২০০ কোটি টাকা সালামি মার্কেটের খবর নেই
ঢাকা শহরে যত্রতত্র বাজার বসানোর ফলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। অনুমতি ছাড়া বাজার বসিয়ে রাজনৈতিক একটি পক্ষ সুবিধা নিয়ে থাকে। এতে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ তার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়। তাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাজারব্যবস্থা পরিচালনার জন্য সিটি করপোরেশনের সম্পত্তির ওপর মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন কিছু কাজ শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি। সাবেক এ মেয়রের কাজে অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ করে দেন আরেক সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। এর ফলে দুই মেয়াদে প্রায় ৮ বছর অতিক্রম হলেও এখনও মার্কেট নির্মাণ হয়নি। এদিকে মার্কেট নির্মাণ না হলেও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ‘বাজার সালামি’ বাবদ শত কোটি টাকা নিয়ে রেখেছে নগর কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির রাজস্ব বিভাগের তথ্যানুযায়ী, যেসব মার্কেটের কার্যক্রম চলমান, সেসব মার্কেটের দোকানের ট্রেড লাইসেন্স বাবদ দোকানপ্রতি ধরন ভেদে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পেত। এছাড়া ভাড়া বাবদ প্রতি বছর দোকান ভেদে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পেত।
ডিএসসিসির প্রকৌশল বিবাগের তথ্যানুযায়ী, কাজ শুরু করেও শেষ করতে পারেনি এমন মার্কেটগুলোর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হকার্স মার্কেট, কাপ্তানবাজার মুরগি পট্টি, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার (পোড়া মার্কেট), যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার। এগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হকার্স মার্কেটের মামলাজনিত কারণে কাজ বন্ধ ছিল। বর্তমানে সেই জটিলতা কেটেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার ১০তলা হওয়ার কথা থাকলেও ছয়তলার বেশি করতে পারছে না নগর কর্তৃপক্ষ। বঙ্গভবনের কাছাকাছি এলাকা হওয়ায় এটি কেপিআইভুক্ত জোনের মধ্যে পড়েছে, যে কারণে ১০তলা নির্মাণের উদ্যোগ থেকে সরে এসেছে দক্ষিণ সিটি। তবে এই মার্কেট থেকে দোকানের জন্য বাজার সালামি বাবদ ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা তুলেছে নগর কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে কাপ্তান বাজার মুরগি পট্টির দোকান সালামি বাবদ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা নিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল কারওয়ানবাজার থেকে কাঁচাবাজার ঢাকার বাইরে নেওয়া। সেই কাজও দীর্ঘ দেড় যুগে শেষ হয়নি। প্রকৌশল বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের আগেই দেশ ছেড়ে পালান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি মেয়র খোকনের আমলে শুরু হওয়া কাজের ফাইল পেলেই ফেলে রাখতেন। এর ফলে কাপ্তানবাজার, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার দীর্ঘ দিন ধরে চালু করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া প্রথমে যেসব ঠিকাদার কাজ শুরু করেছিলেন, পরবর্তীকালে তারা সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারার কথা বলে কার্যাদেশ বাতিল করেন সাবেক মেয়র তাপস। এমনকি কোনো কোনো ঠিকাদারের কাছ থেকে জরিমানাও আদায় করে নগর কর্তৃপক্ষ।
তবে মার্কেটের কাজ বন্ধ থাকার বিষয়ে ভিন্ন কথা জানালেন ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, সম্পূর্ণ বাজার সালামি তুলতে না পারায় কাজ করা যাচ্ছে না। কোনো মার্কেটে যদি ২০ কোটি টাকা বাজার সালামি থাকে, সেখানে উঠেছে হয়তো ৪ বা ৫ কোটি টাকা। এখন দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ধার করে তো মার্কেট নির্মাণ করতে পারে না? এ জন্য রাজস্ব বিভাগকে বাজার সালামি তুলে দিতে বলা হয়েছে। আশাকরি অচিরেই সমস্যার সমাধান হবে। কাজও শুরু হবে।
