ঢাকা, ১৫ মে, ২০২৪
Banglar Alo

ভেজাল বিটুমিনে গলছে সড়ক

Publish : 12:46 AM, 27 April 2024.
ভেজাল বিটুমিনে গলছে সড়ক

ভেজাল বিটুমিনে গলছে সড়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়কের পিচ গলে যাওয়ায় যানবাহনের স্বাভাবিক গতি বিঘ্নিত হচ্ছে। বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় তীব্র গরমে গাজীপুরের মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়ক এবং যশোর, বাগেরহাট, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়কের পিচ গলে যাওয়ায় যানবাহনের স্বাভাবিক গতি নষ্ট হচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরে ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সড়কের পিচ গলে যাওয়ায় যান চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। 

সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিম্নমানের বিটুমিন দিয়ে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বেশির ভাগ সময় ৫২ থেকে ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকার পরও সড়কের পিচ গলে যায় না। আমাদের এখানে ভেজাল বিটুমিন ব্যবহার করা না হলে মাত্র ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পিচ গলে যাওয়ার কথা নয়। 

তবে বিটুমিনের মান ঠিক আছে দাবি করে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর বলছে এ বছর তাপমাত্রা একটু অস্বাভাবিক হওয়ার কারণে কোথাও কোথাও সড়কের পিচ গলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাই আগামীতে বিটুমিনের গ্রেড পরিবর্তন করে ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনীয় বিটুমিন ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। 


গত কয়েক দিন ধরে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে সড়কের পিচ গলে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। গাজীপুরের মাওনা-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়কের মেদি আশুলিয়া এলাকায় কয়েক কিলোমিটার অংশজুড়ে সড়কের পিচ গলে যাওয়ায় যানবাহন চালকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সড়কে হেঁটে পার হতে গেলে জুতা আটকে যায়। গাড়ির চাকা আটকে গিয়ে গতি কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন সড়কটি কয়েক মাস আগেই সংস্কার করা হয়েছে। অন্যদিকে যশোরের যশোর-নড়াইল সড়ক, যশোর-খুলনা মহাসড়ক, যশোর-ঝিনাইদহ ও যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পিচ গলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সড়কে যান চলাচলের সময় পিচ চাকায় লেগে যাচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও যানবাহনের চাকার দাগ বসে যাচ্ছে সড়কে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের পক্ষ থেকে গলে যাওয়া পিচের ওপর বালি ও পাথরের কুচি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। 

সওজের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আমাদের দেশে সাধারণত সড়ক-মহাসড়কে যে পিচ ব্যবহার করা হয় তার মান ৬০-৭০ গ্রেডের। এই পিচের গলনাঙ্ক ৪৯-৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে পিচ গলে যাওয়ার কথা। কিন্তু গত কয়েক দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০-৪১ ডিগ্রি। এই তাপমাত্রায় পিচ গলে যাওয়ায় ব্যবহৃত পিচের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন সওজ কর্মকর্তাসহ সড়ক বিশেষজ্ঞরা। 

তারা বলছেন, অবাধেই দেশে আমদানি করা হয় নিম্নমানের ও ভেজাল বিটুমিন। কোনোরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই দেশের বাজারে ঢুকছে সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে অতি গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদান। 

আমদানি করা বিটুমিনের মান সঠিকভাবে পরীক্ষা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সড়কের স্থায়িত্বের জন্য ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করার নিয়ম থাকলেও অধিক লাভের আশায় মাঠ পর্যায়ে এই গ্রেড ব্যতীত অন্তত আরও চারটি নিম্ন গ্রেডের বিটুমিন সড়কে ব্যবহার করা হয়।এসব বিটুমিনে মেশানো হয় গিলনোসাইডের মতো রাসায়নিক ও মাটি। নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি ও সড়কে ব্যবহার করার ফলে কোনো সড়কের মেয়াদকাল দুই থেকে তিন বছর হলেও বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বেহাল দশা হয় কোটি কোটি টাকায় নির্মিত সড়কগুলোর। নিম্নমানের বিটুমিনের ‘এলাস্টিসিটি’ বা পাথর ধরে রাখার স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়ায় সামান্য বর্ষাতেই সড়কের পাথর আলগা হয়ে যায়। আবার একটু গরম বেশি হলে গলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। 

