিক্রেতারাও।
মেলায় বাঁশখালী থেকে ফুলের ঝাড়ু নিয়ে এসেছেন সোনা মিয়া। এসব ফুলঝাড়ু বিক্রি করছেন ৩০০ টাকায়। সোনা মিয়া বলেন, বংশপরম্পরায় আমরা এ ব্যবসা করছি। আমার বাপ-দাদারা এখানে এসে ব্যবসা করে গেছেন। আমরাও তাদের সাথে আসতাম। ফুলের ঝাড়ু নিজেরাই তৈরি করে বিক্রি করি।
মেলায় নিমকি, জিলেপি, মিঠাই ও শুকনা মিষ্টির দোকানও রয়েছে। ঢাকা, ভৈরব ও কুমিল্লা থেকে এসব মুখরোচক মিষ্টিজাতীয় খাদ্য বিক্রির জন্য এসেছেন সেখানকার উদ্যোক্তারা। কুমিল্লা থেকে আসা ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, এবারও মুড়ি-মুড়কি, নাড়ু, ঘইশা, চুটকি, মণ্ডা এমন নানা ধরনের শুকনা মিষ্টি নিয়ে এসেছি লালদীঘির ময়দানে। মেলা উপলক্ষে এসবের একটা আলাদা চাহিদা থাকে। ভালো বিক্রিও হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় ঘুরতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশা ও বয়সের মানুষ। মা-বাবার সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবাও। তিনি বলেন, জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার কথা অনেক শুনেছি। কখনো আসা হয়নি। প্রথমবার শহরে এমন ঐতিহ্যবাহী মেলায় এসে বেশ উপভোগ করেছি। এটি যেন গ্রামবাংলার চিরচেনা সেই রূপ। গরমে পাটি ও হাতপাখার চাহিদা ছিল বেশ।
ফেনী থেকে আসা পাটি বিক্রেতা কিংকু দাস বলেন, আমরা তো সব পাটি বানাই না। যেগুলো আমরা বানাই, সেগুলোর দাম কিছুটা কম। যেগুলো আমাদের সিলেট, বরিশাল থেকে কিনে আনতে হয়েছে, সেগুলোর দাম বেশি। জব্বারের বলী শত বছরের পুরনো এক ঐতিহ্য। এই বলীখেলা বীর চট্টলাকে জুগিয়েছে শক্তি। এখন বলীখেলার মূল উপজীব্য হয়ে উঠেছে মেলা। লালদিঘীর এ বৈশাখী মেলা সগৌরবে জানান দেয় বাঙালির অতীত ঐতিহ্যের কথা।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com