পরামর্শক নিয়োগের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে এমন একটি অভিযোগ শোনা গেছেÑ এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, পরামর্শক নিয়োগ মুখ্য নয়। ওটা চলমান কাজ। কিন্তু সালামির টাকা পুরোপুরি না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে ডিএসসিসির উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজাহান আলী আমাদের সময়কে বলেন, অনেক মার্কেটেই বাজার সালামি নেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু হয়েছে; কিন্তু শেষ হয়নি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে কিছু দিন বন্ধ ছিল। এখন হয়তো শুরু করবে। প্রকৌশল বিভাগ বলছে টাকা নেই। কিন্তু যে টাকা বাজার সালামি বাবদ নেওয়া হয়েছিল, সাবেক মেয়র তাপস ওই টাকা অন্য খাতে খরচ করে ফেলেছেন। তাই এখন টাকা নাই বলা হচ্ছে।
কোন মার্কেটের কাজ কখন শুরু হয়েছিল : ২০১৮ সালে টেন্ডারের মাধ্যমে কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কার্যাদেশ পায় দ্য বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। তারা মার্কেটের বেইজমেন্ট নির্মাণের কাজ শেষ করে কাজ বন্ধ করে দেয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ার পর। এরপর মেয়র পরিবর্তন হলে সেই কাজের আর অগ্রগতি হয়নি। পরে সাবেক মেয়র তাপস ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করে। সেই ২০১৮ সালের কাজ আর একটুও আগায়নি। তবে মার্কেটের সালামি বাবদ টাকা আগেই নিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। এই মার্কেটে প্রায় ১৬৮টি দোকান বরাদ্দ পান ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া যাত্রাবাড়ী পাইকারি আড়তে ১ হাজার ২৬০টি দোকান, ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটে ৮৫২টি এবং গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারে ১ হাজার ৫০০ দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয় সাবেক মেয়র খোকনের সময়ে।
ঢাকা ট্রেড সেন্টারটি গুলিস্তান পুরান বাজার হকার্স মার্কেট ও পোড়া মার্কেট হিসেবে পরিচিত। ট্রেড সেন্টারের দোকানিদের অভিযোগ, ২০০৩ সালে এই মার্কেটের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রস্তাবিত ১২ তলার এই বিপণিবিতানে ১ হাজার ৬৪৬টি দোকান তৈরির কথা ছিল। কিন্তু নানা অজুহাতে ২০০৪ সাল থেকে নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে ডিএসসিসি। অথচ এই মার্কেটের দোকান বরাদ্দ বাবদ ৩৪ কোটি টাকা দিয়েছেন তারা।
এর আগে ঢাকা ট্রেড সেন্টারের দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, প্রায় ১৪ বছর আগে দোকান বরাদ্দ বাবদ ৩৪ কোটি টাকা সালামি নিয়েছে ডিএসসিসি।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হকার্স মার্কেটে ২০২২ সালের ৮ মে অভিযানের মাধ্যমে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করে নগর কর্তৃপক্ষ। ওই দিনই কথা ছিল সেখানে একটি পাকা মার্কেট নির্মাণ করা হবে। সেই কাজ আগায়নি। অন্যদিকে ২০০৬ সালে তৎকালীন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন ‘ঢাকা শহরে তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ওই তিন জায়গায় কাঁচাবাজারের জন্য ভবন নির্মাণ শুরু করে। সেই মার্কেটগুলোর নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক
বাংলার আলো মিডিয়া লিমিটেড
৮৯ বিজয় নগর, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম শরণি, আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেট (৫ম তলা)। ঢাকা-১০০০
নিউজঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪১ || [email protected] || বিজ্ঞাপণঃ +৮৮ ০১৩৩২৫২৮২৪৩ || [email protected]
©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || banglaralo24.com