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান সময়ের আলোকে বলেন, বিটুমিনের সঙ্গে ভেজাল মেশানো হয়। ভালো মানের বিটুমিন ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও গলে না, কারণ এর একটা টেম্পার দেওয়া থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের সময় ভেজাল ও নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করার কারণে তাপমাত্রা একটু বেশি হলেই গলে যায়। তিনি বলেন, ভেজাল বিটুমিন না হলে মাত্র ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কেন সড়কের পিচ গলে যায়। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বেশির ভাগ সময় ৫২ থেকে ৫৪ ডিগ্রি তাপমাত্রাও থাকে। কিন্তু সেখানে তো সড়কের পিচ গলে যাওয়ার খবর শোনা যায় না। অথচ বাংলাদেশে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ করার পরও পিচ গলে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। 

তিনি বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ঠিকাদার ঠিকমতো কাজ না করার কারণেই এমনটা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধ করা না গেলে নিম্নমানের সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার কাজ হবে এবং একটু বেশি বৃষ্টি হলে বা বেশি গরম হলে বিটুমিন উঠে সড়ক নষ্ট হয়ে যাবে। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইয়াসির আরাফাত খান সময়ের আলোকে বলেন, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কের পিচ গলে যাওয়ার অন্যতম কারণ নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার করা। আমাদের এখানে যে বিটুমিন আমরা ব্যবহার করি তা কত তাপমাত্রার জন্য সহনীয় তার মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয় কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউএসএর টেক্সাসসহ অনেক জায়গায় তাপমাত্রা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি থাকার পরও সেখানে সড়কের পিচ গলে যায় না। তাই আমাদের দেশে সড়কে যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয় তা হয়তো নিম্নমানের অর্থাৎ যে মানের বিটুমিন ব্যবহার করা দরকার তা করা হয় না। বিটুমিনের মান যদি ভালো থাকে তা হলে তো সড়কের পিচ গলে যাওয়ার কথা না। 

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক, পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সামসুল হক সময়ের আলোকে বলেন, সস্তায় নিম্নমানের বিটুমিন আমদানি করার একটা প্রবণতা রয়েছে। কেউ কেউ আবার ভালো মানের বিটুমিন আমদানি করলেও সেগুলো প্রয়োগের পূর্বে বিভিন্ন হাত বদলের সময় ভেজাল মিশ্রিত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। বিটুমিন কোথায় কী ধরনের বৈজ্ঞানিক পরিবেশে ও তাপমাত্রায় রাখা হবে অথবা কী বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পরিবহন করা হবে; সেসব নিয়মনীতিও মানা হয় না। এক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করার পরামর্শ দেন তিনি।

তবে সড়কে যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়-তা নিম্নমানের এমন অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)। 

সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ আসলাম আলী সময়ের আলোকে বলেন, মান ঠিক কি না তা নির্ভর করে পরীক্ষার ফলের ওপর। কেউ মুখে বলে দিল নিম্নমানের বিটুমিন তা ঠিক হবে না। সড়কে যে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে তার মান ঠিক না-তার প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। 

তিনি বলেন, বিটুমিনের বিভিন্ন গ্রেড রয়েছে। আমরা সাধারণত আমাদের দেশের তাপমাত্রার আলোকে বিটুমিন ব্যবহার করে আসছি। বর্তমানে বাংলাদেশে ৬০-৭০ গ্রেডের বিটুমিন ব্যবহার করা হয়। বর্তমানের এই বিটুমিন ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনীয়। এটা খারাপ মানের বিটুমিন নয়। কিন্তু এ বছর তাপমাত্রা একটু অস্বাভাবিক হওয়ার কারণে যশোরসহ কোথাও কোথাও সড়কের পিচ গলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাই আগামীতে বিটুমিনের গ্রেড পরিবর্তন করার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। আর আপাতত যেসব স্থানে বিটুমিন গলে যাচ্ছে সেখানে বালু ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিটুমিনের গ্রেড পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে। সওজ কর্তৃপক্ষের বিশেষজ্ঞ প্যানেল রয়েছে তারা আগামীতে তাপমাত্রা সহনীয় নতুন কোনো বিটুমিন ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করবেন। বিশেষ করে ৪০ থেকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহনীয় বিটুমিন ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।
Banglar Alo

সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড

৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০

নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com

Develop by _ DigitalSolutions.Ltd
শিরোনাম ৪০ গ্রাম হেরোইন বহনের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন শিরোনাম রাবিতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি শিরোনাম ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বন্ধের পথে ‘বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা’ শিরোনাম ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বন্ধের পথে ‘বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা’ শিরোনাম মুন্সীগঞ্জে ৩ নারী ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার শিরোনাম মুন্সীগঞ্জে ৩ নারী ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার